বৃত্তে দেহ বাইরে মন
.
এ কেমন বৃত্তবাস—বৃত্তে পড়ে থাকে দেহ
অথচ, বৃত্ত মুছে বের হতে ডানা ঝাপটায় মন!
.
এ কেমন বৃত্তবাস—আগুনের টুকরোর মতো
বৃত্তে ছড়িয়ে থাকে জীবন পঠিত হয় ঈশপের
গল্পের মতো, অথচ দীক্ষা নিতে যেতে হয় বাইরে।
.
এ কেমন বৃত্তবাস—বৃত্তে জ্বলজ্বল করে মিশকালো
চোখ, তেলাকুচো ঠোঁট, গোলাপের খোশবু —
সেখানে ফাঁদ পাতে জুলেখার মতো সহীহ্
নারী—বেরোতে চেয়ে পারেনা ক্রীতদাস ইউসুফ।
==
.
সংক্রমণ
.
কতো মানুষ কতো রকম
কতো কিছু ভাবে
পৃথিবীটা বি'কে দিয়ে
তারার দেশে যাবে!
হলুদ বনের কালো ফড়িং
সবুজ বনের হাওয়া
তাদের কাছে বলেছি আজ
আমার মনের চাওয়া!
পথে পথে ঘুরে-ঘুরে
মানুষ খুঁজে যাই
আমার আছে একটা সিকি
বিশ্বাসী লোক নাই!
গাছে-গাছে ফুলের মেলা
দূরে বাজে বাঁশি
কিছু মানুষ ফন্দি এঁটে
হাসে চতুর হাসি!
রাতের পাখি হারায় গতি
ফুটলে আলো ভোরে
ময়ূরের ন্যায় পেখম মেলে
সাঁঝেই তারা ওড়ে।
দমকা হাওয়ার তালে-তালে
বাজায় ভেঁপু কেউ
সুযোগ বুঝে আগুন নিয়ে
খেলতে থাকে সেও।
কতো মানুষ কতো রঙের
কতো তাদের খেলা
মানুষের এই পাঠ-শালাতে
বসে ত্রাসের মেলা।
ত্রিশূল হাতে অর্জুনিরা
কলম হাতে কবি
ঘাতকেরা দেখবে এবার
বাঁচা মরার ছবি।

ছন্দ: স্ব র বৃ ত্ত
==
.
তত্ত্ব নয় অভ্যন্তরীণ
.
যেটা কথা সেটা কথা নয়
যেটা প্রেম সেটা প্রেম নয়
যেটা ব্যথা সেটা ব্যথা নয়
.
গরম তেলের মতো বিক্ষুব্ধ যে কথারা
ছিটকে এসে, আমার চোখের বাস্তুভিটা
ঝাঁঝরা করেছে—সেটাই প্রকৃত কথা!
.
পোষের রাতে যে পুরুষ্টু প্রেম বরফ খন্ডের মতো;
হৃদয়কে চাপা দিয়ে গেছে—সেটাই প্রকৃত প্রেম!
.
ফুলের যে নির্যাস সিরিঞ্জে ভরে
বিষের মতো আমার শরীরে
পুশ করা হয়েছে—সেটাই প্রকৃত ব্যথা!
.
বালুকাময় তীরে যে পর্যন্ত জোয়ারের
জল আসে—সেটুকুই আমার জীবন!
.
ফলজ চাঁদ পাহাড়ের ঢাল বেয়ে
সমুদ্রে তলিয়ে যেতে-যেতে যে ভাষায়
কথা বলে—সেটাই আমার ভাষা!
.
খসে আসা পালক ঘাসের যে অংশে
বহুদিন... রোদ্রে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে,
ধুলো আঁধারে তলিয়ে যেতে থাকে—
সেখানেই আমার বসবাস!
_
.
খালাম্মা
.
বৃক্ষের শরীরে ছোট ছোট ছিদ্র থাকে
থাকে শ্বাসমূল থাকে জনন মূল
আরো থাকে কাণ্ড শাখা-প্রশাখা পত্রপল্লব।
.
