কবিতা কি? কবি কে? প্রশ্নটা আজকের নয়। বোধহয় কবির জন্মের - কবিতার সৃষ্টিরও আগে। কবিতা মানে ছন্দ না ছন্দহীন, গদ্য না পদ্য ইত্যাদি ইত্যাদি।
আলোচনা হয়েছে কবিতার পরিমাণ কতটা হবে তা নিয়েও। মানে সে এক পাতা না এক লাইন না এক শব্দের? না বিনা শব্দের? আলোচনা হয়েছে এইসব বিষয়ে।
আমার বক্তব্য কবিতার রসায়ন কি? অর্থাৎ একজনের মধ্যে কি গুণ থাকলে তিনি কবিতা লিখতে পারবেন?
মতটি একদম নিজস্ব।
কাল্পনিক এক সাধারণ ব্যক্তি আর এক কবির সংলাপের গল্প শুনিয়ে আলোচনাটি শেষ করবো।
আবারও বলছি গল্পটির চরিত্র দুটি একদম মনগড়া।
গল্পটি-
কবিতা লিখবো বলে দামী কলম আনালুম। আনলুম সুন্দর খাতা। বিলিতি সুগন্ধিতে সুরভিত করলুম শরীরটাকে। মেজাজটা হল ফুরফুরে। ইজি চেয়ারে বসে লিখতে লাগলুম পাতার পর পাতা। নিজের লেখা নিজেই পাঠ করতে গিয়ে রাগে ফেললুম ছিঁড়ে।গেলুম কবির কাছে- “কবি, কেমন করে লেখো তুমি কবিতা? বলবে, তোমার কবিতার রসায়নটা”?
-“তুমি কি কাউকে ভালোবাসো”?
-“হ্যাঁ তার নাম সুরঞ্জনা”।
-“কেন ভালোবাসো তাকে? সে কি খুব সুন্দরী”?
-“ বলতে পারবো না কবি, আমি তাকে কেন ভালবাসি। তবে সুন্দরী নয় সে মোটেই। আর পাঁচটা গড়পড়তার মতোই। তবে আমার সঙ্গে কথা বলতে বলতে আনমনে যখন সে এলোচুলের রাশি দুহাত দিয়ে খোঁপা করে আলগোছে- একটা মিষ্টি সুবাস পাই- যা আর কোত্থাও পাইনি কক্ষনো। নদীর পাড় ধরে হাঁটতে হাঁটতে পাগলের মতো সে বলে ওঠে হঠাৎ - দুজনে যদি পাখি হতুম – তবে উড়তে উড়তে এক্ষুনি মাঝ নদীতে। কি যে ভালো লাগে তখন!
ভালোলাগাটা থাকে না বেশীক্ষণ। বিনা কারণে আঘাত দেয় সে যখন তখন। যন্ত্রণাটা বুঝেও সে মুখ ঘুরিয়ে নেয় অন্যদিকে। কষ্টটা বুকে চেপে বসে পাহাড়ের মতন। পাহাড়ের চুড়োয় জমাট বরফ যেমন আটকে থাকে দমবন্ধ করে- আমার কষ্টটাও তেমন শ্বাসটাকে আটকে দেয় বারবার। সেই জমাট বরফটাকে মুক্তি দিতে চাই-কবি। চাই সেই বরফ গলে ঝর্ণাধারা হয়ে গড়িয়ে পড়ুক পাহাড়ের বুক বেয়ে নদী হয়ে”।
-“এবার বুঝি আমার কবিতাগুলো ছিঁড়ে ফেলার পালা এলো।
তোমার মতো এমন উজাড় করে যে ভালবাসতে পারে- ভালবাসার ক্ষতটাকে সইতে পারে – শোনাতে পারে এমন উদাস করে - তার কবি হওয়া ঠেকায় কে?
লেখো তুমি- মন যা চায়। শুভেচ্ছা রইলো - আগামীর উজ্জ্বলতম কবির জন্য”।