নেই মিছিল
- আর্যতীর্থ


"কজন শোনে গান দ্বিজেনের?
পাঠক কি পান নীরেন্দ্রনাথ?
ছবি দেখে মৃণাল সেনের,
শেষ কবে কার নির্ঘুমী রাত?"

আসরের প্রিয় কবি আর্যতীর্থ সঙ্গত প্রশ্নে বিদ্ধ করেছেন চেতনায়। তাঁর  কবিতা “নেই মিছিল”-এর মাধ্যমে-    

  মহামূল্যবান রত্ন সবার কপালে জোটে না। আর আমরা!এমনই হতভাগ্য যে পেয়েও, সযত্নে সিন্দুকে তুলে রেখে দিয়েছি শুধু!  

“ফিসফিসিয়ে মৃত্যু বলে
সিন্দুকে কি রত্ন রাখা,
হয়তো এবার কৌতুহলে
প্রজন্ম তার খুলবে ঢাকা।”

  সিন্দুক থেকে দুষ্প্রাপ্য রত্নটি খোয়া গেছে যে! তাই খোঁজ পড়েছে আজ! বহু কষ্টে যখন পাওয়া যায় আবার সেই রত্ন, তখন উল্টে পাল্টে দেখতে ইচ্ছে করে। নিবিষ্ট মনে দেখতে থাকি আজ, তার চোখ  ঝলসানো  হীরকদ্যুতি। নতুন করে আবিষ্কার করি সেই হারানো সম্পদটিকে-    

“ওই তো কিশোর হঠাৎ করে
দ্বিজেন শোনে ইউটিউবে,
ওই তো যুবক শীতের ভোরে
নীরেন্দ্রতে যাচ্ছে ডুবে।

ওই তো মেয়েটা খুঁজেপেতে
মৃণাল সেনের দেখছে ছবি
ছিলো যারা অলক্ষ্যেতে
মৃত্যু করে স্পষ্ট সবই।”

এমনটাই হয়! জীবদ্দশায়, অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়ে থাকে লোকচক্ষুর অন্তরালে-

  বিষয়টিতে, দুটো গুরুত্বপূর্ণ দিকের উল্লেখ করেছেন কবি। প্রথমটি সম্ভাবনার। পরে হলেও, আমরা তাঁদের  স্মরণ করছি, চর্চা করছি, এটা যথেষ্ট আলোর দিক, যথেষ্ট আশার-  

আর  অন্য পিঠে!  নির্মম বাস্তবতায় মোড়া বড়ো করুণ-  
  
“তবুও এক বিষণ্ণতা
সত্য দাগায় মোটা দাগে,
দেখতে ফিরে অতীতকথা,
এখন তাঁদের মৃত্যু লাগে।”  

    কবিতার সমাপনটি তাই, বারবার... প্রশ্নে প্রশ্নে... বিদ্ধ করে চলে সারাক্ষণ ধরে। বিষণ্ণ করে তোলে এই   বলে যে শুধু,  নির্মম মৃত্যুর বদলেই কি আমরা ফিরে যাবো এমন করে, তাঁদের অতীতচারণায়! শুধু মৃত্যু পরবর্তীতেই, কি তাঁরা এমন করে প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠবেন কেবলমাত্র!          

  কবিকে আন্তরিক শুভকামনা জানাই, চেতনায় ঘা দেওয়া এমন সুন্দর একটা কবিতা, কবিতার আসরে  উপহার দেওয়ার  জন্য।  
ভালো থাকবেন প্রিয় কবি।
আন্তরিক অভিনন্দন।