মাথার ছাতি জুড়ে থাকে সবুজ সবুজ খেলা
আমার শরীর জুড়ে আজ আর কিছুই নেই
হৃদযন্ত্র নেই, শ্বাসনালী নেই, স্নায়ুতন্ত্র
নাসারন্ধ্র নেই,
আরো নেই চোখ কান দাঁত মুখ চুল ও নখ..
অন্তর জুড়ে নেই কাদামাটি, ঘরবাড়ি ও
দোকানপাঠ,
আর সম্পর্ক গুলো জোড়া দিয়ে চলা
আচানক সেলাই মেশিন।
.
ঘরের দরজা জুড়ে ঠক্ ঠক্ শব্দ হলে
মন আমার ক্যামন ক্যামন করে,
দোতালার রেলিং জুড়ে কারো পায়ের শব্দ শুনলে
মন আমার ক্যামন ক্যামন করে,
স্টেশনের আকাশ জুড়ে ট্রেনের সুতীব্র চিৎকারে
মন আমার ক্যামন ক্যামন করে।
.
খালাম্মা, তুমি বিহীন আমার অবয়ব নেই
আকার আকৃতি নেই, আমার ভেতরে আমিটা নেই,
তুমি বিহীন আমি ইতিহাসের গুপ্ত অধ্যায়
কিংবা একটি বিদ্ধস্ত বরফকল,
গলায় এক গোছা কবজ নিয়ে, ক্ষয়ে যাওয়া
কিশোরের মতন, নিঃশেষ প্রায়...
==
.
৩-১= ২
.
আমার তিনটে প্রেয়সী ছিল। রাজশাহী,
রংপুর, আর খুলনা তাই কি কি করে আমার
প্রিয় হয়ে গেল। রবীন্দ্রনাথের মতো
হর-হামেশাই হাওয়া বদলাতে যাওয়া লাগতো।
.
আমার তিনটে প্রেয়সী ছিল। কোয়ান্টাম
ফিজিক্স, সালোক সংশ্লেষণ থেকে বিদ্যুৎ...
তার সাথে হাড়ের কলা যে যোজক কলা
সেটাও মিক্সড করে বুঝতে হতো।
.
আমার তিনজন প্রেয়সী ছিল। ধ্বংসস্তুপে
প্রাচীন বৃক্ষের মতো তাদের তিনটে মা ছিল।
বাতাস পশ্চিমে বইলে মাজুনে মুকাব্বী
মুমসিকের সাথে গিঁটে ব্যথার ওষুধ নিয়ে
ঠিকঠাক হাজিরা দিতে হতো। ঠোঁট উল্টিয়ে
ডাকতে হতো খা লাম্ মা...
.
আমার তিনটে প্রেয়সী ছিল। তাদের বাঁকা
তরবারি, দু'টো ডানা আর আয়না'স্ত্র ছিল। খরিপ
মৌসুমে এগুলো বেশ ব্যবহার হতো। মেডুসার
মতো এদের মধ্যে একজন মরণশীলাও ছিল।
কেউ একজন কলার মোচার মতো থককরে
তার কল্লাটা কেটে নিয়ে গেল।
.
ভাতের প্লেটে বাচ্চাদের মতো তাই গো ধরে
বসে আছি। আর অনবরত ক্রন্দন করছি। 'কিছু একটা
কম কম লাগে কেন, আমার কিছু একটা কম কম লাগে
কেন?' আমার তিনটে প্রেয়সী ছিল। সত্যিই ছিল।
_
(বিদ্রুপাত্মক)
==
.
হীরালাল
.
হীরালালকে আজ রিলিজ দেয়া হবে। সেন্ট্রাল
হসপিটালে তাকে গিয়েছিলাম দেখতে।
.
হীরালাল আমাকে গর্বকরে বলতো, ত্রিশ
বছর গেল, স্যালাইনের সুচ এখনও ছিদ্র করতে
পারেনি তার নাড়ী। রক্তে মেশাতে পারেনি
বালির দানার মতো গ্লুকোজ।
.
সেদ্ধ বেগুনের মতো দুই হাত ফুলে গেছে
সেই জলন্ত ইনজেকশন নিতে-নিতে...
.
