আমি তখন উচ্চ মাধ্যমিক দিচ্ছি,
একটা ছেলে রোজ আমায় রিক্সাতে পরীক্ষা দিতে নিয়ে যেত ,
খুব  বেশি হলে আমার থেকে এক দু বছরের বড় ,  –
পরীক্ষার দিনগুলোতে বাড়ি থেকে বেরিয়ে দেখতাম ছেলেটা সময়মতো রিক্সা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে-
আমি রিক্সাতে উঠে বই নিয়ে পড়তাম ,
আর মাঝে মঝে ছেলেটাকে দেখতাম ,–
মাথা ভরা কোকড়ানো চুল,
কালো কু্চকুচে চকচকে রঙ
ছেড়া হাঁটু ফাটা জিন্স –
আর একটা ময়লা সাদা জামা ধীরে ধীরে ঘামে ভিজে  যাচ্ছে-
পরীক্ষা শেষে , যখন আবার রিক্সাতে চড়তাম ,
উৎসুক হয়ে ছেলেটা জিজ্ঞাসা করত প্রতিবার,
কেমন হল পরীক্ষা তোমার ?
সহজ নাকি কঠিন প্রশ্ন পত্র –
তার সাথে আমার সারাজীবনে ওই টুকু কথা-
আর ওই টুকু কথাতেই,
আমি লজ্জায় চুপ হয়ে থাকতাম ধরা পড়া এক অপরাধীর মতো ,
আকাশ বাতাস চারপাশ খুব ভারী ভারী হোয়ে আসত-
আমি পরীক্ষা দিতে যাই আর ও আমায় রিক্সা চালিয়ে  পরীক্ষাটা দিতে নিয়ে যায়,
ওরো তো পড়ার বয়স-
পরীক্ষা তো ওর ও দেওয়ার কথা-
তবে এরকম কেন ?
তারপর বহুবার এরকমই খুব কাছ থেকে বহু জায়গাতে আমার সাথে দেখা হয় এক অযোগ্য অসহায় আমির-
সে আমি ঘর মোছে বাড়ি বাড়ি ,
ছেড়া জামা চুল দাঁড়ি –
ভাটিতে ইট বয় ,  
ফুটপাতে শোয়,
খনিতে কয়লা ভাঙ্গে –
তবু সেই ছেলেটার মত  জিজ্ঞাসা করেনি কেউ আমায় –
এ কেমন পরীক্ষা তোমার,
কে দিল এমন প্রশ্ন পত্র?