বায়স
.
কবজের ঠোলের মতো বিক্রি আছে একটা দেহ
দেখ, কিছু সফটওয়্যার বুনেনিতে পারো কিনা।
.
আত্মাতো ছুটে গেছে দ্বাদশীর রাতেই
নিয়ে গেছে আগ্নিবর্ষী বায়স;
পড়ে আছে শূন্য ঠোল, জন্মায়নি পর্যন্ত ঘাস!
.
বনের ভেতর দিয়ে গড়িয়েছে সভ্যতা অনেক দূর
ফিক ওঠা কান্নার মতো এসেছে প্রযুক্তির
জোয়ার,
দেখ, এই দেহে বসাতে পারো কিনা দুটো
ট্রান্সফরমার,
ময়ুরাকৃতি নৌকার মতো
ভাসাতে পারো কিনা জলে।
.
কল্পিত দেবতার চেয়ে, অন্ততঃ কবিদেহ
চাক্ষুসমান।
উপাদেয় মলাটের ভেত্রে, হয়তো হবে জ্যোতিময়
পাঠ,
ফেলে রেখে আর বলো, কি লাভ?
কবজের ঠোলের মতো বিক্রি আছে একটা দেহ!
===
অংক
.
আজকাল আমি নিজেকে খুব তোয়াজ করে চলি
পায়ের কাছে একটি পিঁপড়ে,
তাকেও দু'হাতে সরিয়ে দিয়ে, রাস্তা হাঁটি
.
বানভাসি জীর্ণ ধুন্দুল লতা, ভেসে যেতে-যেতে
শেষ একবার আমাকে বলেছিল-
প্রয়োজনে দাঁত কপাটি করে স্ট্যাচুর মতো
দাঁড়িয়ে থাকবি,
তবুও দাঙ্গাবাজ মানুষের
ছায়াটি মাড়াবিনা, নুনটি খাবিনা
বিষবাষ্পের দ্রাঘিমা রেখা খবরদার, স্পর্শ
করবিনা,
সেই থেকে জানোতো, আমি নিজেকে খুব
তোয়াজ করে চলি।
.
টেলিস্কোপের নলে চোখ ঘষতে হয়নি আমার
শিখতে হয়নি অলীক তন্ত্রমন্ত্র
যেতে হয়নি কোন ডিটেকটিভ ব্রাঞ্চে
তবুও চিনেছি, দেখেছি, বুজেছি আমি,
ফেরেব্বাজ মানুষগুলো যতটা ত্যাঁদড়,
ততটাই বর্ণচোরা।
.
কেউ কি কখনও দেখেছে সাদা পাঞ্জাবীতে
ছতর ঢাকা পর্দানশীন কাক?
এমন অভিজ্ঞতা কি হয়নি কখনো
ময়ূরের মত পেখম মেলে
নাচতে-নাচতে স্টেজ গুঁড়িয়ে দিল কাক?
কেউকি কি কখনো রেখেছে খোঁজ?
কাকের ধমনী শিরা কৌশিকনালী থেকে
নিষ্কাশিত পচা রক্ত, দুর্গন্ধময় বর্জ্য, কি করে
দুষিত করলো পবিত্র মাটি, নষ্ট করলো ভ্রূণ
কচি পাতার মায়া, আর আবাদী জমির শিল্পকর্ম?
.
তাই প্রতিটি মুহূর্তেই চোখের গোলক জুড়ে
ফুঁসে উঠে কার্তুজের বান, ট্রিগার টিপলেই...
না, না...
একটি পৌত্তলিক গোলাপ, পূজা-আর্চা আর
রূপের হাটের সমুদয় বিকিকিনি শেষে
নিভে যেতে যেতে আমাকে বলেছিল-
প্রয়োজনে দর্জি বাড়ির গেটে বসে
সেলাই মেশিনের গান শুনবি,
দর্জির মেয়ের সরেস চোখে চোখ রাখবি
পারলে ভাব জমাবি,
.
