অনুরোধ
কবি- মৌটুসি মিত্র গুহ (কেতকী)
বিভিন্ন আর্থ-সামাজিক কারনে নারী পুরুষের আনুপাতিক হার ক্রমশ কমে যাচ্ছে। পরিসংখ্যান দিয়ে বা কারণগুলো বলে আলোচনাটাকে দীর্ঘায়িত করতে চাই না।
বোধ হয় একটু ভুল বলা হল, হারটাকে কমানোর সর্বতোভাবে চেষ্টা চলেছে। নিরন্তর-অক্লান্ত-ধারাবাহিক সে প্রচেষ্টা। নারী বধের রাজসূয় যজ্ঞ অশ্বমেধের ঘোড়াকেও হার মানিয়ে দিচ্ছে। বলি হচ্ছে প্রতিনিয়ত... কোথাও প্রকাশ্যে কোথাও বা অপ্রকাশিত সে ঘটনা।
এমনই এক হৃদয় বিদারক ঘটনাটিকে মূল উপজীব্য করে অসামান্য মুনশিয়ানায় আমাদের আসরে তাঁর কবিতাটিকে নিবেদন করেছেন আমাদের সবার প্রিয় কবি মৌটুসি মিত্র গুহ (কেতকী)।
মাতৃ জঠরে এক কন্যাভ্রূণের করুণ আর্তি তার আসন্ন জন্মদাত্রীর প্রতি। কথোপকথন নাড়া দেয় মনে। ভাবায়,বিচলিত করে; মুহ্যমান হয়ে পড়ি এই ভেবে যে, সামাজিক অবস্থা কোথায় পৌঁছালে জন্মদাত্রী মা ও পরশুরামের কুঠার নিয়ে নিঃক্ষত্রিয় করার মানসে উদ্যত হয়ে পড়েন নিজ কন্যা সন্তানটির প্রতি প্রবল জিঘাংসায়!
“আমারও যে সাধ বড়ো -
নয়ন মেলে প্রাণ ভরে দেখব
আলোয় মোড়া সাধের জগতটাকে,”
বড়ো করুণ সুরে কেঁদে ওঠে সেই মহাপ্রাণ। বলে মা, আমারও যে সাধ জাগে- চেখে দেখার বড়ো ইচ্ছে এই পৃথিবীর আলো হাওয়া।
তবুও কন্যা ভ্রূণ হওয়ার অপরাধে আমায় মারিসই যদি, তবে তিলে তিলে নয়, একেবারেই মেরে দিস। কত যন্ত্রণায়- কি অমানবিক অবস্থায় এমন কথা হৃদয়ের অন্তস্থল থেকে উঠে আসে!
তবু, আরও একবার; হয়তো শেষবারের মতো অনুরোধঃ
“ওদের বলে লাভ নেই জানি
তাই তোকেই বলি মা -
অনুভবের শেষ সীমায় দাঁড়িয়ে
আর একটিবার আমার ছুঁয়ে দেখ না মা...
হয়তো বা অনুভবে আছি
আমি আর আমার ব্যথা!”
না কোন দয়া ভিক্ষা নয়, যদি কোন দিন আমার জন্যে ভালোবাসা জাগরিত হয় তবেই, আমায় গ্রহণ করিস। এক ইচ্ছাপূরণের স্বপ্নে শেষ হয় আশ্চর্য সুন্দর কবিতাটি।
কবিতা হিসেবে বড়ো নান্দনিক প্রকাশ। আর, বিষয় হিসেবে অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। মানবিক আবেদনে অনন্য।
কবিরও একটা সামাজিক দায়বোধ থাকে- বলা বাহুল্য, অত্যন্ত সাবলীল ভাবে কবি এই কাজটি সুসম্পন্ন করেছেন।
শুধু ধন্যবাদ দেব না আন্তরিক অভিনন্দন জানাই প্রিয় কবিকে।
ভালো থাকুন।
আন্তরিক শুভকামনা রইল।