হীরালালকে কখন রিলিজ দেয়া হবে।
নাকি হবেনা। নাকি আরো কিছুদিন থাকতে
হবে। তার রোগটায় বা কি। জানিনা। শনেছি
পেটে হাত দিলে বুকের কাছে চাপ ধরে আসে।
মুখ থেকে বেরিয়ে আসে স্টবেরির মতো গন্ধ।
তার সাথে যুক্ত হয়েছে হাইপারথার্মিয়া...
.
হীরালাল আমার ছেলেবেলার বন্ধু। শৈশবে
ছাইয়ের মধ্যে দু'জনে খুঁজেছি রত্ন।
ভোল্ডেমর্টেরের মতো খুঁজেছি পরশ পাথর।
পথে কাঁটা দেয়া কুঁজো বুড়িটার মতো, ভোলা
স্যারের পথে আমরাও বিছিয়েছি কাঁটা।
.
কখনো কুকুরের লেজে বেঁধে দিয়েছি ইটের খন্ড।
ম্যাজিশিয়ানের মতো হাতের তালুই ঘুরিয়েছি
লাট্টু। দুজনে মিলে একটি মেয়েকে লিখেছি প্রেম
পত্র।
.
এই সেই হীরালাল...আজ নিজের গতরে নিজেই
ধরিয়ে দেয় আগুন। হাত পা নখ চুল ছিঁড়ে ফেলে
দাঁতে। পাগলের মতো ঘোরে 'টেশনে 'টেশনে।
ছাইভস্ম ঠেলে ফিনিক্স পাখির মতো উধাও
হঠাৎ...
.
সময় হয়ে এলো, ড্রাগ নিরাময় কেন্দ্র থেকে
রোদমাখা গাড়িটা কখন জানি কলোনিতে
এসে থামে। এতক্ষণে হীরালালকে বেঁধে ফেলা
হয়েছে..
==
.
পিচ ফুল
.
কুকুরের তাড়া খেয়ে বেড়াল উঠে যায় গাছে।
বেড়াল তো বোঝেনি মাথার উপরেই ছিল
ন্যাটো বাহিনীর মতো লক্ষ-কোটি কাক।
.
ক্যাথেটার, নাকে নল, অক্সিজেন, স্যালাইনের
তার ছিঁড়ে একটা উন্মাদ জায়গা নেয় গাছে।
ফোরম্যান রইসউদ্দীন গলায় ফাঁস দেবার পর -
ভেতরে ভেতরে দীর্ঘদিন গাছটিও ছিল পাগল...
.
পাগল গাছ মানুষকে খামচায়। পাগল মানুষ
গাছকে খামচায়। সেদিন পাগলকে নামাতে
তরুণ নার্স এপ্রোন খুলে শাড়ি পরেছিল; মা
সেজেছিল।
.
কেন বলছি এইসব কথা - যশোরের
মাথামোটা কইমাছের মতো সিজোফ্রেনিয়া
রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। যাকে
হ্যালুসিয়েশনও বলা যেতে পারে। তার কারণ
মানুষ যন্ত্রের মতো অর্থ, বিত্ত, যশ-খ্যাতি ঢেলে
একটা 'পিচ ফুলের' দিকে ছুটছে। কিন্তু কোথায়
সে 'পিচ ফুল'? মূলতঃ সেই ফুল ফোটে মানুষের
অন্তরে...
==
আত্মসমর্পণ
.
আমাকে মৃত্যুদণ্ড দিন, মহামান্য আদালত
মৃত্যুদণ্ড দিন !
নষ্ট মানুষ আমি, আমাকে ঘিরেই ইতিহাসের নগ্ন
অধ্যায়। একটা কালপ্রিট আমি, পথচারীদের
নাকের ভেতরে,
হুল ফুটে আসা উলঙ্গ ডাস্টবিন !
.
আমাকে মৃত্যুদণ্ড দিন, মহামান্য আদালত
মৃত্যুদণ্ড দিন !
আমিই মহান শিক্ষক, জ্ঞানের উজ্জ্বল নক্ষত্র,
দার্শনিক সক্রেটিসের হত্যাকারী,
হেমলক পেয়ালা আমিই প্রথম ঢেলেছি
তাঁর আল জিহ্বা পথে।
.