কিন্তু ক্খ্খনো খচ্চর মানুষ গুলোর দলে ভিড়বিনা
গায়ের গন্ধ শুঁকবিনা
মরে গেলেও মুখে আগুনটি পর্যন্ত দিবিনা,
সেই থেকে আমি নিজেকে খুব তোয়াজ করে চলি!
===
.
ব্যাধি
.
ধীরে, খুব ধীরে, মাটি ফুঁড়ে
কেঁচো যেমন স্লো-মোশানে
হাঁটে, তার চেয়েও ধীরে বেড়ে
ওঠে মেয়েটি।তার সাথে
পাল্লা দিয়ে বেড়ে ওঠে একটি
হরিৎ বৃক্ষ।করাল মাছের মতো
মা-বাবার মাঝখানে মাথা
ঢুকিয়ে; কতরাত মধু-ঝরা মুহুর্তে
করেছে মেয়েটি সীমা লঙ্ঘন!
.
মস্তিষ্ক
অস্থি
পেশি
ত্বক
স্তন
.
দ্রুত বর্ধনশীল গাছের মতো
বাড়তে-বাড়তে, মেয়েটি হাওয়ায়
ভাসিয়ে দিল গা।ফুঁসে ওঠা ঢেউয়ের
মতো; ইস্ট্রোজেন হরমোনের জোয়ারে
উছলে গেল তার দেহজ নদী।
.
বই
খাতা-কলম
ড্রইং পেপার
ন্যাপকিন
চুলের ক্লিপ
সেফটিপিন
মুড়ির টিন
ম্যাচিং কানের দুল
ব্রেসলেট
মেকাপ বক্স
স্কুল ড্রেস
.
তার ভেতরে লুকানো গোলাপী
রঙের ব্রা সহ মেয়েটি
উঠে গেল বরাদ্দকৃত নতুন ঘরে।
খুলে দিল দখিন দুয়ার। টুকরো
জোছনা এসে আছড়ে পড়ল কোলে।
.
একদিন প্রচন্ড ঝড়ে ভেঙে গেল
হরিৎ বৃক্ষ। মেয়েটিও হল উধাও।
প্রতীক্ষায় স্বজন।বৃদ্ধ পৌত্তলিক
'নগেন দত্ত' ঘোষণা দিল -মেয়েটি
নিশ্চিত ছিলো সীতা। রাবণের
বংশধর অবশ্যই হরণ করেছে তাকে।
.
অনেক অনেক দিন পরে।সীতার
মতোই মেয়েটি বুকভরা আশা
নিয়ে ফিরে এলো ঘরে।তবে
এই সমাজ দাবী করে বসলো -
আগুনে হেঁটে তাকে দিতে হবে,
এক্ষুনি সতীত্বের পরীক্ষা।
==
.
রূপকথা
.
বোনের বাড়ি বনে -বোনের স্বামী
জীবদেহধারী ঈশ্বর,
শিকারি, ফাঁদপাতক, বনের রাজা টারজান...
.
আমি মফস্বলের পদ্য ঠাপানো কবি,
'জনম অবধি হাম'
পথে-পথে ঘুরি, ক্লান্ত পাখির মতো
ঝুলে-ঝুলে টিপকলে পানি খাই -
স্পষ্ট জ্ঞানের অন্তরালে অস্পষ্ট চেতনায়,
দেহ না ডুবিয়ে স্নান করি,
তাই লোকে নাম দিয়েছে - 'সর্বসংস্কার
সন্যাসী'।
.
একদিন গেলাম বোনের বাড়ি বনে
নিশাচর পেঁচার সাথে রাত কাটালাম,
শুকনো পাতার উপর দিয়ে নিঃশব্দে হাঁটা
শেখলাম
হাতির শুঁড়ে চেপে পাতার ফাঁকে দোল খেলাম
আর দেখলাম ফড়িং-এর টিংটিং নাচ,
গাছপালা , ক্ষুদ্র কীটপতঙ্গ, দানব প্রবণ পশুপক্ষী
আমায় কুর্নিশ করলো।
.
