যত সব তুচ্ছ কবিতা
কবি- শ্রদ্ধেয় প্রনব মজুমদার
জীবন মূল্যবান। সময় অমূল্য। তুচ্ছ, মূল্যহীন কথার জায়গা কোথায়! বাজে কথায় সময়ের অপচয়ে জীবনটাই নষ্ট!
তবু, মনটা খচখচ করে ওঠে। মূল্যায়নের ভুলে, ফেলে আসা পথে, ফেলে আসিনি তো মূল্যবান কিছু? ফেলে আসা জীবনে, নুড়ি ভেবে হাতে পেয়েও, কোনো অমূল্য রতনকে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে আসিনি তো!
শ্রদ্ধেয় কবি প্রনব মজুমদার নিজের কবিতারই নামকরণ করেছেন, “যত সব তুচ্ছ কবিতা।” আপাতভাবে মিলে যায় তাঁর কথা। তবে, ভুলটা ভেঙে যায় কবিতা পাঠে।
একেবারে সাদামাটা আটপৌরে আঙ্গিকে একে একে ছুঁয়ে গেছেন তিনি প্রেম, বিরহ, সৌন্দর্যবোধ ও জীবনসংগ্রামের মতো জীবনের অপরিহার্য সমস্ত বিষয়গুলিকে। অবশ্য কবিতা একটি নয়, দুটি নয়, পাঁচ-পাঁচটি শক্তিশালী অণুকবিতায়, পঞ্চপাণ্ডবের সম্মিলিত শক্তিকে সংগঠিত করেছেন তিনি, একত্রে।
কবিতাটির ভাষা এতটাই সহজ, বুঝতে অসুবিধা হয় না কারো। তবে, সরল নয় মোটেই। ভাবনার গভীরতা, ভাবায়। বোধে সমৃদ্ধ হই। বিশ্লেষণের উদ্দেশ্য নিয়ে নয়, শুধু চিন্তার অনুরণন থেকে বলে যেতে ইচ্ছে করলো। আর তাই, এই বলতে চাওয়া-
কবির ভাষায় প্রথম কবিতায়...
“শ্রাবণ মানে সৃষ্টি
আহা! ভিজে শাড়িতে পাড়ার পারুল
কে জানতো এত মিষ্টি......”
শ্রাবণের বৃষ্টি যেন নাচতে নাচতে ছমছম করে চলে পাড়ার পারুলের সঙ্গে সঙ্গে...। প্রেমের ম্যাজিক তৈরি করে দিলেন চিরনবীন কবি, মাত্র কয়েকটি শব্দের আঁচড়ে।
শুধু, প্রেম নয়, বিরহ জায়গা করে নিল চিরযুবা কবি কলমে জেনারেশন নেক্সটের ভাষায়, “ব্রেক আপে”-
“ প্রেমিকা এলো
একটা চুমু দিয়ে বললো
এই নাও উত্তাপ
যাবার সময়
হৃত্পিন্ড ছিঁড়ে নিয়ে বললো
সাথে ফাউ
দীর্ঘ সন্তাপ......”
শুধু সৌন্দর্য সৃষ্টি নয়, প্রেম-বিরহের বিলাসিতা নয়, কঠোর জীবন সংগ্রামও উঠে আসে তাঁর সংগ্রামী চেতনায়...
“গীতবিতান খুলি
গানগুলো উড়ে যায়
যেতে যেতে বলে
গান নয়
এখন লড়াই এর সময়......”
ফুল দিয়ে সাজানো “ফুলের ফুল্লরা”-য় ফুল দিয়ে গেঁথেছেন কবি, জীবনের অর্ঘ্য, ভালোবাসার প্রকাশ, বিদায়বেলার যাত্রাপথ...
আবার, কখনো চিরন্তন সনাতন... গভীর জীবন বোধ। জীবন তো একবারই। যা পেলাম, তা এখান থেকেই। রেখে গেলাম, যা পেয়েছিলাম সবটুকুই..
“চিতায় জল ঢেলে
কলসী ভেঙে ফেলে
চলে যায়
পিছনে না ফিরে
জীবন এগিয়ে যায় সজোরে
যেতে যেতে লিখে যায়
পেছনে থাকলো পড়ে
" লষ্ট ফর এভার"......”
ভরে গেলো মন। মূল্যায়ন করার সাধ্য কোথায় এমন অমূল্য কথাগুলির! তুচ্ছ নয়, মামুলি নয়, মূল্যবান এই কথাগুলিকে কুড়িয়ে কুড়িয়ে তুলে রেখে দিলাম তাই, মনের মণিকোঠায়... পথ চলতে কাজে লাগবে বলে...
সাতশো পঞ্চাশ কবিতার নির্মাণকারী প্রিয় কবিকে জানাই আন্তরিক অভিনন্দন। অচিরেই তিনি হাজারতম কবিতার রচয়িতা হোন, এই প্রার্থনা করি।
ভালো থাকবেন শ্রদ্ধেয়।