আমাকে মৃত্যুদণ্ড দিন, মহামান্য আদালত
মৃত্যুদণ্ড দিন!
আমিই অনিষ্টকারী এক মহান আত্মার,
অহিংসাই যার পরম ধর্ম, হাজার হাজার অনুসারী
পিঁপড়ের মতো যার পদচিহ্ন খুঁজে-খুঁজে
এলাহাবাদ থেকে ডান্ডিতে পৌঁছালো..
যিনি অসহযোগ আন্দোলনে, আত্মশুদ্ধি অনশনে
ব্রিটিশ মসনদে বিদ্রোহের ডমরু বাজালো,
আমি সেই মহামানব, যুগ স্রষ্টার হত্যাকারী
উগ্রবাদী 'নথুরাম গডসে'।
.
আমাকে মৃত্যুদণ্ড দিন, মহামান্য আদালত
মৃত্যুদণ্ড দিন !
আমি স্বাধীনতার চেতনা ধ্বংস কারী
বিপথগামী নরপশু,
নির্মম হত্যাকারী, এক রুপকথার মহানুভব
রাজা, রাণী, রাজ পুত্র, রাজকন্যা সহ
স্বপরিবারের..
আমি "বার্ন ইউনিট"
এক মহাকাব্যের রচয়িতা,
আমি গণতন্ত্রের জারুল বনে দাউ-দাউ দাবানল,
গোল টেবিলে নষ্ট-ভ্রষ্ট রাজনীতির
চাষাবাদকারী,
.
আমি ঝিলের ধারে ওঁৎ পেতে থাকা নীতি ভ্রষ্ট
লোলুপ শিকারী,
সাই সাই শব্দে উড্ডীন
মুক্তিকামী বিহঙ্গের শরীরে তপ্ত বুলেট হানি।
.
আমাকে মৃত্যুদণ্ড না দিলে কলঙ্কমুক্ত হবেনা
জাতীর অভিশাপ !
আমাকে মৃত্যুদণ্ড না দিলে যুগে যুগে রচিত হবে
এভাবেই নস্টালজিক ইতিহাস।
==
.
লঙ্ঘন
.
শিশুটিকে বললাম, এই দেখ আমি মরে যাবো।
শিশুটিও বললো, এই দেখ আমি মরে যাবো।
.
আমরা মরে পড়ে আছি অঁরি মাতিসের
চিত্রকর্মের মতো। আমাদের জন্য রাখা
হলোনা জাতিসংঘে শোক প্রস্তাব।
আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেলের বিখ্যাত সেই
পিয়ানো করুণ সুরে ঝরালোনা একরত্তি অশ্রু!
.
দুধের তিয়াস পেলে শিশুটিকে জাগতে হলো।
কোচিং-এর সময়, আমাকেও খুলতে হলো চোখ।
.
সময় করে আমরা আবার জাগবো। আবার
মরবো। আবার মরবো, আবার জাগবো!
কোন শাস্ত্রে বলা আছে, একবার মরে গেলে
জেগে ওঠা নিষেধ?
==
.
এই ঠোঁটে খুঁজে নাও সেলাইয়ের কারুকাজ
.
গল্পের প্লট কিনেছি। কাঁঠাল পাতার বিনিময়ে।
প্লট বিক্রয় হতো মধ্য যুগে; এখনও হয় কি?
কাঁঠাল পাতার রঙ ক্যামন বলতো? তার
আগে জেনে নাও ভালোবাসার রঙ!
.
ইতিহাসের পাতা থেকে কিছু উত্তাল ঢেউ
এনে গল্পে তড়িৎ প্রবাহ বাড়াবো। বঙ্কিম
কলমকে খন্তির মতো ব্যবহার করে যেমন
ইতিহাস খুঁড়ে গড়েছিলেন ইমারত।
.
সরু রাস্তা, বন পেরিয়ে নদী, ওলন্দাজ বণিকের
জাহাজ, সিরাজ দৌলার ক্ষমতাচ্যুতি, এগুলো
নিয়ে ভাবতেই অজস্র নতুন লোমহর্ষক গল্প
টার্মিনালে ভিড়ে যায়।
.
