একটা রহস্য উপন্যাস পড়ছিলাম। প্রায় শেষ করে এনেছি, এমন সময় দেখলাম যে, রহস্য উন্মোচনের পাতাটাই একেবারে সাদা। কোন লেখাই পড়েনি তাতে। কি করি! অগত্যা পাঠকের চোখে ঘটনার গিঁট খোলার চেষ্টা করা...
একটা কবিতায় এমন রহস্য থাকতে পারে, জানা ছিল না আগে। ‘চন্দ্রোচ্ছ্বাসের একবেলা’ হল সেই কবিতা আর, কবি হলেন শ্রদ্ধেয় আগুন নদী।
এবার কবিতায় আসি। জীবনের চূড়ান্ত গন্তব্য তো সবার জানা। তবে, সেই জায়গাটা জীবদ্দশায় দেখেনি কেউ। আমার অভিলাষ হল জীবন-মরণের সেই দিগন্তরেখাটায় অভিযান করার। অভিযাত্রী হলাম আমি, আমার অভিলাষী মন আর বিলাসী কল্পনা।
যাত্রাপথ বড়ো অনিশ্চিত, অন্ধকার। যেটুকু আলো পেয়েছি পথে, ভালোবাসার স্পর্শ মেলেনি তায়, এতটুকুও। এমন করেই সময় বয়ে যায় ভালবাসাহীন জীবনের পথে। চলতে চলতে আলো-আঁধারের সন্ধিক্ষণ গোধূলিও অতিক্রান্ত প্রায়। হঠাৎ জীবনের সব রঙ নিয়ে একটা নয়, দু-দুটো রঙধনু উপহার পেল আমার এ জীবন। আসন্ন বৃষ্টির আগে যেমন করে নীল আকাশের গা থেকে ঘাম ঝরে পড়ে আনন্দে, তেমন করে আমারও মন মেতে উঠেছিল হঠাৎ পাওয়া এই বিরল উপহারে। ভেতরকার বোধ বলে উঠছিল, আমার এতদিনের শুষ্ক জীবন সিক্ত হবে আজ বৃষ্টি ধারায়।
ক্ষয়িত চাঁদ, তার শরীরে যেমন পূর্ণিমার ভরা যৌবনের উচ্ছ্বাস দেখবো ভেবে উচ্ছ্বসিত হয়, হঠাৎ আনন্দে আমারও শরীরে তেমন শিহরন, আগামীর অধীর অপেক্ষায়! কিন্তু, হায়! আমার বোধ যা ভেবেছিল তাই হল। বিগতবেলাতেও আমার পাওয়া হল না প্রেমের অমৃতস্পর্শ। দেখা হল না পূর্ণিমার চাঁদ। অযাচিত বরিষণে ভিজে গেল চারপাশ। আগামীকে কে দেখেছে? কবে? আমারও দেখা হল না তাই!
“আশ্চর্য আঁধারে ঢাকে পূবের আকাশ
অযাচিত বরিষণ ভিজিয়ে দিলো ঠিক
- জোছনা ভাসেনি আর উঠেনি চাঁদ!”
শেষ পর্যন্ত কর্তব্যের কথাটাই রাখতে হয়। ফিরে আসতেই হয়, নিজগৃহেই কর্তব্যের তাগিদেই। যা চেয়েছিলাম পাইনি তাকে। যার জন্যে ঘর ছেড়েছিলাম ফেলে এলাম তা-
“পেছনে ফেলে আসি কাঙ্ক্ষিত তীরভূমি।”
এতক্ষণে, জীবনের অমোঘ চিরসত্য উদ্ঘাটিত হয় আমার জীবনে। স্বরূপ খুঁজে পাই চিরন্তন জীবনের সত্যের আভায়।
"এতক্ষণে সপ্তমের আভা;নীলাম্বরীর গায়
আমাদের ভাঙা কুটির প্লাবিত জোছনায়!
- চন্দ্রমৌলী হেসেছিল অরূপ প্রভায়।"
জীবন এমনই; অনিশ্চিত, ব্যাখ্যাতীত। হিসাব মেলানো যায় না। সে যেমন, তেমনই বয়ে চলে।
তবে, কবিতাটি পাঠে একটা আশ্চর্য সুন্দর বোধ কাজ করে চলে অনেকক্ষণ। কবিতার ভাব, ভাষায়, উপস্থাপনায় মোহিত না হয়ে আর কোন উপায় থাকে না পাঠকের।
আলোচনার প্রথমেই বলেছিলাম, কবিতাটির রহস্যময়তার কথা। সাতজন কে? কি তাদের পরিচয়? ধন্দটা খানিক রয়েই গেল তাই। হয়তো খোলসা হল না পুরোটা। সপ্তরথীর গড়া চক্রব্যূহে তাই, বালক অভিমন্যুর মতো বৃথা এই যুদ্ধের আয়োজন। তবু, মনের কথাটা বলতে পারার আনন্দটা ভাগ করে নেওয়া সবার সঙ্গে। আর, সেটা নিয়েই শেষ করলাম আজকের মতো।
শ্রদ্ধেয় কবিকে জানাই আন্তরিক ভালোবাসা ও অভিনন্দন এমন অনিন্দ্য সুন্দর কবিতাটির জন্য।
ভালো থাকবেন সবাই।