নোলক // আল মাহমুদ
আমার মায়ের সোনার নোলক হারিয়ে গেল শেষে
হেথায় খুঁজি হোথায় খুঁজি সারা বাংলাদেশে।
নদীর কাছে গিয়েছিলাম, আছে তোমার কাছে ?
-হাত দিওনা আমার শরীর ভরা বোয়াল মাছে।
বললো কেঁদে তিতাস নদী হরিণবেড়ের বাঁকে
শাদা পালক বকরা যেথায় পাখ ছড়িয়ে থাকে।
জল ছাড়িয়ে দল হারিয়ে গেলাম বনের দিক
সবুজ বনের হরিণ টিয়ে করে রে ঝিকমিক।
বনের কাছে এই মিনতি, ফিরিয়ে দেবে ভাই,
আমার মায়ের গয়না নিয়ে ঘরকে যেতে চাই।
কোথায় পাবো তোমার মায়ের হারিয়ে যাওয়া ধন
আমরা তো সব পাখপাখালি বনের সাধারণ।
সবুজ চুলে ফুল পিন্দেছি নোলক পরি নাতো !
ফুলের গন্ধ চাও যদি নাও, হাত পাতো হাত পাতো
বলে পাহাড় দেখায় তাহার আহার ভরা বুক
হাজার হরিণ পাতার ফাঁকে বাঁকিয়ে রাখে মুখ।
এলিয়ে খোঁপা রাত্রি এলেন, ফের বাড়ালাম পা
আমার মায়ের গয়না ছাড়া ঘরকে যাবো না।
কবি আল-মাহমুদের ‘নোলক’ কবিতাটির জন্ম হয়েছে তাঁর দেশপ্রেম খেকেই। ‘মা’ বলতে এখানে তিনি দেশকে ই বুঝিয়েছেন। আর তাঁর ‘নোলক’ হলো মায়ের সধবার অহঙ্কার!' সম্মানের তথা স্বাধীন সংস্কৃতি লালনের অধিকার! ‘নোলক’ হলো দেশের স্বাধীনতা সংহত করার, উন্নতির সোপানের উপমা। যার জন্যে এদেশের মানুষ বারে বারে রক্ত ঝরিয়েছেন, মুক্তির আকাঙ্খা নিয়ে অমানিশার অন্ধকারকে ভ্রুকুটি করেছেন। সেই অর্জিত সম্মান বা ‘চেতনা’ যখন ভুলুন্ঠিত হতে দেখেছেন তখনই কবির হৃদয় ডুকরে উঠেছে! মুক্তির আনন্দকে, বিজয়ের চেতনাকে, সংস্কৃতির ক্ষুধাকে স্বাধীন ভাবে মিটাবার প্রত্যাশা নিবারণের প্রত্যয়ে কলম ধরেছেন, সৃষ্টি হয়েছে ‘নোলক’ এর মত হৃদয়স্পর্শী কবিতা।
কবি উপমার আশ্রয় নিয়ে যখনই যাদের কাছেই হারানো ঐতিহ্যের সন্ধান করেছেন, তারাই নিজেদের সমৃদ্ধিকেই কবির সামনে মেলে ধরেছেন, যা দেখে কবি মন আহত হয়েছে, তাই ক্ষোভে, দুঃখে হারানো ‘নোলক’ খুঁজে না পাওয়া পর্যন্ত ঘরে না ফেরার অঙ্গীকার করেছেন। “মুক্তির আনন্দকে তিনি মুক্ত করার-ই প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন।”