বাঘের থাবা, ছিঁড়ে ফেলে ঘারের মাংস।
নিঃশ্বাসে
ছেড়ে দেয়া হয় কার্বলিক এসিড। জল ঠিকই
প্রবাহিত হয় _কিন্তু ছুঁয়ে দেখেনা শিশুর শুষ্ক ঠোঁট
বাজপাখির চোখ থেকে জন্ম নেয় বারুদবৃক্ষ।
.
বিদ্যাসাগরের পোকাখেকো দাঁতের মতো মাকড়
খেয়ে নিচ্ছে একেকটি বর্ণ। কি ভাবে লিখবো গল্প?
গল্পের সমুদ্রে পয়সার মতো আমি হারিয়ে ফেলি
গল্প। পড়ে থাকে প্লট...
!
==
.
বর্বরতার আপডেট ভার্সন
.
ফাদার বলল- 'শুয়োরের বাচ্চা' ন্যাংগোট
হয়ে থাক'। ছেলেটি আজ সারাদিন
ন্যাংগোট হয়েই থাকলো।
.
নাংগোট হয়ে পথে-পথে ঘুরলো। ন্যাংগোট
হয়ে স্কুলে গেল। ছাত্রীদের ওয়েটিং রুমে ঢুকে
পড়লো। ন্যাংগোট হয়ে মসজিদে গেল।
ইমামের আসনে দাঁড়ালো।
.
অনিকেতের মতো সে আজ, ন্যাংগোট হয়ে
ঢুকে গেল কফি-হাউসে। রিসিভসনিস্ট বিউটি
কুইনের মুখে তেলেগু ভাষায় কিছু জিজ্ঞাসা ছুঁড়ে
দিল। বাসস্টপ, রেলকলোনী, আদালত চত্বর
হয়ে সে এখন পাহাড়ের খাড়লে...
.
সঙ্গী সাথীদের নিয়ে শুরু করলো বর্বর জীবন।
পশুর বদলে শিকার করতে লাগলো মানুষ।
মানুষের রক্ত দিয়ে চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগীতার
আয়োজন করলো। আর্টেমিসদের মতো সুতীষ্কন
অস্ত্র হাতে উঠে এলো লোকালয়ে।
.
পাথরে ঘষা দিয়ে আগুন জ্বালানো। সে আগুনে
পুড়িয়ে দিল নগরীর পর নগরী। মানুষের চামড়া
দিয়ে ডুগডুগি বানিয়ে, কোজাগরী পূর্ণিমায়
মহোৎসব চালাল। পাহাড়ের সানুদেশে রাতদিন
মেহনত করে, ফলাতে লাগলো গোলা-বারুদের
ভেরাইটিজ ফসল।
.
ফাদার বলল-'শুয়োরের বাচ্চা' ন্যাংগোট
হয়ে থাক'। ছেলেটি আজ সারাদিন ন্যাংগোটো
হয়েই থাকলো!
_
==
.
পা
.
অস্পষ্ট আলোয় অধিক দেখা যায় —কি?
দু'টো পা, মিঠেকড়া পা, পা কি মিঠেকড়া হয়?
.
কি ফর্সা, স্টিলেটোর মধ্যে উঁচুনিচু পা!
ক্যাম্পাস, বুকস্টল, কিংবা গোলচত্বরে শতকোটি
পায়ের মধ্যে এইদুটো পা আমি চিনে রেখেছি,
সংগীতের উঁচু-নিচু স্বরের মতো হেঁটে যাওয়া
দেখেছি!
.
জেনেছি নাম তার 'জেমিনি'
তার বাবার নামও জেনেছি
প্রয়োজন পড়েনা তবুও জেনেছি।
শহরের প্রাণকেন্দ্রে তার বাবার আছে -
একটি মদের দোকান—রেজিস্টার মদের দোকান,
মদ কভু ছুঁইনি, মদ শব্দটা কবিতায় পর্যন্ত আনিনি
অথচ...
.
সেকি পপ ঘরানার মেয়ে?
লেডি গাগার ছোট বোন?
স্টাইলে কেন বলে ছ...রি?
.
'রিস্ক নিতে ভয় পাইনা, বরং রিস্ক থাকলে
সাবধানে পা ফেলি'—এটাই আত্মবিশ্বাসী মানুষের
গল্প।
.
