একপশলা বৃষ্টি
প্রিয় কবি-রক্তিম

    কতটা পুরনো হলে তবে কেউ নতুন হবার ইচ্ছা প্রকাশ করে! কতটা জীর্ণ হলে তবেই এমন আকুতি আসে সারা শরীর জুড়ে! অথচ এমনটা তো হওয়ার ছিল না! অকাল বার্ধক্য আজ যার শরীরের শিরায় শিরায়, তার কিন্তু এখন যৌবনবতী থাকার বয়স! কিন্তু হায়! তোমরাই তো আজ তার শরীর  খুবলে খুবলে রসহীন নিষ্ফলা বন্ধ্যায় পরিণত করেছ! আর তাই তো তাকে বলতে হয়-

                    “একপশলা বৃষ্টি দেবে; নতুন হবো !”

  প্রিয় কবি রক্তিম রচনা করেছেন আশ্চর্য সুন্দর এক কাব্য। পরিবেশ কে আধার করে। আর একটু নির্দিষ্ট করে বললে বলতে হয় মাটিকে কেন্দ্র করে। বলা বাহুল্য, মাটির শরীরকে আঁকড়ে ধরেই পরিবেশের আর সব কিছু। আর, কবি মাটির কথাই বলেছেন প্রাণের রঙ মিশিয়ে। সে রঙ বড়ো  বেদনার-বড়ো যন্ত্রণার।

                “কতদিন ধরে বন্ধ্যা, বদনাম ঘোচাবো।”

সভ্যতার লোমশ হাত যত প্রসারিত হচ্ছে ততই সবুজ সঙ্কুচিত হয়ে পড়ছে। প্রতিনিয়ত কালো পিচে ঢাকা  পড়ে যাচ্ছে সবুজের শ্যামলিমা। তবু আজও তার শরীর ও মন  চায় -
    
                “বৃষ্টিধারার স্নানে ঘুমন্ত বীজ জাগে  
                 মুকুলিত পত্রে সেকি রোমাঞ্চ লাগে।”
  
আজও তার ইচ্ছা জাগে তার রক্তাল্পতায় ভোগা শীর্ণ জলধারায় “এক পশলা বৃষ্টি।” বৃষ্টির জলে পুষ্ট হয়ে বেগবতী করতে চায় “কুণ্ঠিত তরঙ্গিণীকে।”

                “অফুরান সে তরঙ্গরাশি দাও বক্ষে পুরে  
                তাই বয়ে নিয়ে যাব গ্রাম নগর প্রান্তরে।”    

  রক্তক্ষরণ হলেও, শরীরকে সংক্রমণের হাত থেকে বাঁচাতে অস্ত্রোপচার করতেই হয়। তারপর নতুন কোষের উৎপাদনে আবার নতুন করে গড়ে ওঠে পুরনো শরীরটা। তেমন করেই এতদিনের সভ্যতাকে ভেঙে গুঁড়িয়ে আবার নতুন পৃথিবী গড়ে তোলার আহ্বানে শেষ হয় কবিতাটি। আর, শুরু হয় চেতনায় নতুন ভাবনা-    

                “রক্তক্ষরণে জেগে উঠবেই নবচেতনা।”

     কবিতাটা পড়তে এত ভালো লাগে যে আমি নিশ্চিত কোনো পাঠক একবার পড়ে ছাড়তে পারবেন না। শব্দ, ছন্দ আর ভাবের মধুরতায় সম্পূর্ণ রঙিন এক কবিতা।  
  প্রিয় কবি রক্তিমকে জানাই  আন্তরিক অভিনন্দন এমন সুন্দর একটা কবিতা কবিতার আসরে উপহার  দেওয়ার জন্য।