সম্রাটের উত্তর বঙ্গ যাত্রা
===========
বলছি শোন এক যাত্রার কথা
এটা নয়কো গল্প কথা-
তোমরা শোন মন দিয়ে বেশ
ট্রেনটা ছিল "তিস্তা তোর্সা এক্সপ্রেস".

বলছি আমি শোন তোমরা-
এটা নয়কো ভাট
তিস্তা তোর্সা দাঁড়িয়ে তখন
প্লাটফর্ম নম্বর আট.

দৌড়ে দৌড়ে আসছে তখন
সাথে নিয়ে ব্যাগ বিরাট,
সেই ট্রেনেতে উত্তর বঙ্গ
চলেছে এই সম্রাট .

দৌড়ে দৌড়ে উঠলো সম্রাট
ঘড়িতে তখন একটা বিশ,
সম্রাট তখন বসলো চেপে
আসন নম্বর S2 তেত্রীশ.

ট্রেনের চাকা থাকল ঘুরতে
চালক দিল শিষ,
সবাই তখন উঠতে থাকে
ঘড়িতে তখন একটা চল্লিশ.

যাচ্ছি আমি ট্রেনে করে
আমার সাথে নেইকো কেও,
ভাবছি আমি এই জীবনের মতো
থাকব একা এই ট্রেনেতেও !!

তিস্তা তোর্সা চলছে ধেয়ে
চলছে সেতো খুব গতিতে-
হঠাৎ সেতো আসতে হল
ট্রেনটি থামলো নৈহাটিতে.

যখন চালক আবার শিষ দিল
একটি মেয়ের উদয় হল,
যখন সে ব্যাগ সামনে আনে
আমার পা দুটি ছিল তার আসনে.

বলল হেসে আমায় তখন
"এক্সকিউজ মি প্লিস,
আমার সিট নম্বর থারটি সিক্স"

ওওওওহ..বলে আমি সোজা হয়ে
পা দুটি নিলাম সরিয়ে,
আসনের উপর রেখে ব্যাগ
আমায় বলল "ধন্যবাদ".

ঠিক সেই সময়ে সেই খানেতে
তন্ময় নামে এক ছেলে আসে
বাক্স গুলি রেখে গুছিয়ে
বসল সেতো আমার পাশে.

বললাম আমি ছেলেটিকে
ভাই তুমি যাবে কোথা?
হাঁপাতে হাঁপাতে বলল সেতো-
"আমি ফালাকাটা".

ওওওওহ..বলে আমি আার জীগ্গেস করি
"তুমি কি করো ভাই?"
ছেলেটি নিয়ে একটা দম-
বলল-"আমি পড়ছি বি-কম".

দুই ছেলেদের মাঝখানেতে
মেয়েটি তখন বলে ওঠে,
"MSC তে পড়ছি আমি আর-
আমি যাব আলীপুর দূয়ার".

আর আপনি ??

প্রশ্নটা ছিল কার জন্য
এটা ভেবে উপরে তাকাই,
মেয়েটির প্রশ্ন আর কারোর নয়
নজরটা ছিল আমার দিকেই.

আস্তে স্বরে বলে উঠি-
"সল্টলেকে তে চাকরী করি
নিউ কোচবিহার যাব আমি
সেখানেতে থাকবে আমার গাড়ী.

তখন থেকে সেই মেয়েটি
বক্-বক্ বক্ শুরু করে-
কিচির-মিচির কিচির-মিচির
উঃফফ্ আর পারিনা-মাথা যে গেল ধরে.

মথাটা ধরে যখন আছি বসে
তখন মা এর ফোন আসে,
মাকে জানাই সব ঘটনা
মেয়েটির বক্ বক্ সব রটনা.

মা তখন হেসে বলে-
"তুমিও কথা বলো ওদের সাথে-
কথা বলা নয়কো খারাপ
জানা যায় মানুষের মনের ভাব.

তখন ঢুকল আমার ঘটে
মায়ের কথাটা সত্যি বটে,
ব্যন্ডেলেতে গাড়ী দাঁরিয়ে
এক বুড়ো বুড়ি সেথায় জোটে.

