পোষায় নি ঘুম রাতে, চোখ কচলায়
ব্যাজার মুখেতে দাদু দোকানে পালায়
ঝাঁট ঝাঁটা দিয়ে বসে দোকানের টাটে
র্যাপার জরায় দাদু, ঠাণ্ডায় কাটে।
শীতের কুঁয়াশা, দূরে থাকে লোকজন
‘উঠেনি চিক্যাশ, দিই ঘুমটা এখন।’
এই বলে দিয়ে দাদু দেয়ালেতে শির
হেলানো শরীরে ঘুম জুড়ে দিল ফির।
কখন গভীর ঘুম তলিয়েছে তাকে
বেলা বাড়ে, লোক জুটে, নানা লোকে ডাকে।
সাড়া নেই কোন তার, মারা গেছে ব’লে,
বাঁশের যোগারে কেউ ঝাড়ে গেছে চলে।
কেউ ছুটে গেছে ঘরে খবরটা দিতে
জমেছে দোকান ঘর পাড়া পড়শিতে।
দূর নয়, ক’মিনিটে আসে মেয়ে, ছেলে।
দূরে থাকে ভাই, চাপে শতাব্দী মেলে।
কাঁদাকাটা রবে ছেয়ে গেছে আশপাশ
ধরাধরি করে আনে দোকানীর লাশ।
বাঁধার দড়িতে দেয়া যেই জোরে টান
লাশ বলে, ‘কে আছিস, কে ছিঁড়লি কান?
হাত কেন ভারী, আর পায়ের কি দশা?
নড়ে না পা’দুটো, আছে পাহাড় কি বসা?
চোখ কে ঢাঁকলি বল, খোল তাড়াতাড়ি,
দম বুঝি যাবে, ঢাকা না তুললে এবারই’
লাশের কথায় কেউ ‘ভুত’ বলে ভাগে
বাঁধন খুলতে যায় সাহসীরা আগে।
মুখ থেকে কাপড়টা যেই যায় সড়ে
দাদু দেখে চারপাশ; বলে, ‘ওরে ওরে,
মরিনি রে আমি, তোরা এ কি করেছিস?
মরার আগেই তোরা মেরে ফেলেছিস?’
তাড়াতাড়ি খোলা হয় সকল বাঁধন;
রব থেমে যায়, থামে সবার কাঁদন।
খাটিয়াতে বসে দাদু বলে ঘটনাটা,
‘কাল রাতে ছিঁড়ে যায় মশারীর গা’টা;
তাতেই মশারা ঢোকে হানাদার বেগে
ক’জনম ছিল তারা কার ’পর রেগে।
সুযোগের হাতিয়ার পাওয়া মাত্র
আমাকে বিঁধল হুলে সারা গাত্র।
এপাশ ওপাশ করে পার হল রাত
সকালে দোকানে শীতে হয়ে কুপোকাত।
ঝিমাতে ঝিমাতে ঘুমে চোখ গেল এঁটে,
সে সুযোগে তোরা দিলি কাঁচা বাঁশে সেঁটে!
হারামির হাড় সব, পাজির পাঝারা
মানুষ মরে কি সব না দিলে ইশারা?’
হি হি হো হো রোল ওঠে, মোছা হয় জল
সবার হাসিতে দাদু হাসে খলখল।
ভিড় ভাঙে, সব যায় নিজ নিজ বাড়ি
দিদা রেগে বলে, ‘বাপু, ঘুম বলিহারি।’