হে অর্থহীন স্বাধীনতা...!
তোমার ঘর ময়, গৃহময়, গৃহ-গৃহান্তরে
কৃষ্ণ গহীনের মত
নিকেশ কালো অন্ধকার প্রদ্বীপ জ্বলে।
জ্বলজ্বলে প্রজ্বলিত হে স্বাধীনতা,
তোমার কণ্ঠস্বরে যখন যন্ত্রণাময় কোন ক্রন্দন শুনি,
আত্ম প্রবঞ্চনার কোন ব্যঞ্জন শুনি,
দূর পাহাড়ি স্বপ্নচুড়ার কোন আকুতি শুনি,
আমি কেন বিহ্বল হরিণীর মত ঠায় দাঁড়িয়ে থাকি?
আমি কেন নির্লিপ্ত দীর্ঘশ্বাস ছাড়ি?

আমি যখন হেঁটে যাই প্রভাতফেরির মত,
যখন আদিম কালো শোক গাঁথা আলপিন
হৃদপিণ্ডের কাছে গেঁথে গেঁথে ক্ষতবিক্ষত হয়,
যখন অতিক্রান্ত বহুদূর বহুপথ খুঁড়িয়ে
আছড়ে পরি সূর্যাস্তের বুকের কাছে।
তখনও
সবুজ শান্ত ভালোবাসা কেঁদে ফেরে গোধূলি ধুলোর কাছে।
তখনও অভুক্ত কিছু প্রেম আকুতি করে বুকের রক্তিম শিশিরের কাছে।

তবুও আমি আদিম স্পর্ধায়, একগুচ্ছ সন্ধ্যার ওঁত পেতে থাকা অমানিশার কাছে ক্রমাগত নতজানু হই।
আমি শুকনো পাতার মত
অবনত রাত্রির কাছে ক্রমশই ম্লান হয়ে যাই।
দূর নক্ষত্রের তির্যক আলোয় আমি ঝলসে যাই না,
খাঁ-খাঁ রোদ্দুরের তপ্ত আহবানে ছূটে যাই না কাঠ ফাটা মাঠে,
ছুটে যাই না, তীব্র তাপদাহে তামাটে ঘামের সুতীব্র গন্ধের কাছে।
ছুটে যাই না, শুভ্র সকালের মত বিন্দু বিন্দু জমে ওঠা স্নিগ্ধ শিশির সিক্ত কপোলের কাছে।

আমি ভীত সন্ত্রস্ত শান্ত শীতল হয়ে উঠি,
তবু আমি আমার ঘুনে ধরা অবনত মস্তিষ্ক হায়েনার পদতলে ঠুকি।
তবু আমি হিংস্র কুকুর আর
রক্তলালায় সিক্ত দাঁতাল ঈশ্বরের পদতলে চুম্বন করি।
তবু আমি পাদুকার চপাৎ চপাৎ প্রতিঘাত সয়ে,
তবু আমি অভুক্ত শিশুটির মত গুটি গুটি বসে থাকি।
তবু আমি বিহ্বল চোখে,
চোখ তুলে অপলক তাকিয়ে থাকি সীমাহীন মহাশুন্যে।
তবু আমি আদিম সন্যাসী বেশে ভিখিরি সাজি।
তবু আমি হামাগুড়ি দেই,
তবু আমি প্রেয়সীর পায়ের কাছেই অনুগত কুকুরের মত তৃষ্ণার জল খুঁজি!

"তৃষ্ণার জল"
- স্যামুয়েল রনো -