শুরু হলো আড্ডা সবার
মেয়েটিকে বলি "নাম কি তোমার ?"
মেয়েটি তখন খুব হাসিয়া
বলে "শ্রদ্ধা ভট্টাচারিয়া.

"আমার বাবা আলীপুরের
এক নাম করা ব্যবসায়ী
আমি বাবার একটাই মেয়ে-
কল্যানীতে পড়তাম গিয়ে-

দশ দিন আমি ছুটি পেয়ে
যচ্ছি আমি নেচে গেয়ে,
আনন্দেতে গিয়ে বাড়ী
মনটা হবে খুশীতে ভারি."

ভাবছি আমি বোকার মতো
একটা প্রশ্নের উত্তর এতো !!
জানতাম যদি আগে এটা-
ধুত্-তেরী..করতাম না এই প্রশ্নটা.

তারপরে মেয়েটি উঠে
বসল এসে আমার গাঁ ঘেষে,
রেগে আমার মাথায় ওঠে রক্ত
জানিয়ে দিলাম-আমি হচ্ছি বিরক্ত.

মেয়েটি বলে "সরি সরি-
দুলছে অনেক ট্রেনটা ভারি.
মনে মনে বলি "সোজা হয়ে বোস,
এটা তোর নয়-তোর বয়সের দোয".

হঠাৎ মেয়েটি ঘ্যাম দেখিয়ে
তার ল্যাপটপ টি বেরটি করে,
আমার দিকে মুখটি ঘুরিয়ে
কি-প্যাড টা টিপতে থাকে.

ভাবছে সেতো "এই ছেলেটা
দেখেনি কখনো এই যন্ত্রটা,
যন্ত্রটা ঘুরিয়ে আমার দিকে
কত কিছু করতে থাকে..

হঠাৎ তার মনে প্রশ্ন জাগে
ছেলেটি কি করে জানি আগে,
"আপনার কাজটা কি? বলে বের করে জিভ
আমি বললাম "আই টি এক্জেকিউটিভ".

আমার কথা শুনে ধপাস করে
ল্যাপটপ টি বন্ধ করে,
চুপটি করে ব্যাগটি খুলে
ল্যাপটপটি ঢুকিয়ে রাখে.

কান্ড দেখে সেই বুড়োটা
হঠাৎ দেখি উঠলো হেসে,
বুড়ি বলে-"বড্ড জালায় এই বুড়োটা
হাসছো কেন ওদের দেখে?"

বুড়ি তখন বলতে থাকে
তোমরা ব্যাঙ্গ করোনা আর
মেয়েটি কথা বেশী বলে
তবে তার মনটা পরিস্কার.

ভাবি আমি বুড়ির কথা
হয়তো বলেছেন ঠিক সেটা,
মন পরিস্কার বলেই কিনা
এতো কথা বলছে মেয়েটা.

আহার করে শুয়ে পরি-
ডালখোলা তে দাঁড়িয়ে গাড়ী,
শ্টেশন মাস্টার বলতে থাকে
আর চলবে না এই গাড়ী..

ট্রেনের তার ছিড়ে গেছে
মালগাড়ীতে সেটা জড়ীয়ে গেছে,
খাবার নেই, চা নেই, সবার খালি পেট
উঃফ্..আর পারিনা-ট্রেন ছয় ঘন্টা লেট..

অবশেষে বের করি-মায়ের দেওয়া চিরে
সবাই দেখি আছে চেয়ে-সেই চিরে টাকে ঘিরে,
বুড়ো,বুড়ি আর তন্ময়কে-একটু দিলাম খেতে
হঠাৎ এল মুখের সামনে-মেয়েটি হাত পেতে.

তাকেও দিলাম,নিজেও করলাম চিরে আহার
অবশেষে ট্রেন এল "নিউ কোচবিহার".
লেখা এবার বন্ধ করি-গাড়ী দাঁড়ীয়ে আমার
নইলে এবার তোমরা সবাই-দেবে যে আমায় মার...