কবিতার নামঃ- ছুট ।
কবিঃ- শ্রদ্ধেয় বিভূতি দাস।
আজ আত্মকথা বলবো। রেলগাড়ির। রেললাইন ছাড়া আমার যে যাওয়ার যো নেই। একটু এধার ওধার হলেই, বেলাইন। বড়ো বাঁধনে থাকতে হয় সবসময়। একটুও ভুলচুক হওয়ার অবকাশ নেই। হলেই দুর্ঘটনা। ইচ্ছেমত থামতেও পারিনা। পথে যদি কখনো জংশন পড়ে, তখন উল্টো দিক থেকে আসা তুমি অথবা আমি থামবো খানিক। তখনই কেবলমাত্র দেখা হওয়ার অবকাশ।
নয়তো শুধু, নিরন্তর গতি নিয়ে ছুট... ছুট...আর ছুট...
সমান্তরাল দুটো সরলরেখা পাশাপাশি চলে। রেললাইনের মতো। সারাজীবন তারা পাশাপাশি, অথচ মিলন হল না কারো। ছুঁতে পেলো না তারা একে অপরে, এত কাছে থেকেও; পরস্পরে।
গতি, শুধু প্রগতি দেয় নি। দুর্গতিও দিয়েছে অনেক। কেড়ে নিয়েছে জীবন থেকে অনেক, অনেক কিছু। পাশাপাশি থেকেও, ছুটে চলেছি অবিরাম। ছুঁতে পারিনি তোমায়। বলতে পারিনি, বলবো বলে ভেবে চলেছি যা, মনে মনে।
সত্যিই কি প্রয়োজন ছিল এত ছুটোছুটির! একবারও কি ভেবে দেখেছো? থামারও দরকার ছিল। দু-দণ্ড বিশ্রামেরও দরকার ছিল বড়ো। ‘মুখোমুখি বসিবার’ও প্রয়োজন ছিল, খানিক। কিন্তু হায়! ইচ্ছে হলেই তো থামার অবকাশ নেই যেখানে সেখানে। মিলনক্ষেত্র পথের সব জায়গায় তো সাজানো থাকে না! পথের নির্দিষ্ট জায়গাতেই যে তার অবস্থান। একবার মিলিত হতে না পারলে সারাজীবন শুধু অনুতাপ করেই চলতে হয়! জংশনে একবার মিলন না হলে, দৌড়ে চলতে হবে শুধু শুধু। হয়তো বা পাশাপাশি নয়তো বা পিছু পিছু।
তবু, যদি তোমার ইচ্ছে হয়! তবে সব বাঁধন ভেঙে, বেড়া ভেঙে বেরিয়ে এসো তুমি। এসে দেখো। আমি প্রস্তুত। আমার গতির রথকে থামিয়ে দিয়ে তোমার পাশে বসে থাকার জন্যে, সারা জীবন।
“তবুও যদি মনে হয় থামবে, সব আলো নিভিয়ে দিও
প্রস্তর যুগের গন্ধ মেপে মেপে আমিও থেমে যাব পাশে।”
অনন্য এ আত্মকথার কথক হলেন আসরের শ্রদ্ধেয় কবি বিভূতি দাস।
এ “অনুতাপ”, এ “আত্মপ্রবঞ্চনার” জীবন আলেখ্য অংকন করেছেন তিনি। রূপকের মোড়কে মুড়ে দিয়েছেন, জীবনের পাওয়ার মধ্যে না পাওয়াকে। অবয়বহীন “নিরাকার ভাবনাগুলোকে” সাকার করেছেন তিনি, তাঁর অনন্য কবিতাটির শরীরের অভ্যন্তরে।
অসাধারণ, অপূর্ব এক উপস্থাপনায় মুগ্ধ করলেন প্রিয় কবি।
এমন একটি সুন্দর কবিতাটির জন্য প্রিয় কবিকে জানাই আন্তরিক ভালোবাসা ও অভিনন্দন।