এক চিলতে স্বাধীনতার জন্য
.
এক চিলতে স্বাধীনতার জন্য আমি রাম ভক্ত
হনুমানের মতো -
লেজে আগুন নিয়ে, পুড়িয়ে দিতে পারি
সারি-সারি প্রতিবন্ধক পাহাড়।
.
জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করে দিতে পারি
কুচক্রির ট্যারা চোখ
হাঙ্গরের মতো সুঁচালো দাঁত
ব্লাডারের মতো গোল দূষিত ফুসফুস
আর নিম তেঁতো জিহ্বার স্বাদ।
.
এক চিলতে স্বাধীনতার জন্য আমার
জন্মদাত্রীকে
অমিতব্যয়ীর মতো গর্ভবতী হতে হয়েছে
জন্ম দিতে হয়েছে বীরবাহু সন্তানদের।
.
কবর খোঁড়া ইমামের মতো ইতিহাস খুঁড়তে
থাকো
আমার শেকড়ের স্পর্শ পাবেই,
পলাশীর প্রান্তরে নেতিয়ে পড়া
স্বর্ণলতা, কি নিপুণ -
লক-লক করে বেড়ে উঠলো, সিপাহী
বিদ্রোহের তাপদাহে!
.
এক চিলতে স্বাধীনতার জন্য ফকির বিদ্রোহ
এলো
এক চিলতে স্বাধীনতার জন্য খেলাফত
আন্দোলন এলো
এক চিলতে স্বাধীনতার জন্য ফরায়েজী
আন্দোলন এলো
এক চিলতে স্বাধীনতার জন্য অসহযোগ
আন্দোলন এলো
এক চিলতে স্বাধীনতার জন্য স্বদেশী
আন্দোলন এলো।
.
সেই থেকে শুরু..
বিশ্বাস করো, শুধু এক চিলতে স্বাধীনতার
জন্য
সাতচল্লিশের ডানায় ভর করে, ঘরে ফেরা
পাখির মত-
ফিরে এসেছিলাম নিজ বলয়ে
স্নেহপুষ্ট সন্তানের মতো, ঘুমোতে
চেয়েছিলাম
মায়ের আঁচলের সুশীতল ছায়ায়!
.
কিন্তু-
আবার সেই কালো হাত
আবার সেই নোংরা দাঁত
আবার সেই ট্যারা চোখ
আবার সেই নেকড়ের নখ
আবার সেই রক্ত চোষা মুখ।
.
এক চিলতে স্বাধীনতার জন্য বাহান্ন এলো
১৪৪ ধারা নিয়ে
এক চিলতে স্বাধীনতার জন্য আটান্ন এলো
সামরিক আইন নিয়ে
এক চিলতে স্বাধীনতার জন্য ঊনসত্তর এলো
আসাদের রক্তাক্ত শার্ট নিয়ে
এক চিলতে স্বাধীনতার জন্য একাত্তর এলো
৭ ই মার্চ নিয়ে
পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সুরে শ্রেষ্ঠ গায়ক, গেয়ে
উঠলো একটি গান,
মানুষের কন্ঠে ধ্বনিত হলো, একটি
বজ্রনির্ঘোষ বাণী -
.
"এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম
এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম"
.
এক চিলতে স্বাধীনতার জন্য
যমদূতের ঝোলা থেকে নেমে এলো একটি
কালো রাত
এলো আপারেশন সার্চলাইট
এলো জেনোসাইড,
এক চিলতে স্বাধীনতার জন্য মহাশ্মশানের
ধ্বংসস্তুপের উপর
রক্তের কালিতে লেখা হলো একটি
বিয়োগাত্মক মহাকাব্য।
.
অবশেষে-
এক চিলতে স্বাধীনতার জন্য
উদিত হলো, তরুণ টগবগে যুবকের মতো
শিমুল পলাশের দীপ্ততা নিয়ে একটি নব
সূর্য
একটি লাল সবুজ পতাকা,
জন্ম নিলো-
রূপকথার গল্পের মতো একটি দেশ,
বাংলাদেশ।
======
.
অস্ত্রের সিংস্র ভাষায় শাস্ত্রীয় কোরাস
.
শরষে ফুলের রঙ কেন লাল হয়ে গেল
হঠাৎ?
কদলী বৃক্ষ
মাষকলাইয়ের ক্ষেত
বেডরুম থেকে জনসমুদ্র
লাইব্রেরী
ধর্মশালা
রেলকলোনি
বিদ্যানিকেতন
নাটিয়া পাড়ায়
পূর্ব হতেই কি ছিলো, লাল রঙের ভেপসা
বিচ্ছুরণ?
ক্ষুব্ধ খাদ্য কণার মতো মুদ্রণ যন্ত্রে
লেগে থাকে লাল শব্দাংশ !
.