তাই আজ সন্ধ্য থেকে রবার্ট ব্রুসের কথা
মনে পড়ছে, ছেলেবেলা পড়েছিলাম
কি তার প্রচেষ্টা!
সেদিনের সেই উদ্যমী মাকড়সা
কানে এসে বলে দিচ্ছে —থেমনা।
.
পা
সেই দুটো পা
কি ফর্সা পা!
পৌরাণিক নারীর ফিরে আসা পা
চোখে-চোখে রাখার মতো পা
বুকে-বুকে পোষার মতো পা
চিনির দানায় জমাটবাঁধা পা
.
যদি পুস্তকের মতো সাজিয়ে রাখো
মন্দির, গির্জা কোন ধর্মশালায় -
তার দু'টো পা—ডেয়োপিঁপড়ের মতো
ঈশ্বর ছুটে আসবে নিশ্চিত ...
==
.
টেলিপ্যাথি
.
ঘুমের ঘোরে নাক ডাকে হেদায়েত স্যার।
একটা পেপার ক্লিপে এঁটে দেয়া হলো তার
নাক। পেটটা ফুলে মস্ত একটা পাহাড়।
.
দু'টো পিঁপড়ে পরিশ্রান্ত; পাহাড়ের চূড়ায়।
তাদের মনে গিরিশৃঙ্গ বিজয়ের অনন্দ!
এতক্ষণে পৌঁছে গেছে ইলেকট্রনিক মিডিয়া।
যে উপায়ে মনের খবর জানা যায়—তার নাম
টেলিপ্যাথি।
==
.
ফটোশপ
.
হতে গিয়েছিল আশ্চর্য টিলার যাত্রী
পাতা সহ তাজা ফুল - তার মতোই নারী;
উজ্জ্বল লিপস্টিক চোখে কাজলের ছোঁয়া
থেমে আছে শূন্যে
কতো কাছে টেনেছিল তাকে - আগষ্টের শেষে
দুধের ঝর্ণা,
সাগরে পাথরের লুকোচুরি
উঁচু স্টিলেটোর মতো পাহাড়
যার যকৃৎ -এ শোকের প্রোটিন
শোপিস
ডায়েরী
ফটোফ্রেম
গয়নার বাক্স
এলোমেলো সব - এ যেনো কার্টুনের বাড়ি,
কাঠে খোদাই করা এই ছবিটা আমায় ভাবায়
আমি খুব ভাবি!
==
.
প্রত্যাবর্তন
.
কখনো ফুরোয় না এইসব আবেদন। দেহের
কাঁচা গন্ধে, এসিটোনিক নির্যাস! বাহারি
উপাত্ত।
.
অভিধানের পাতা ছিঁড়ে আয়তক্ষেত্রের বাইরে
এলে তুমি; এই পৃথিবী তোমার। এই কবিতা
তোমার। অগুন, ঝর্ণা, চাঁদ, রহস্য, সব তোমার।
.
ভুলে যাও কোন প্রাচীন পৃথিবী; ব্যাবিলনিও
সভত্যা, আর জিউসের কলাইকরা চোখ।
.
কাঁচের মতো এই ঝকঝকে শহর। শিরীষের
ডালপালা, কফিশপ, ফুতপাত, জনস্রোতে -
তুমি আমি আমরা দুজন!
.
সূর্যের মতোই তোমার ঘ্রাণ, উত্তাপ, শোভা
বেষ্টিত করে হৃদয়।
.
ওঁ জবাকুসুমসঙ্কাশং কাশ্যপেয়ং – মহাদ্যুতিম ...
.
এই নাও দিলাম সূর্যমন্ত্র, তুলে রাখো। একটু
হেসে বেরিয়ে আসো, মনেহয় বৃষ্টি হবে, একটা
হলুদ ট্যাক্সি বহুক্ষণ অপেক্ষায়..
==
.
নেমে এসো অর্জুন
.
আগুনে ঝাঁপ দিতে যেও না—কঙ্কালসার শিশুর
গলায়
ঝুলতে থাকা রক্ষা কবজের মতো একটা কবজ —
তোমার গলায়; হয়তো ইব্রাহীমের দেয়া
সুতরাং, আগুন তোমাকে ছোঁবেনা।
.
