অগোছালোই থাকে আমার ঘর দোর যখন আমি একা থাকি। আর, যখন অন্য কারো আসার সময় হয়, তখন ব্যস্ত হয়ে পড়ি নিজের অবিন্যাসকে বিন্যস্ত করতে। আসলে, গোছানো একটা প্রক্রিয়া, যেটা আর কারোর ভালোলাগানোর জন্যেই গড়ে তোলা। যেটা নিজের ভালোলাগার তাগিদ থেকে বেরিয়ে আসে তাকে দেখানোর ইচ্ছা নিয়ে। তবু, এই গোছানটাই হয়ে ওঠে না এক সময়। ক্লান্তি আর একঘেয়েমি ভিড় করে আসে- সে আসে না বলে।
“সে-ও আসেনা অনেকদিন, ব্যস্ত বোধ হয়!
আমার অনুভবে একটা শূন্যতা যেন...”
এমন করে পড়ে থাকতে থাকতে একটু একটু করে গড়ে তোলা সুন্দর বাগানও একদিন-
“অবহেলায় ঝরে পড়ল বিবর্ণ ফুল...
খাঁ খাঁ করতে লাগল বাগান, উঠোন, কবিতার বারান্দা।”
জীবন এমনই। কারো তারিফ, কারো ভালোলাগায় সঞ্জীবিত হয়ে ফুল দেয়, দেয় আলো। যেমন করে একটা ভালোলাগার জন্ম হয়েছিল তার সঙ্গে- যে, বাস করত "কবিতা-বাড়ির" কয়েক পল দূরত্বে।
“একটা সখ্যতা গড়ে উঠেছিল ক্রমে...
সে তারিফ করতো আমার বাড়ির, বাগানের, কলমের ফুল গাছের।”
একটা ভুল হয়ে গেছে, এতক্ষন পাঠককে বলা হয়ে ওঠে নি আমার!
এতক্ষণ বলে চলছিলাম আমার অন্যতম প্রিয় কবি পারমিতা ৫৮(অনুরাধা)-র “একদিন বারান্দায়” কবিতার কথা।
একটা অত্যন্ত সুন্দর কবিতায় কবি গুছিয়ে দিয়েছেন কিছু শব্দ, বা এলোমেলো অবিন্যাসে বিন্যস্ত করে দিয়েছেন তাঁর সুগ্রথিত ভাবনাকে। আর, আবিষ্ট হয়ে পাঠ করে গেছি আমরা। অসাধারণ এক বোধ কাজ করে চলেছে অনেকক্ষণ ধরে।
কয়েকটি শব্দ বড় নাড়া দিয়েছে মনকে।
“আমার কবিতা-বাড়ির পথের আড়ে”।– এখানে “আড়ে” শব্দের ব্যবহার বড় মধুরতা দান করেছে। সে যেন আমার পথে, আমার কবিতার পথের মাঝে চলার প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। অথবা, আমার নজর কাড়বার জন্যেই তার ওই অবস্থান। সে দূর থেকে দেখেছে। তবে, আসেনি অন্দরে। যখন সে বুঝতে পারলো আমার এই সব সাজানো গোছানো আসলে তাকে উদ্দেশ্য করেই, তার ভালোলাগানোর জন্যেই কেবল। সে ছাড়া আমার এই সৌন্দর্য অর্থহীন। সে না চাইলে আমি নির্দয় ভাবে উপড়ে ফেলে দিতে পারি আমার এত দিনের সাজসজ্জা। তখন সে আর থাকতে পারলো না- সব সঙ্কোচ ত্যাগ করে আমার অন্দরে এলো প্রভাতের তেজোময় সূর্যের আলোর মত।
“এবার শব্দ গুছিয়ে নেবার পালা"- বড় সুন্দর- বড় শক্তিশালী- বড় বাঁধন আছে এই কথাটিতে।
বারবার ধ্বনিত হয়ে চলে অনন্য এই কথাখানি- একটা আশা যেন প্রত্যাশা নিয়ে অপেক্ষায় ছিল গোছাবে বলে এত দিনকার সব এলোমেলো।
আর, ঠিক এইখানেই প্রিয় কবি ভারি সুন্দর- অসাধারণ- অতুলনীয় উচ্চতায় নিয়ে গেলেন কবিতাটিকে।
পুনশ্চঃ-
“একদিন খুব ভোরে, সোমসূর্য” – “সোমসূর্য” অসাধারণ, কিন্তু “খুব ভোরে” সঙ্গে ঠিক খাপ খাচ্ছে না বলে মনে হল। প্রিয় কবি, কিছু মনে করবেন না দয়া করে। যেমনটা মনে হল সেটা অকপটে বলার জন্যেই বললাম।
ভালো থাকবেন। আন্তরিক শুভকামনা সকল সময়।