পাহাড়ের খাড়ল থেকে নেমে এলো
'শকুন্তলা'
কোমরে তার বাতাসের ঢল, বক্ষজে ইরাবতী
ঢেউ...
.
'জানোয়ার' ডাকনাম সেই থেকে গায়ে বিঁধে
না !
==
.
তার জন্য রেজিস্ট্রি দিতে পারি
.
বাতাস ঢুকে পড়লো নাকের ছিদ্র গুড়িয়ে দিয়ে
নয় নম্বর বিপদ সংকেত কাটছাঁট করে
ফুসফুস ফাটিয়ে,
জলোচ্ছ্বাসের মতো উঠলো বাতাস ফুঁসে
সে বাতাস চাইলো কাদাখোঁচা করে
হৃদয়ের গোলাপী রঙ পাল্টে দিতে,
চাইলো খুন করতে হৃদয়ের, প্যাস্টেল রঙের
টিয়েটাকে,
চাইলো বনজ উদ্যান খেয়ে ফেলতে
আর একটি নাম হৃদয় থেকে মুছে দিতে।
.
বাতাস কে জিজ্ঞেস করলাম -
তোমাকে পাঠালো কে? তোমার ইন্ধন দাতা
কে?
প্রত্যুত্তরে বেগানা বাতাস আমার চুলের মুঠি
ধরে
শিমুল তুলোর মত উড়ালো; আকাশ থেকে
আকাশে।
.
অসহ্য নিম্নচাপ বাঁধালে, সাগর গর্জে উঠতে
পারে,
লাগামহীন ভূমিধ্বস, পাথর উত্তোলন, বৃক্ষ নিধন
করলে,
পাহাড় দুরারোগ্য ব্যাধি নিয়ে
একদিন ক্ষয়ে ক্ষয়ে নিঃশেষ হতে যেতে পারে
মাটির নিচে টেকনিক প্লেটগুলোতে সংঘর্ষ
বাঁধালে,
ভূ-কম্পের জন্ম হতে পারে।
.
কিন্তু ভিনদেশী বাতাস মনে রেখো
তুমি যতই সংঘর্ষ বাধাও আমার হৃদয়ে,
আর্ম ফোর্সের মতো যতই করো ধরপাকড়,
যতই চালাও সাঁড়াশি অভিজান
যতই বসাও নিচ্ছিদ্র পাহাড়া
আমাকে পারবেনা টলাতে,
হৃদয়ে প্রশস্ত মাউন্ট বোর্ডে হীরা চুন্নি
পান্নার অক্ষরে
খোদাই করা আছে যে নাম, পারবেনা কখনো মুছে
দিতে!
.
ও বাতাস তুমি যেখান থেকে এসেছো ফিরে
যাও সেখানে,
যদি পারো বলো গিয়ে তাকে
সাত সমুদ্র তের নদীর পানি এক চুমুকে নিঃশেষ
করে,
তার জন্য এখনো আমি উঠবোস করতে পারি
কানে ধরে,
তার জন্য এখনো আমি কাঁধে জোয়াল নিয়ে
হালের বলদের মত খুঁজে নিতে পারি চাষহীন
জমি,
দশ হাজার টন লোহার নাগ্রাজুতো পায়ে ঠেসে
তার জন্য দৌড় দিতে পারি জৈন্তাপুর
থেকে কারাকাসের পথে,
খাম্বাজ রাজার তলোয়ারের নিচে পেতে দিতে
পারি মাথা।
.
চাইলে তাঁর জন্য রেজিস্ট্রি দিতে পারি
মাটির পৃথিবী
হৃদয়ের ঘরবাড়ি
আকাশের সীমানা।
-