স্বৈর-শাসকের রোষানলে Soiro Shasoker Rosanoley
হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের সময় লুৎফর রহমান সরকার ছিলো সোনালী ব্যাংকের এমডি, সমাজতান্ত্রিক ভাবনার লোক। এরশাদের মনোভাব ছিল মুক্ত অর্থনীতির। তখন মহাখালী নিউডিওএইচএস -এ নতুন ফ্লাট হলো। সোনালী ব্যাংক থেকে বাড়ীর মালিকদের সুদমুক্ত ঋণ দেয়ার কথা বলা হলো। লুৎফর রহমান সরকার তাতে রাজী হননি। বিকল্প পরিবহন বিশ্ববিদ্যালয় কর্মসংস্থান কর্মসূচীর আওতায় ছেলেদের ট্যাক্সি ক্যাব ও ৩২ সিটের কোষ্টার দেয়া হলো। তখন গাড়ীর প্রজেক্টের দূর্নীতির মিথ্যা অভিযোগ তুলে লুৎফর রহমান সরকারকে জেলে পাঠালো। এই প্রজেক্টের পরিচালক জিল্লুর রহমান সিদ্দিকীর ভাই এ কিউ সিদ্দিকীকেও জেলে পাঠালো। তখন অনুপ্রাস জাতীয় কবি সংগঠন থেকে স্বাক্ষর দিয়ে তাদের মুক্তির দাবী করা হলো। আমি এ কাজটি করাতে আমার উপর চাপ সৃষ্টি করতে লাগলো। আবার এরশাদের কবি কণ্ঠের আসরে আমি যোগ দেইনি। মঞ্জুরুল করিম জানতো আমি অনুপ্রাস পরিচালনা করি। স্কাউটসের তথ্য সচিব আমার বস মঞ্জুরুল করিমের নেতৃত্বে কবি কণ্ঠ গঠন করলো এরশাদ। বঙ্গভবনে ১লা বৈশাখ সহ বছরে দুইবার কবিতা পাঠের অনুষ্ঠান আয়োজন করা হতো। নাটের গুরু ছিলো কবি ফজল শাহাবুদ্দিন, আমলা কবিরা সবাই যেতো-কবি এটিএম গিয়াসউদ্দিন, ড. এনামুল হক, কেজি মোস্তফা, জাহাঙ্গীর হাবীবুল্লাহ, মাহবুব তালুকদার, শাহাবুদ্দিন নাগরী, সোয়েব আহমেদ, আবিদ আজাদ, সৈয়দ আলী আহসান, ড. মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান সহ অনেকেই। আমি গেলাম না বলে মঞ্জরুল করিম আমার উপর ক্ষুব্ধ হলো। তখন আমাকে নির্বাহী সচিব হেলাল আহমেদ ডেকে বললো এভাবে চাকুরী করতে পারবেন না। চাকুরী ছেড়ে দেন। আমি তখন চাকুরী থেকে অব্যাহতি নিতে বাধ্য হলাম। এই হয়রানির শিকার হলো -আমি সহ আবু করিম, কামাল চৌধুরী, সাইয়্যিদ আতীকুল্লাহ (জনতা ব্যাংকের জি.এম) কে চট্টগ্রাম পাঠালো। হাবীবুল্লাহ সিরাজী (মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশনের চীফ ইঞ্জিনিয়ার) কে চট্টগ্রামে পাঠালো। হাবীবুল্লাহ সিরাজী আর সাইয়্যিদ আতীকুল্লাহ দুইজনেই চাকুরী ছেড়ে দিলো। তারপর সাইয়্যিদ আতীকুল্লাহ সংবাদে যোগদান করলো। হাবীবুল্লাহ সিরাজী মালয়েশিয়া চলে গেলো। এর মধ্যে স্বৈরাচারী আন্দোলন দানা বেধে উঠলো। আমি এরশাদের কবি কণ্ঠে যাইনি কারণ হচ্ছে অনুপ্রাস কবিরা অনেকেই স্বৈরাচারী সরকার এরশাদকে পছন্দ করতো না। আমি ভাবলাম না আমি যাওয়া মানে অনুপ্রাসের কবিরা যাওয়া। অনুপ্রাস কবিদের জোর করে কবি কণ্ঠে নেয়া যাবে না। আমিও পছন্দ করি না। তারপর শেষ পর্যন্ত ১৩ আগস্ট, ১৯৮৯ সালে চাকুরী থেকে অব্যাহতি নিলাম। এরপর আমাকে কেজি মোস্তফা ও হেলাল সাহেব একদিন ডাকলো আমি যাইনি। ১৯৭৫ সালেও একবার সব পত্রিকা বন্ধ করে দিলো। তখন অবজারভার ভবনে আমাদের বললো- অনুমোদিত দৈনিক বাংলা, দৈনিক ইত্তেফাক, দৈনিক বাংলাদেশ টাইমস, দৈনিক অবজারভার ছাড়া যারা অন্য পত্রিকায় কাজ করেন সবাইকে এহতেশাম হায়দার চৌধুরীর নেতৃত্বে তালিকা দিতে বললো-কে কোন্ পলিজনে ছিলেন বায়োডাটা জমা দেন। সরকার আপনাদের বিষয় দেখবে এবং আপনাদের এবজরভ করবে। কিন্তু আমি (শেখ সামসুল হক) গেলাম না। আরো অনেকের মধ্যে জাহাঙ্গীর হোসেন, আতাহার, অসীম সাহা, মোস্তফা জব্বার, আবিদ আজাদ, মিহির কর্মকার, মাহফুজুল্লাহ, শাহরিয়ার কবির এদের গ্রুপ ছাড়া সবাই গেছে। যারা যায়নি তারা বেকার সাংবাদিক ফরমও পূরণ করে নাই।
আলোচনাটি ৮২০ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের সময়: ১১/০৬/২০১৭, ০৬:১১ মি: