১।।

(১)

আমায় আর প্রশ্ন করে না নীল ধ্রুবতারা
তারা জানে আমার ইচ্ছাগুলো আজ পূর্ণ দিশাহারা
মদের গেলাসের নীল আভা নতুন সূর্যের মত
আমাকে হাতছানি দেয়
রোজ রাতে আড্ডায় বসি তারই সাথে জুত করে
ভ্রমরেরা যে মধু চুরি করেছিল তোমার রেনু থেকে
তার কোয়েক ফোঁটা মিশে গেছে এখানেও
আমাকে স্বস্তি দিতে , স্বান্তনা দিতে
বেঁচে রয়েছি আজও , জীবনের মত সবুজ
কিন্তু পর্ণমোচি এই শরীরে আয়ু ঝরে পড়ে গেছে
অনেককটাই ।
আমি মদের গেলাস ঠোঁটে জড়িয়ে নিলাম
এই গেলাসে তোমার ছোঁয়া আছে
তোমার কোলে আমার মরন
আর মরনে আমার কবিতা , তোমাদের কবিতা ।
পূর্ণিমার চাঁদ আম গাছের ঝাড়ে উঁকি মারছে
আজ নীলাভ নেশায় সেও উন্মত্ত
আর যে শান্ত বিহঙ্গ সুর উড়ে গেল
বাড়ির দিকে -- তোমার
যেখানে সানাইয়ের আনন্দ রস ঝরে পড়ছে
যেখানে ভিড় করেছে অপ্রেমীকের পঙ্গপাল
সেখানে ; একটু আশীর্বাদ নিয়ে
নীল গেলাস খালি হয়ে গেছে - এখন মাঝরাত্রি
মন্দিরে বেজে ওঠে চার্চের ঘন্টায় আজানের সুর
আমি পাগল হয়ে যাচ্ছি ধীরে ধীরে
হাত পা অসার , অসহ্য যন্ত্রনা বুকের বাম নিলয়ে
ওপরে নীল আকাশ , নীচে নীল গেলাস , নীল বৃষ্টি ,
নীল পাখির কলরব
নিজেকে নীলকণ্ঠ মনে হচ্ছে আমার ।

(২)
রাত জাগা দুটো চোখে আজ কবিতা আমার
মাদলের গম্ভীর কন্ঠস্বর , আর আম কাঁঠালের বন
রুক্ষ্ম মাটির ছৌ ছন্দে নেচে ওঠা মাতাল দুটো পা ।
আজ আমি ভাল নেই , কিন্তু এসব বুঝতে দেবো কেন ?
আজ ঘুম নেই চোখে , কিন্তু তাই বলে সামনে দাঁড়িয়ে কাঁদবো কেন ?
সবাই তো ভালো আছে
আমি না হয় ভালো থাকলাম অভিনয়ে , তাতে কি ?
রাত জাগা দুটো চোখে আজ নেশা আমার
মহুয়ার নেশা , দেশি বাংলার নেশা
আমি হেমলক গিলেছি , কারন হেমলকে মৃত্যু আছে
আর মৃত্যুতে আছে পুনর্জন্মের আস্বাদ
তোমার প্রেমিক হয়ে এই গ্রামে গ্রামে ফেরি করবো তখন
নানা রঙের রাত জাগা কবিতা ।

