ফাগুনের আকাশ আজও একই রকম নীল,
তবু কোথায় যেন একটুকু ধূসরতা লেগে আছে।
হয়তো সেই রক্তের দাগ,
যা ধুয়ে দিলেও মুছে যায় না,
যা ইতিহাসের পাতায় নয়—
আমাদের বুকের গভীরে খোদাই করা চিহ্ন!

এই একুশে ফাগুনের কথা মনে পড়ে,
যখন রাজপথে ফুটেছিল রক্তজবা,
যখন কণ্ঠ রোধ করেছিল নিষ্ঠুর শাসক,
আর বুক চিরে বেরিয়ে এসেছিল শব্দ—
বাংলা আমার অধিকার, আমি বাংলা মায়ের সন্তান।

সেই সকালে, কতগুলো তরুণ
মৃত্যুকে বুক পেতে বলেছিল— এসো!
শুধু একটি ভাষার দাবিতে,
শুধু একটি মায়ের মুখের ভাষা বাঁচাতে।
তারা জানত, গুলি আসবে,
তারা জানত, পা পিছলে রক্তে ভিজবে পথ,
তবু থামেনি, ফিরে যায়নি,
যেন বাংলার দামাল ছেলেরা নিয়েছে মুক্তির শপথ!


আজ, শহীদ মিনারের বেদিতে ফুল রেখে ফিরে আসি,
ভুলে যাই কি সেই প্রতিজ্ঞা?
আমাদের শব্দগুলো কি এখনো মুক্ত?
আমাদের ভাষা কি এখনো সেই আগুনের মতো জ্বলন্ত?
নাকি আমরা রঙিন ব্যানারে শোকের ভাষাকে
উৎসবের মতো সাজিয়ে তুলেছি?

ভাষা কি শুধু শব্দের উচ্চারণ?
না কি সে বয়ে আনে আত্মার পরিচয়,
সময়ের গর্ভে জন্ম নেওয়া এক সত্তা,
যার বিনিময়ে রক্ত দিতে হয়?

একুশ আসে, একুশ যায়,
আমরা কিছুক্ষণ থমকে দাঁড়াই,
তারপর আবার ব্যস্ত হয়ে পড়ি,
ভুলে যাই ভাষার দায়,
ভুলে যাই সেই তরুণদের চোখের ভাষা।

আজ আমরা বাংলা বলি,
কিন্তু সেই রক্তের ঋণ কি শোধ হয়েছে?
আমরা কি সত্যি বাংলা বাঁচিয়েছি?
শুধু ভাষার অস্তিত্ব থাকলেই হয় না,
তার মর্যাদাও দিতে হয়,
তার প্রতি ভালোবাসাও রাখতে হয়,
নইলে শহীদেরা কাঁদবে,
ফাগুনের বাতাসে ভেসে আসবে তাদের দীর্ঘশ্বাস।

একুশ শুধু শোক নয়,
একুশ আমাদের অহংকার,
একুশ আমাদের পথ চলার আলো,
যে আলোর শপথে বলি—
বাংলা ভাষা, তুমি থাকো চিরঞ্জীব,
এই মাটির হৃদয়ে, এই মানুষের প্রাণে!