কেমন আছিস সুমিত ?
অবশ্য ভালো-ই থাকবি ,
আমাকে মনে পড়ে কি তোর ?
ওই যে , ওই মেয়েটা ..
রাস্তায় লুকিয়ে লুকিয়ে তোর নাম ধরে ডাকতাম ,
তুইও বার বার পিছন ফিরে দেখতিস ।
তোর আর একটা নাম সুজন ..
সত্যি কারের বড্ড ভালো মনের মানুষ ছিলি তুই ।
আজও কি আছিস সে রকম ?
নাকি শহরে গিয়ে বদলে গেছিস ?
তুই যখন গ্রাম থেকে চলে গেলি ভালো লাগতো না জানিস ..
যায়হোক এসব কথা আর বলছি না ..
সেই ছয় বছর পর তোকে চিঠি লিখছি ,
জানিনা চিঠিটা আদেও পৌঁছাবে কি না ।
তবু শেষ চেষ্টাটা করেই ফেললাম ..
এখন আমাদের ঘুম হয়না ,
অবশ্য আমরা ঘুমতে চাইনা এমনটা নয় ।
খবরের কাগজে শুনে থাকবি
আমাদের সব গেছে রে স...ব ,
কত শ-এ শ-এ বাড়ি গেলো কত মানুষ মরল ,
এসব এর কে খেয়াল রাখে বল ।
বন্যা ,এই বন্যায় কাল হয়ে এলো আমাদের জীবনে ,
কালো মেঘের মতো ভেসে গেলো আমাদের জীবন..
ঠিক কালো মেঘের মতো ।
বাবা এবার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন ..
আমার নাকি বিয়ে দেবে ।
সব ঠিক হয়ে গিয়েছিল জানিস ..
এখন আর কে বিয়ে করবে বল ?
এখন তো আমাদের খাবার জোটে না ,
অনেক শহরের মানুষ এসেছে এখানে
ত্রাণ দিতে ..
খাবার ,ওই একবেলা পেলে আর একবেলা পায়না ,
দিন দিন অবস্থা আরও করুণ হয়ে আসছে
সব মানুষ চলে যাচ্ছে ডাঙার দিকে ।
কাল আমার বোন জলে পরে শেষ বিদায় জানিয়েছে ..
বাবা বড়ই অসুস্থ হয়ে পরেছেন ।
জানিনা আমরা যেতে পারব কি না ..
বাড়িতে পুরুষ বলতে ওই আমার বাবা-ই
মায়ের চোখে জল ,
দিন দিন জলের মাত্রা আরও বেড়ে চলেছে
আমাদের মতো অনেক পরিবার যারা নৌকা পায়নি ,
আর সাহায্যের জন্যেও কেউ,.. এলো না ।
জল যখন আরও বাড়ল.. যারা সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলো তারাও গেলো ,
বড় কষ্টে এই চিঠিটা একজনের হাতে দিলাম
যখন তুই এই চিঠিটা পাবি
হয়ত তখন আমরা আর থাকব না
পুনশ্চ ...
তুই আমায় লতা বলে ডাকতিস
আমি খুব পাতলা ছিলাম হয়ত তাই ।
জানিনা সন্ধান করতে আসবি কি না
তবে যদি আসিস দেখবি যদি কোনো লতা পাতার গাছ কোথাও আঁটকে থাকে বুঝবি সেটা আমি ছিলাম ।
আর লেখা সম্ভব হচ্ছে না মানুষ গুলো রওনা দেবে ডাঙার দিকে ..
ইতি
ছয় বছর আগের সেই মেয়েটি
লতা