আমার নাম সঞ্চিতা।
শুনে ছিলাম অনেক পরে,
বাবা আদর করে,
এই নাম রেখেছিল আমারে।

মা আদর করে বলে কুসুম
কুসুম এর ন্যায় ছিলামও আমি।
মা-বাবার কাছে একটু হলেও
ছিলাম অনেক দামি।

অসীম মমতায় ও ভালবাসায়
কুসুম আমি বড় থেকে বড় তর।
প্রশ্ন জাগত মা-বাবার প্রতি,
কেন এত ভালবাসা জড় করো ?

প্রকৃতি আমার ভালো লাগে,
সবুজাভ বৃক্ষ ,মুক্ত দিগন্ত প্রাণ,
ভাল লাগে প্রভাত বেলা
মুক্ত দিগন্ত বায়ু দান ।

আজ আমি স্কুল গণ্ডি পার।
মা-বাবার ভালবাসা তেমনি আছে।
এত টুকু কমেনি যে,
দুঃখ করি পাছে ।

দুঃখ হয় আর পাঁচ জনের প্রতি।
বড় হবার সাথে পরিবর্তন তাদের চাহনি।
শহরের গলি, রকে বসা প্রাণ,
আর যত আছে ছাউনি।

কি নিষ্ঠুর সে দৃষ্টি,
প্রতি নিয়ত কি যেন চায়,
এ কুসুমের মনে সদা,
ত্রাস সৃষ্টি করে যায় ।

প্রকৃতির বরে আমি নারী।
তা বলে ত্রাস সঞ্চার করবে তারা,
পুরুষত্ব আছে বলে,
ভদ্র সভ্য রূপ নিয়ে যারা ?

মা-বাবার প্রাণ আমি।
নেই আমার কোন দ্বিতীয় ভাই বোন।
তাই মা-বাবার কাছে
একটু বেশি হীরক তুল্য ধন ।

প্রতিনিয়ত স্বপ্ন দেখে তারা,
সঞ্চিতা বড় হবে অনেক বড়,
ঘোচাবে এ অভাবী সংসার,
করবে অনেক সম্মান জড়ো ।

এখন আমি তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী,
গুটি গুটি পায়ে স্বপ্ন কে সার্থক করতে
প্রায় পৌঁছে গেছি
বাবা-মায়ের স্বপ্ন কে ধরতে ।

এ কর্ম হীনতায় পেয়েছি এক চাকরি
স্বল্প বেতন তবুও কাটবে হেসে খেলে,
মা-বাবা তাই বাঁধন ছাড়া
আনন্দ আমার প্রতি ধরে মেলে ।

পূর্ণ যুবতীর সন্ধিক্ষণে
ইদানিং ত্রাস টা বেড়েছে অনেকটা
বেড়েছে রকে বসা প্রাণ গুলির
নোংরা কালো চাহনি টা ।

আজ মাসের শেষ,
বেতন নিয়ে ফিরছি তাড়াতাড়ি
পথে মা-বাবার জন্য নেব
সাড়ি, জামা তারপর ফিরব বাড়ি ।

মা-বাবা কে বলে এসেছি
আজ মাসের শেষ দিন।
তোমাদের জন্য কেনা কাটা করব,
জেগে থেকো ঘুম হীন ।

আনন্দে মায়ের চোখে এসেছিল জল
আয় বাছা বলে,
জড়িয়ে ধরে বুকে
সমস্ত দুঃখ গিয়েছিল ভুলে ।

রাতটা একটু বেশি হয়েগেছে
এ দোকান সে দোকান করে,
নিয়েছি অনেক জামা কাপড়
দুই হাতে প্যাকেট ভরে ।

ত্রাস টা আজ যেন অনেক বেড়েছে
সেই রকে বসা হিংস্র প্রাণ
বাড়ি মুখে গলি পথে
আমি একা নারী চলমান ।

কূঢ় হাঁসি ক্ষুধার্ত চোখ,
পথ আটকে দেয় তারা।
সেই রকে বসা হিংস্র প্রাণ
ক্ষুধার্ত ছিল যারা ।

দানবীয় হাসি মুখ ভরা
হঠাৎ ঝাঁপিয়ে পড়ে আমার উপর।
কি  অভিলাষ, কি নৃশংস
কি ভয়ানক এ কালো ভ্রমর ।

শত চেষ্টায় মুক্ত করতে ব্যর্থ
অত্যাচার এ শরীর ঘিরে।
সব স্বপ্ন হারিয়ে যায়,
অভেদ্য অন্ধকার ভিড়ে ।

আমি এখন চির মুক্ত,
মুক্ত আমি পৃথিবীতে শত জ্বালা রেখে।
আমার উন্মুক্ত দেহটি রয়েছে পড়ে
মা-বাবার স্বপ্ন মেখে ।

নিশ্চিত মা-বাবা এখনো অপেক্ষায় রত
ক্ষমা করো আমাকে।
প্রথম বেতনের ক্ষুদ্র উপহার
দিতে ব্যর্থ তোমাদেরকে।
    ------<>------
                                                      



//রচনা: ২ আগস্ট ২০১৬
পুনঃ রূপ: ২৫ নভেম্বর ২০২৩//