আমি ভালো নেই , সত্যি ।
সেদিন নিশ্চই ভাল থাকবো , তিন সত্যি ।

(৩)
মরতে আসিনি এই সুন্দর অযোধ্যার কোলে
আকাশ ভর্তি তারা , মেঘ কেটে গেছে দিব্বি
দূরে গ্রামে ধোঁয়া উড়ছে
বোঝা খুবই দায়ি - কারুর চিতায় মুখাগ্নি হয়ে গেল
নাকি কুয়াশা চড়ছে মাঠে ঘাটে
এই শীতের সন্ধ্যায় ।
পুকুরের পদ্ম পাতায় , কচু লতায়
শিশির বিন্দু নাচছে , মনের সুখে
একমাত্র আমিই উদাস , সময় আমার থমকে দাঁড়িয়ে
আমারই পাশে আজ ।
মাদলের শব্দ লিপানিয়া অথবা টটকোর বুক চিরে ফিরে আসছে
জয়চন্ডির একলা দাঁড়িয়ে থাকা পাথরটি
পুরোনো ইতিহাস ভুলে কেঁপে ওঠে একবার ।
কেঁপে উঠলো !! ভূমিকম্পে ভূত নেমে যাচ্ছে পাতালে
আমরা বর্তমান । সিগারেট ধরিয়ে পা বাড়াই
পাহাড়ের সর্বোচ্চে উঠতে হবে ---
সেখানে বসে লিখতে হবে বিজয়ী কবিতা
ভালোবাসার শব্দ বন্ধন : নিকুচি করেছে
শালা , শুধুই মরতে চায়
মরতে আসিনি আমি এই পুরুলিয়ায় ।

(৪)
বরফের ঘাড়ে বসে ঘুরতে বেরিয়েছে রোদ্দুর
আমি তার ছায়ার পিছু হাটছিলাম
উঁচু নিচু পথ আসছিল আর যাচ্ছিল
তবু থামিনি একদিন
আমি , হাঁটছি , সিকিম থেকে
আরব সাগর উপকূল পর্যন্ত ।
মাঝে কিছু নদী আমায় থামালো
বললো , কি হে , কোথায় যাচ্ছো ?
আমি বললাম , ছেড়ে আসতে ।
লাল মাটি নিচ থেকে হাঁক দিয়ে বললো
এত দীর্ঘ পথ পেরিয়ে , যাচ্ছেন কোথায় ?
আমি হেসে বললাম , ছেড়ে আসতে ।
পাহাড়ের পাথরকুচি , আমের মাছি ,
কাঁঠাল আর পেয়ারা বাগান --
তারাও থামিয়ে একথাই জিজ্ঞাসা করলে
আমি বলেছিলাম , ছেড়ে আসতে ।
অনেকেই আগ্রহ দেখালেও আকাশ বা বাতাস
আটক করেনি আমায় ।
তারা সঙ্গে চলেছিল , আমার সঙ্গে
ছেড়ে আসতে ।
যৌবন পেরিয়ে বার্ধক্যে পৌঁছে নদী গুলোর সাথে দেখা
রাস্তা আটকে কাঁপা কাঁপা গলায় বলল ,
কি যেন ছাড়তে এসেছিলে এতদূর !!
আমি এক গাল হেসে উত্তর দিলাম
ওই দেখুন দূরে , আমার ব্যর্থ সময় ।

(৫)
খুব ইচ্ছে আমার , গোলাপ ফুলের লাল রঙটা
এবারের দোলে তোমার মাথায় লেপে দেবো ।
আর দুহাতে কিছু হলদেটে , তলপেটে নাম হীন
ঘাসফুলের সবুজ রঙ
আর হৃদয়ে থাকবে রজনীগন্ধা ।
এবারের দোলে খুব ইচ্ছে তোমার বাড়ি যাবো
দরজায় ধাক্কা শুনে তুমি আসবে ছুটে , গায়ে তখনও কাল রাতের পোশাক ,
পায়ে জুতো নেই আর মাথায় চুল খোলা , উড়ে এসে পড়ছে চোখের পাশে ।
খুব ইচ্ছে এবারের দোলে , ওই দুটো ডাল
আমার কাঁধে তুলে নিয়ে
রওনা দেব শান্তিনিকেতনে ।
খুব ইচ্ছে দোল এ দুলবো দুজনে
রবী ঠাকুরের সেই বনে , ফুলডোরে বাঁধা ঝুলনায় ।
খুব ইচ্ছে তোমায় নিয়ে দোল খেলবো
পিন্ডারে পলাশের বনে
একদিকে অযোধ্যা কৃষ্ণচূড়ায় ভিজে যাবে আর
অন্যদিকে বাগমুন্ডির রাধাচূড়া সারি সারি ....

