কিছু কাগজের টুকরো ছিল।
স্মৃতির জলছবিতে আঁকিবুকি করা।
কিছু অজানা রহস্য যা জানা হয়নি তখন,
যা জানা হবে না আর।
ভুলে যাওয়া কথার স্তরে স্তরে জমা ধুলোতে
হঠাৎ বহুকাল পরে চিলেকোঠার ঘরে
ভাঙা তোরঙ্গ খানায় আমার অতীত খুঁজে পেলাম।
স্মৃতিরা হল চাবি দেওয়া কলের পুতুল।
ব্যাটারির খেলনার মত তাদের আয়ু স্বল্প নয়।
সেদিন আবার অতীত এসে চাবি ঘুরিয়ে দম দিয়ে গেল।
ভেবেছিলাম ভুলে গেছি,
কিন্তু ভুলে যাওয়াটা এক ধরনের বিলাসীতা।
বোঝা উচিত, যে সবার সে সামর্থ্য থাকে না।
কয়েকটা ভাঙা রঙ পেনসিল, হারিয়ে গেছে বহু রং। ধুলো জমে আর চেনা যায় না ঠিক।
কয়েকটা ছেঁড়া ছড়া বইয়ের পাতা।
রামগড়ুরের মাথায় তীর দিয়ে লেখা "এটা তুই"।
ছোট্ট একটা চিরকুট, আবছা পেনসিলে লেখা "বিকালে খেলতে বেরবি তো?"
ঠিক যেন একটা সিনেমার ট্রেইলার।
হাত পা ভাঙা পুতুল তার গায়ে লেখা "নেড়ি মুন্ডি"
হাওড়া দুর্গাপুর ট্রেনের টিকিট। গোলাপি একটুকরো চক।
একটা কোর্টের বোতাম, কয়েকটা রঙিন পুঁতি। আমের মতো দেখতে আইস্ক্রীমের বাক্স।
পোকেমন স্টিকার, একটা গ্রিটিংস কার্ড, তাতে লেখা "শুভ নববর্ষ প্যেচিঁ"।
ড্রইং খাতায় হিজিবিজি। চিরকালের পরিচিত সেই ছবি
পাহাড়ের পেছনে লাল সূর্য, সামনে একটা বাড়ি, ঝর্ণা আর আকাশে এক গুচ্ছ কালো রাইট চিহ্ন,
ওরা পাখি, সন্ধ্যায় ঘরে ফিরছে।
এ দৃশ্য এখন আমি রোজ দেখি। জানালার ধারে বসে রোজ এই ছবিটাকে জীবন্ত হতে দেখি।
কিন্তু এখন আর আঁকা হয় না।
যখন আঁকতাম তখন কোনোদিন দেখা হয়নি।
পেছন থেকে কাজের মাসির গলা "ধুলো ঘাঁটছো আবার? শরী'খারাপ করবে তো! যা'ও আমি ঝাট'টা দি'ই নি।"
ধুলো! এখন সবই ধুলো।
আসলে অতীত মানেই ধুলো।
আবার সেই ধুলোতেই ভবিষ্যত।
মাঝের এই বর্তমানটুকু নাহয় থাক আমাদের হয়ে।