হ্যাঁ আমি তৃতীয় বিশ্বে জন্মছি,
উন্নয়ন রত দেশ আমার।
জাষ্টিন বিবারের গান শুনতে আশি হাজার টাকার টিকিট বিকোয়।
আশিটা টাকার জন্য দেহ বিক্রী করে তরুণী।
আকর্ষণীয় দেখার জন্য নায়িকা প্লাস্টিক সার্জারি করে।
আর সরকারি হাসপাতালের মেঝেতে পড়ে কাতরে কাতরে মরে সাধারণ মানুষ।
রোজ দেখি আমার বাঁ পাশের বাড়ির রিক্সাওয়ালা মদ খেয়ে মাতাল হয়ে যাচ্ছেতাই গালি দিতে দিতে বাড়ি ফেরে
আর বউটাকে পেটায়,
ওর পাঁচ মাসের পোয়াতি বউ সকাল সন্ধ্যা লোকের বাসায় কাজ করে।
দুমুঠো বাসি খাবার গুলো নিয়ে যাওয়া জন্য, তার হবু সন্তানকে ঘুম পাড়িয়ে ফ্রিতে গিন্নিমার মশলা বেঁটে দেয়।
আমার ডান পাশের বাড়িতে থাকেন এক নেতা।
গত বছর যার ষোল বছরের ছেলে দামি গাড়ির চাকায় পিষ্ট করেছিল
এক নিরপরাধ যুবককে।
এ বছর সে গেছে আমেরিকায় আইন পড়তে।
ফিরে এসে সে দেশের আইন রক্ষা করবে সুবিচার করবে।
আমার পেছনের বাড়িতে এক বুড়ো থাকে, জীর্ণ, শীর্ন, হাঁপানির রুগি।
ওর একটা সুন্দরী মেয়ে ছিল।
আর ছিল একটা ছোট ছেলে,
ইট ভাটায় কাজ করতে গিয়ে গেলবার আগুনে পুড়ে মরেছে।
বউটাকে এক ব্যবসায়ী ভুলিয়ে নিয়ে গিয়ে বেচে দিয়েছিল দিল্লির জি. বি রোডে।
মেয়েটা গেছে স্বেচ্ছায়, বাবার ওষুধের টাকা জোগাড় করতে।
আমার সামনের বাড়ি এক পুলিশ।
তিনি আর স্ত্রী মহান মানুষ।
দান, ধ্যান পুণ্যিতে ভরা জীবন।
পশু চিকিৎসার জন্য এই তো সেদিন কত টাকা দান করেছেন বলে খবরের কাগজে নাম দেখলাম।
হঠাৎ একদিন জমানা বদল হল, বাগানের মাটি খুঁড়ে বেরিয়ে এল বস্তা বস্তা মারিজুয়ানা আর হেরয়িন।
ভাঙা ফ্রিজার থেকে বেরল টাকার বান্ডিল।
আর আমরা কে?
আমারা হলাম শিক্ষিত রুদালিয়া
আমাদের কাজ হল মুখ চালানো, চোখের জল ফেলা।
আমরা মিছিল করি, হরতাল করি, জোট পাকাই, ঘোঁট করি।
বলি "জবাব চাই জবাব দাও"
আমরা মুখে কালো কাপড় বেঁধে শহরের রাস্তায় মোমবাতির লাইন করি।
আমারা কবিতা লিখি, গান বাঁধি, গল্প বলি।
তবু রোজ রাতে নির্ভয়া মরে।
বচ্চা ছেলেরা ছাড়া পেয়ে যায়।
তারপর সব মিলিয়ে যায়।
আমরা এক কাহিনী থেকে অন্য কাহিনী খুঁজে নি।
এত বড় দেশে ঘটনার কি আর অভাব হয়।
তবু রোজ আরো বেশি করে গরীবরা গরীব আর বড়লোকরা বড়লোকর হয়।
জনসংখ্যা ছাড়া আর কিছুই উন্নত হয় না।
পর্দায় মুখ ঢাকলে কি চাঁদ আড়াল হয়?