খুব ইচ্ছে আমার , বিকেলের লাল আকাশটা
এবারের দোলে তোমার সিঁথিতে পড়িয়ে দেবো ।

(৬)
তোমায় নিয়ে ঘুরতে যাবো একদিন
যেদিন বৃষ্টি হবে মুষলধারে
গাছগুলো হাত নেড়ে নেড়ে হাঁক পাড়বে
ওরে , বাছারা , এদিকে এসো
আমার বুকে মুখটা গুঁজে বসো ।
আমি ঘুরতে যাবো একদিন
তোমার সাথে , মৃত্যু রাতে
কুয়াশা উপত্যকায় ....
ভয় পাবে না কিন্তু একদম
আমি সঙ্গে আছি তোমার , বাবু , সবসময়
আর আছে এই জঙ্গল , পাহাড় , নদ , নদী
এরা সবাই আপনজন
তবু তোমার সাথে , শুধু তোমার হাতে জীবন ভুলে
ঘুরতে যাবো , একটা রূপলী উপত্যকায় ।
একদিন ঘুরতে যাবো , তোমাকে নিয়ে
অনেক দূরে
ওই নীল আকাশের গাঁয়ে
তারপর পড়ন্ত বিকেলে , রোদ্দুর চুরি করে আনবো
তোমায় দেবো -- একটা লাল আকাশ , লাল সিঁথি ,
লাল ঘোমটার মোড়কে ।
আমার ভালোবাসা এমনই । সকলের থেকে বড্ড আলাদা ।
সবাই ভালোবাসা মুখে বলে । আমি পালন করি এক মনে --
যদি তুমি চাও ।

(৭)
জানলা খুললেই বৃষ্টি ঝরে
শুধু তোমার হাতদুটোয় আমার চোখে তখন লাগাম ধরে ।
আমি তোমাকে নিয়ে কবিতা লিখি
তুমি তখন অন্যের বুক জড়িয়ে সব স্বপ্নে দিচ্ছো ফাঁকি ।

(৮)
আমি গাছ কিনতে চেয়েছিলাম , আসল গাছ
ওরাও গাছ কিনতে চেয়েছিল
কিন্তু বৃষ্টি গাছ কিনতে দেয় নি ---
বৃষ্টি গাছকে ভালোবাসে , মেঘের সাথে ঘুরতে এসে
গাছের সাথে কথা বলে ।
সেখানে একটা পাহাড় ছিল , পাহাড়ে পাথর ছিল
পাথরে গাছটা দাঁড়িয়ে থাকতো রোজ
মেঘেদের দিকে তাকিয়ে ।
মেঘ ফিরতো না একদিনও , রোদ্দুর তাকে আটক করেছিল
গাছটা তাই কাঁদতো , চিৎকার করতো
পাথর সরিয়ে বাড়ি ফিরতে চাইতো , তার মা এই মাটির কাছে ।
বৃষ্টি কথা দিয়েছিল , সবকিছু গুঁড়িয়ে তাকে মুক্ত করবে একদিন
আমায় গাছটা সব বলেছিল , যেদিন তাকে কিনবো বলেছিলাম
নাহলে আমি কি করে এত কথা জানবো !

আমি এখন গাছ কিনতে চাই না
মাটির জন্য কিছু মেঘ কিনতে চাই , বৃষ্টি আছে যেকটাতে ।

(৯)
মলমাসে নাকি পুজো হয় না
আমি তো রোজ করি
কাব্যপূজা ....

কলম আমার প্রেমিকা
রোজ রাতে গলা জড়িয়ে শুয়ে থাকি
এখন তো সে প্রেগনেন্ট .... গর্ভে কাব্যকথা ...

নাম রাখিনি
নামে কি আসে যায় , ভাল লাগলে
গোলাপ নাহলে কাঁটা ....

কিছুদিন গেল ওর জন্মের পর
কেউ এলো না দেখতে
বুঝলাম
এদেশে মেয়ে হওয়া ভাগ্যবান আর নাহলে
মেয়েদের হওয়া :

কাব্য নয় ।