প্রথম প্রথম বড় আজব লাগত,
কারণ যে অভ্যেসের শেকলে বাঁধা রোজনামচা
তার বাইরের কিছু ঘটলে আজবই লাগে।
সে অভ্যেস সুখকর হোক বা চরম চাপের।
সাড়ে তিন জনের সংসারে
এখন আমার পছন্দের তরিতরকারি হয়,
পছন্দের মাছ আসে ডাইনিং-এ।
কথাবার্তায় আসে সোনালী আবেশ
‘ওগো হ্যাঁ গো’র রত্নও
মাঝে মাঝে রিনিঝিনি তোলে।
যে ফ্রিজ শীতকালেও চালু থাকত
আমার সিদ্ধান্তের বিরোধী হয়ে,
তা এখন এপ্রিলের রাতগুলোয়
বন্ধ হয়ে যায়।
আবাসনের মহিলা ক্লাবের মেম্বারশিপ থেকে নাম
কেটে এসেছে বাড়ির কর্তী
কদিন আগে।
কিটি পার্টিতে যায় কিনা ঠিক জানি না।
কারন জানতে চেয়ে রুমা দি
কল দিয়েছিল আমার সেলফোনে।
তার কৌতূহল আমি মেটাতে পারি ন।
তার কাছে ক্ষমা চেয়ে নিয়েছি।
আমার সন্তানের জননী
মিডি, মিনি, নাইটি
এসব পড়া প্রায় বন্ধ করে দিয়েছে।
সম্প্রতি দেখছি
আটপৌরে শাড়ি পড়ছে বেশীরভাগ সময়।
কপালে সিঁদুর ঠেকছে
যেখানে একছত্র অধিকার ছিল
আঠার টিপের।
এসবই নাকি মডার্ন
সেদিন বলল, ‘চল একটু ঘুরে আসি
নদীর ধার থেকে,
অনেকদিন নদী দেখিনি।’
বেরোবার সময় খানিক অবাক হলাম।
আড়াই বছর আগের কেনা নীল শাড়িটা দেখে ।
সেটার ‘আঁচল’টা জুতসই ছিল না বলে
আলমারির কোনের থেকে সে বের হতে পারে নি এতদিন ।
আজ ওর শরীরে সেটা।
কপালে হলুদ টিপ,
কবে শেষবার এই হলুদ টিপে ওকে দেখেছি
মনে পরে না।
এই বেড়াতে যাবার কথায়
বারবার পরাজিত হয়েছি।
তারপর থেকে মুখে এনেও গুটিয়ে ফেলেছি
সেসব কথাগুলো।
সুন্দর ছবির উপর লক্ষ কোটি কাঁচের টুকরো
জড়ো হয়েছিল এমন যে
দেখার সুযোগ ছিল না ছবিটিকে।
আজ সে কাঁচগুলি জোড়া লেগে
কোন ইশারায় এমন স্বচ্ছ
যে খুব পরিস্কার করে দেখতে পাচ্ছি
লাবণিকে।
লাবনী- আমার স্ত্রী-
বাইশ বছর আমাদের বিবাহিত জীবন।
তার এই পরিবর্তনের কারনটা
স্পষ্ট হয়ে এল সেদিন।
আমি কাঁদলাম।
মানি ব্যাগে রাখা ভাঁজে ভাঁজে ছেঁড়া প্রেসক্রিপশনটি
আমি কোথাও খুঁজে পেলাম না।
আমি তাতে শুধু একটি ফুলস্টপ লেখা দেখেছি।