সত্তরের দশকের শেষের দিকে রফিক আজাদ (প্রকাশনা বিভাগ), আসাদ চৌধুরী (সংস্কৃত বিভাগ), মুহম্মদ নুরুল হুদা (অনুবাদ বিভাগ), ড. সুব্রত বড়ুয়া (অনুবাদ বিভাগ) এদের সবার কাছেই ঢাকার তরুণ কবিদের বেশ যাতায়াত ছিলো। বিশেষ করে ইউনির্ভাসিটিতে ক্লাস শেষে ১১-১২টার দিকে বাংলা একাডেমী যেতো। তরুণ কবিরা বেশীর ভাগ যেতো আসাদ চৌধুরীর রুমে। তিনি বেশ মিশুক স্বভাবের এবং রাস্তাঘাটে দেখা হলে বলতেন রুমে যেও বা এসো। আবার মুহম্মদ নুরুল হুদা ও রফিক আজাদের কাছেও যেতো। এগুলো নিয়ে তখন বেশ আলাপচারিতা ছিলো কার কাছে তরুণ কবিরা বেশী যায়। মুহম্মদ নূরুল হুদা আধুনিক কবিতা নিয়ে কথা বলতেন। এই তরুণ কবিদের মধ্যে ছিল মহাদেব সাহা, হাবীবুল্লাহ সিরাজী, নির্মলেন্দু গুণ, আমি (শেখ সামসুল হক), আতাহার খান, জাহাঙ্গীরুল ইসলাম, ড. মাসুদুজ্জামান, মিলন মাহমুদ, মাহমুদ শফিক, রফিক নওশাদ, রফিক কায়সার, সানাউল হক খান, শাহাদাত বুলবুল সহ অনেকেই। এই সময়ে খুব বেশী জায়গায় কবিতার আড্ডা হতো না। হাতে গোণা কয়েকটি জায়গায় কবিদের আড্ডা বা কবিতার আড্ডা হতো। যেমন শরীফ মিয়ার কেন্টিন, মনিকো রেস্টুরেন্ট, লিবার্টি রেস্টুরেন্ট, স্টেডিয়ামের ২য় তলায় রেস্টুরেন্ট, সাপ্তাহিক দৃপ্ত বাংলার অফিস, শহীদ কাদরীর বাসা, বিউটিং বোডিং, বাংলা বাজারের ইস্পানী বিল্ডিং-এর ২য় তলায় এছাড়া কয়েকটি দৈনিক পত্রিকার সাহিত্য সম্পাদকের টেবিলে।
শরীফ মিয়ার কেন্টিন : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদের দক্ষিণ পাশে পানির ট্যাংকির পাশে কয়েকটা চেয়ার, টুল ছিলো। এখানে সব কবিরাই আসতো। সকাল ১০টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত কবিদের লেখা সংগ্রহের জন্য সবাইকেই পাওয়া যেতো। এখানে আসতো আমি (শেখ সামসুল হক) নির্মলেন্দু গুণ, আবুল হাসান, সলিমুল্লাহ খান, অসীম সাহা, সোহরাব হাসান, ড. মাহবুব হাসান প্রমুখ।
স্টেডিয়ামের ২য় তলায় রেস্টুরেন্ট : এখানে কবিতার আড্ডা হতো বিকালে ৫টা দিকে। এখানে আসতো আল মাহমুদ, সৈয়দ শামসুল হক, শামসুর রাহমান, শহীদ কাদরী, ফজল শাহাবুদ্দিন প্রমুখ।
মনিকো রেস্টুরেন্ট, নীলক্ষেত : ১৯৭২ -১৯৭৩ সালের দিকে প্রতিদিন নীলক্ষেতের রাস্তার উত্তর পাশে মনিকো রেস্টুরেন্টে জুনিয়র কবিদের কবিতা আড্ডা হতো। এখানে আমি (শেখ সামসুল হক), আতাহার খান, রফিক কায়সার, জাহাঙ্গীরুল ইসলাম, নাসির আহমেদ, আবিদ আজাদ, সলিমুল্লাহ খান, রফিক নওশাদ, মাহমুদ শফিক, সোহরাব হাসান, শাহ কামাল, আলী রিয়াজ, মাহবুব হাসান প্রমুখ।
লিবার্টি রেস্টুরেন্ট, নীলক্ষেত : ১৯৭২ -১৯৭৩ সালের দিকে প্রতিদিন নীলক্ষেত রাস্তার দক্ষিণ পাশে লিবার্টি রেস্টুরেন্টে সিনিয়র কবিদের কবিতা আড্ডা হতো। এখানে আলমাহমুদ, মহাদেব সাহা, নির্মলেন্দু গুণ, ফজল শাহাবুদ্দিন প্রমুখ।
সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্রবার : শহীদ কাদরীর পুরানা পল্টনের বাসায় কবিতার আড্ডা হতো বিকালে। এখানে আমি (শেখ সামসুল হক), হাবীবুল্লাহ সিরাজী, আতাহার খান, আবিদ আজাদ (আবিদ আজাদ ছিল সবচেয়ে বেশী আড্ডাবাজ কবি), খালেক বিন জয়েনুদ্দিন (মাঝে মাঝে), ফারুক নওয়াজ (মাঝে মাঝে), আবু করিম, শাহ কামাল (জাসদ ছাত্রলীগ), মাহমুদ শফিক, সুজাউদ্দিন কায়সার সহ অনেকেই।
সাপ্তাহিক দৃপ্ত বাংলা অফিস : দৃপ্ত বাংলা অফিসে কবিতা আড্ডায় যাতায়াত করতো আমি (শেখ সামসুল হক), আতাহার খান, রবীন্দ্রগোপ, আবু মহি মুসা, খুরশীদা হক, আলী ইমাম, কাজী রোজী, মোঃ আলতাপ হোসেন, আলী আজম, রুহুল আমিন বাবুল প্রমুখ।
ইস্পানী বিল্ডিং, বাংলা বাজার : বাংলা বাজারেরর ইস্পানী বিল্ডিং -এর ২য় তলায় (মাসিক মেঘনা পত্রিকার অফিস) বসতো- কবি রুহুল আমিন বাবুল, ফরিদ উদ্দিন নীরোদ, শাহজাহান চৌধুরী (সম্পাদক-সাপ্তাহিক নিপুন) , সেকান্দার হায়াত মজুমদার (চলচ্চিত্র পরিচালক), সুফী আবদুল্লাহ আল মামুন, আমি (শেখ সামসুল হক) আব্দুল মান্নান (সম্পাদক-তিলোত্তমা ), মিলন নাথ (প্রকাশক), শাশ্বত হাসান, দেলোয়ার বিন রশীদ (ছড়াকার), আলী আজম, গীতিকার হামিদুল ইসলাম (বিউটি বুক হাউসের মালিক) প্রমুখ
এছাড়া দৈনিক ইত্তেফাক, দৈনিক সংবাদ, দৈনিক বাংলার বাণী পত্রিকার সাহিত্য সম্পাদকের টেবিলে।
১১-০৯-২০১৬: নীলক্ষেত, ঢাকা ।