তবে কি লাল থেকেই রক্ত?
লাল থেকেই লোহিত সাগর?
লালে থেকেই লাল বাবুদের ফেরেসতা হওয়ার
গল্প?
.
'ক্ষ'
তোমাকে একটা পরামর্শ দেই শোন -
তুমি 'ক' আর 'ষ'-এর সাথে আঁতাত করে
লাল উচ্চারণ বন্ধ করো,
দানবের ছাঁয়া ধরে হেঁটে গিয়ে পূণ্যকম্মের
নামে
রুদ্ধদ্বার বৈঠক বাঞ্চাল করো,
যবনিকার ওপার থেকে, নাড়া বন্ধ করো কলকাঠি
.
অস্ত্রের সিংস্র ভাষায় শাস্ত্রীয় কোরাস
আর শুনতে চাইনা!
সূর্যোল পৃথিবীতে নগ্ন নির্জন ছাঁয়ারা হেঁটে
যাক
আর চাইনা!
কাকতালীয় বিকল মস্তিষ্কের সংক্রম
আর চাই না!
একটু একটু করে আমার সন্তান, দুঃস্বপ্নে বেড়ে
উঠুক
আর চাইনা!
.
তোমার ক্লোন শিশুরা নেকড়ের মতো
এইবার যদি পথে নামে -খোদার কসম -
আমি আন্না হাজারের মতো, আর একবার অনশনে
যাবো
জাতীর পিতার কন্ঠ নিয়ে, আর একবার গর্জে
উঠবো
ভাসানীর মতো ১৪৪ ধারা ভেঙে, আর একবার
নামাজে দাঁড়াবো
প্রয়োজনে; পৃথিবীর সমস্ত প্রগতিশীলদের
নিয়ে,
দেয়ালে পিঠ ঠেকা মানুষের মতো,
আর একবার -
হ্যাঁ, আর একবার , উচ্চারণ করবো ফরাসী
বিপ্লবের মন্ত্র!
.
রক্তের লাভা-স্রোতে গলতে-গলতে, ভাসতে-
ভাসতে
যারা প্রতিষ্ঠা করছে আধিকার
সাত সমদ্র তের নদী রক্ত বুকে, বাতাসে নেচে
ওঠে
যাদের পতাকা
কবির চোখে যাদের খেলে যায় রংধনু সাত রঙ
কলমের ফাঁসে-ফাঁসে যাদের ফণা তোলে লাল
গোখরো
হৃৎপিণ্ডের রক্ত শুষে যাদের বুকে দাঁড়িয়ে
থাকে শহীদ মিনার
সেখানে আদিম সভ্যতার সেই বর্বর দানবেরা
আর ক'ফোটাই বা রক্ত ঝরিয়ে, করতে পারে ঋণী?
===
.
কবি কথা যাবে বলে
.
এখানে আবার বইবে বাতাস হিমালয় থেকে এসে
এখানে মানুষ আলো মাখা মুখে এখনি দাঁড়াবে হেসে।
.
ঘাসের শরীরে রক্তের ফোঁটা ধুয়ে মুছে সব যাবে
সফেদ ঢেউয়ে বাতাসের হাত সত্যকে খুঁজে পাবে।
.
এখানে এখন বোমা-বারুদের, ফেলা হবে গাছ কেটে
ঝর্ণা কলম প্রতিবাদী স্বরে কথা বলে যাবে হেঁটে।
.
পায়ে পায়ে যত শেকলের গান বন্ধ মুখের তালা
খুলে যাবে সব কেটে যাবে রাত জুড়াবে মনের জ্বালা।
.
আধো-আধো ফুল শেফালী বকুল ফুটে রবে গাছে গাছে
ছেঁড়া-ছেঁড়া মেঘ ভেসে যাবে রথে তাকাবেনা আর পাছে!
.
রাশি রাশি পাপ চোখের আগুনে পুড়ে পুড়ে খাক হবে
ফেরেস্তা দ্বয় ঝোলানো রশিতে বিষ মেখে বসে রবে।
.
আলোর পাখি ঘরে ঘরে এসে শোনাবে মধুর বোল
কোলে শুয়ে শিশু ঘুম ঘুম চোখে বারবার খাবে দোল।
.
এখানে রাতের তারা গুলো আজ দুঃখ লুকাবে হেসে
ঘাতকের যত হাতিয়ার আছে জলে যাবে সব ভেসে।
.
মানুষের পথে বিছানো কাঁটায় হাম্বর পেটা হবে
শোষকের বুকে চোখের কোটরে ফাল-ফণী জেঁকে রবে।
.
এখানে আবার সমবেত হবে মানুষেরা দলে দলে
চন্দ্র সূর্য আকাশ কাঁপিয়ে কবি কথা যাবে বলে!
.
ছন্দ: মাত্রাবৃত্ত