আকাশে উড়াল দিতে যেও না—ভূমি সার্ভেয়ার
দের মতো
আকাশ কখনো মেপেই দেখেনি তোমার সিনা,
সুতরাং, আকাশ তোমাকে একচ্ছত্র সীমানা,
কখনোই দেবেনা।
.
বৈশাখী তাণ্ডবের পূর্বে ঘর গৃহস্থল সংস্কারের
মতো
পেরেকের কর্কশ চুম্বন, হাতুড়ির ছন্দবদ্ধ আঘাতে
নিজেকে একবার পুরুষোত্তম করে নাও—গ্রীক
বীরদের
শরীরী ভাষা, বাজুতে লিখে নাও।
.
মানুষের চরম দুর্দিনে, ট্রাফিক বিদ্যে না বুঝে
ফুলের কলির মতো আধফোটা স্তন যুগলে, 'দশ
আঙুলের লাঙল"
দিলেই—কেউ বীর নয়।
.
মানুষের চরম দুর্ভোগে, বেদনার নীল আকাশে
দু'আনা শুভ্র মেঘের ব্লিচিং পাউডার
ছিটিয়েছি
বললেই—কেউ বীর নয়।
.
অধপাতেদ চরম দুঃসময়ে, শব বাহকের কাঁধে কাঁধ
না রেখে,
নিষ্পেষিত চোখের রেটিনা জুড়ে
সেফটিপিনে আটকানো শঙ্কা গুলো না মুছে,
কুস্তিগীরের মতো নিজ ঘরে কাউকে পরাজিত
করে
কিংবা দরজা বন্ধ করে নিজের তুলোর ব্যবসার
হিসেব মিলিয়ে গদগদ করলেই—কেউ বীর নয়।
.
একটি নিটোল ভোরের প্রত্যাশায়—অদম্য
আঁধারের আঁতুড় ঘরে—যে সলতে
জ্বলতে
জ্বলতে
নিঃশেষ হয়ে যায়—সেখানেই কিছু বীরত্বের
গন্ধ পাওয়া যায়!
==
.
প্রেম-পুরাণ
.
কাজলা দিদি এখন আর ইথার কিংবা সোশ্যাল
চ্যানেলে ভাসে না, ভাসে এই হৃদয়ে!
.
বাবা বলেছে - আমাদের জন্য একটা মহল
বানিয়ে দেবে। তিব্বত থেকে নীলাভ রঙের
বেলে পাথর এনে, পারস্য স্থাপনার সংমিশ্রণে।
.
কিন্তু, তার সাথে যুক্ত থাকবেনা এটাস্ট বাথ।
তার বদলে কাজলা দিদির জন্যে পথের পাশে
তালপাতায় ছাওয়া স্নান-ঘর হবে। সালাম
হুজুরের বোররাক চোখ, ব্যাকটেরিয়া ছড়ানোর
আগেই ডগ স্কোয়াড নিয়ে বসাতে হবে -
কঠোর পাহারা। এই হলো আমায় ধার্যকৃত শাস্তি।
.
চন্দ্র থেকে - চন্দ, চন্দ থেকে - চাঁদ, -এর মতোই
বিবর্তনের ধারা মেনে, কাজলা দিদি যেদিন
বাবার কাছে দুধে ভাতে জোছনা হয়ে উঠবে।
যেদিন মা সোহাগ করে মাথায় তেল ঘষে
দেবে। বোন নখ কেটে, ব্রাশে পেস্ট লাগিয়ে
দেবে। প্রতিবেশিরা লো.. লো.. করতে-করতে
এগিয়ে আসবে -
.
সেদিনই, মেডিকেল চেকাব শেষে বাড়ি ফেরার
পথে; নির্জন রাস্তায় বাবাকে শুনিয়ে দেব -
বৈষ্ণব পদাবলী। যার হিরো হিরোইন মূলতঃ
রাধা ও কৃষ্ণ।
==
.
যমজ
.
