‘ফরমালিন’ পচন রোধকারী। মৃত সবকিছুই ফরমালিনে চুবিয়ে রাখলে দিনের পর দিন অবিকল, একইরকম থাকে। বাইরে থেকে দেখে বোঝার উপায় থাকে না জীবটা ঘুমিয়ে আছে? না মরে গেছে বহুকাল আগে?
মানুষ হয় বাঁচে, নয় মরে। মাঝামাঝি তো হয় না। হয় তো! কতজন যে জেগে ঘুমিয়ে থাকে আজীবন। তারা বাঁচার দলেও না। মরেছে, তাই বা বলি কি করে?
একটা কবিতা পড়লাম এইমাত্র - “ঘুম ভাঙার গান” কবি, জসীম উদ্দীন মুহম্মদ (বোদ্ধা কবি)।
কবি প্রশ্ন রেখেছেন বেশ কয়েকটা। প্রথমটা হল-
“আকাশ থেকে পতনের পর আমি এখন কোথায়?”
উত্তর দিয়েছেন তিনিই। তাঁর কথাতেই পাই-
“প্রতাপশালী সূর্য ডোবার পর.. যেখানে দিন যায়.....”
সূর্য ডোবার পর তো অন্ধকার। তবে, “আমিও কি আছি তেমনি কোনো জন্মান্ধ কোঠায়?”
পদে পদে অসমতা-বৈষম্য-অরাজকতা। অন্যায়-লাঞ্চনা-শোষণ। সব কিছু দেখেও, সব কিছু শুনেও চোখ বুজে থাকি। মুখ বন্ধ করে রাখি।
ব্যক্তিগত জীবনও আমার যত্নহীন, ভালোবাসাহীন। সবাই কেমন স্বার্থকেন্দ্রিক! নিজের স্বার্থ আর সুখটাই কেবল খুঁজে বেড়াচ্ছে সবাই। অন্যের জন্যে দরদ নেই এতটুকুও!
সমাজ থেকে, ব্যক্তিগত জীবন থেকে, যখন আর কিছুর প্রত্যাশার আশা থাকে না তখন কবি দৃষ্টি নিক্ষেপ করেন আশার শেষ ভরসাস্থল, সংবেদনশীল কবিদের কাছে। কিন্তু হায়!
“আজকাল কবিরাও সবার মতোন
সবাই যা দেখে কবিরাও তাই দেখে নয়নে... নয়ন!”
সেখানেও নিরাশা। সেখানেও, দেখে না দেখার ভান। বুঝেও না বোঝার। কবিরাও প্রতিবাদহীন, সাধারণ আর পাঁচজনের মতো।
আর তাই শেষ প্রশ্নে শেষ করেন তাঁর জিজ্ঞাসা-
“তবে কি আর কোনো সম্ভবনা নেই ডাঙার ঘুম ভাঙার?
জেগে জেগে যে ঘুমায় সে কুম্ভকর্ণ নয় কোনোদিন,
আমি ভাবি অন্যকৃত.....
কবিরাও কি আজকাল ফরমালিন?”
একটু বোধ হয় ভুল বলেছিলাম, একটা কবিতা নয় একটা গান শুনেছিলাম, ঘুম ভাঙানিয়া সে গান – অবচেতনে চেতনা প্রবাহ জাগানোর প্রচেষ্টায়। অবক্ষয় থেকে, ভালোবাসাহীনতা থেকে, বাঁচার একটা শেষ উপায় খোঁজার চেষ্টায়...
অসাধারণ, অপূর্ব এক উপস্থাপনায় মুগ্ধ করলেন প্রিয় কবি।
এমন একটি সুন্দর কবিতাটির জন্য প্রিয় কবিকে জানাই আন্তরিক ভালোবাসা ও অভিনন্দন।