নগেন দা বললে - বুঝলি ভাই, রবীন্দ্রনাথ
মূলতঃ ইন্দো-আর্য। সুদেহী। গায়ের রঙ গৌর।
আকারে দৈত্যাকার। নাক ছুরির মতো তীক্ষ্ণ।
এইরকম সব কাঁটায়-কাঁটায় মিল পাবি।
.
পথে ঘাটে এই ধাঁচের মানুষ দেখলে একটু
তক্কে-তক্কে থাকবি। সমুদ্ররোগ আছে কিনা।
তালগাছ দেখলে থামে কিনা। বৈশাখ মাসে
হাঁটুজলে নামে কিনা। সেইসাথে লাইফ স্টোরি
একটু জানতে চেষ্টা করবি। যেমন প্রচলিত
বিদ্যায় অনিহা আছে কিনা। বড় মানুষীর
মধ্যে স্রেফ গরিবানি হাবভাব কিনা। মানুষ
হলোনা বলে ফ্যামিলির আক্ষেপ আছে কিনা।
.
নগেন দা বললে - শান্তিনিকেতনে এক পা, আর
টেমস নদীর তীরে রেখে আরেক পা, ট্যাচু অব
লিবার্টির মতো; ধূপ-চন্দনের গন্ধ নিয়ে, এই
জাতীয় মানুষ গুলো মূলতঃ ঠোলের মধ্যে বহন
করে রবীন্দ্রফসিল।
.
নগের দা বললে - আচ্ছা বল দেখি রবীন্দ্রনাথের
হারিয়ে যাওয়া ঠাকুরদার নাম কি?
-দ্বিজেন্দ্রনাথ জানি। তিনি কি হারিয়ে ছিলেন?
.
'এই হলো তোরা মোটা ধাঁতের টিপিক্যাল
বাঙালি। খাবি দাবি আর পুঁথিগত বিদ্যার
সিরিয়াসনেস ঝাড়বি।... সেই ফটোগ্রাফটা
বুকে নির্মলেন্দু গুণ, পথে-পথে কার ছায়া
খুঁজে ফেরে শুনি?'
==
.
কংক্রিটে চাপা ঘাসের অস্তিত্ব
.
যতটা সম্ভব -
জবরদস্তি করেই
বেঁধে ফেলা হলো
তার
হাত
পা
শরীরের একাংশ।
.
মুখে পুরে দেয়া হলো
কাপড়ের ঢিমা
বেড়াল ইঁদুরকে নিয়ে
যেমন স্বেচ্ছাচারী হয়...
.
ছোট ছেলেটি কাঁদছে
মাছের মতো -
'হা' হয়ে আছে মুখ,
ভাইব্রেট মোবাইলের মতো
শব্দ হচ্ছেই...
কিন্তু বাতাস তার
দায়-ভার নিচ্ছে না!
.
বালিশের কোণায়
বড় মেয়েটির চোখ
ত্রাসে, সিগন্যাল
লাইটারের মতো
জ্বলছে
আর নিভছে।
.
এখনো -
স্বামী মানেই
চালকের আসন
স্বামী মানেই
দূর পাল্লার
ট্রাম ড্রাইভার
স্বামী মানেই
জিউসের মতো
ইস্পাতের শরীর,
স্টিল-হৃদয়
স্বামী মানেই
দুঃশাসনের
নামান্তর।
.
প্রাচীন গুহা হতে
যে সভ্যতার
শুরু হয়েছিল
মাঠ
ঘাট
স্যাঁতানো বন
নদীর কানকো
হয়ে
তা এখন
ঝুঁকে পড়েছে
নগরায়ণে।
.
এখানে একেকটি
ফ্ল্যাট মানে
একেকটি বিচ্ছিন্ন গ্রহ!
.
রাত্রি ক্রমশঃ
গাঢ় হয়ে আসছে
কুয়াশা গ্রাস
করছে
কাঁচের জানালা
দূরে জ্বলছে
সোডিয়ামের বাতি
কেউ হয়তো এখনো
চা-চক্রের নিমিত্তে
কঠোর পণ নিয়ে
বসে আছে।
.
বরাবরের মত
আজো হয়তো
নিশ্চুপ থাকবে
সূর্যালোক,
এই ফ্ল্যাটে
কি ঘটেছিল!
-