বুদ্ধু বৃক্ষ
প্রিয় কবি শ্রদ্ধেয় সুমন
খাঁচায় পাখি পোষা আইনত মানা। শুধু, পাখি কেন প্রকৃতির কোলে যারাই স্বাধীনভাবে থাকতে পারে তাদের সবাইকে খাঁচায় পুরে বা পায়ে শিকল দিয়ে কি আটকে রাখা উচিত? অথচ, ভালোবেসে আমরা সেটাই করি। ভালোবাসার জনকে অন্ধ ভালোবাসায় কাছে রাখতে চাই, আটকে রাখতে চাই। ভাবি, যে আমরা তাকে কতই না ভালোবাসি! কিন্তু, খাঁচায় যে তাদেরও যন্ত্রণা হয়! সেটা ভুলে যাই প্রায়শ। ভুলে যাই আমরা, যে সীমাবদ্ধ জায়গায় যদি আমাকেও বন্দী করে রাখা হয়- তবে, আমি কেমন থাকবো! স্বাভাবিক আবাসে মুক্ত হয়ে সবাই থাকতে চায়, সে কথা মনে থাকে না সবসময়! ভুলে যাই চিরন্তন সেই বাণী,-“বন্যেরা বনে সুন্দর...”
এতদিন ভাবতাম প্রাণীকে না হয় আটকে রাখলাম না। কিন্তু, শখ করে টবে তো গাছ পুষতে পারি! কিন্তু, গাছেরও তো প্রাণ আছে! টবের সীমিত সীমায় “ছোট্ট নাগরিক বারান্দায়”----- “এককোণে অতিযত্নে” সেও যে হাঁফিয়ে ওঠে! তারও যে একটু আকাশ দেখতে ইচ্ছে করে!
আর, তাই তো দরদী কবি শোনান নতুন এক কাহিনী “বুদ্ধু বৃক্ষ”-এর মনের কথা-
“সে চায় প্রেমনীল উদার আকাশ
চায় স্বাধীনতা
সীমাহীন উন্মুক্ত প্রান্তর”
একটি কবিতা অথচ দুটি ভাগে ভাগ করেছেন প্রিয় কবি। প্রথম অংশে বন্দি সেই গাছটির কথা। তার জমে ওঠা “নিরবিচ্ছিন্ন অভিমান”- এর কথা।
আর দ্বিতীয় অংশে কবি যেন তুলি দিয়ে তুলে ধরেছেন তাঁর কৃতকর্মের ফল। খাঁ খাঁ করা বারান্দায়-
“শুধু ঝুলন্ত টবে
মানিপ্লান্টের একটি সবুজ লতা
দুলছে বাতাসে
এখনো সাক্ষী দিচ্ছে
একদিন কেউ ছিলো”
একটা অবিবেচনার মাশুল দিতে হল গাছটির অমূল্য জীবনের বিনিময়ে। একটা গভীর সংবেদনা জেগে ওঠে “বামন গাছটির” প্রতি।
সাধারণ বিষয় দিয়ে কি অসাধারণ বোধ তৈরি করেছেন প্রিয় কবি! সচরাচর চেনা ঘরোয়া ছবিটি থেকে কেমন একটা সার্বজনীন উত্তরণ ঘটে যায় ঘটনাটির আবহে। আর, এইখানেই কবিতাটি সার্থক রূপে পাঠকের মনে চিরন্তন জায়গা করে নেয়।
আরও একটু বলার আছে। কবিতাটির নামকরণ ভারি অন্যরকম “বুদ্ধু বৃক্ষ”। উচ্চারন করতে গেলে চিরন্তন “বোধি বৃক্ষ”- এর কাছাকাছি। কবি সচেতনভাবেই এমন নাম দিয়ে থাকবেন হয়তো। মহাজ্ঞানী, মহাপ্রাণ ‘বুদ্ধদেব’ জ্ঞানের আলোকে দীপ্ত হয়েছিলেন এমন গাছটির তলায়। জগত সংসারকে আলোর পথ দেখিয়েছেন এখান থেকে আলোকপ্রাপ্ত হয়েই। আর, আমরা অবোধের মত টবের একটুখানি মাটিতে, যেখানে বড়জোর সামান্য একটা মানিপ্লান্ট বাঁচতে পারে সেখানে একটা আস্ত “বৃক্ষ” লালনের চেষ্টা করে চলেছি। কবি চোখে আঙুল দিয়ে আমাদের অবোধটাকে দেখানোর চেষ্টা করেছেন তাঁর অসামান্য নামকরণে।
কবিতাটি সহজ সরল ভাষায় অত্যন্ত সহজবোধ্য ভাবে গড়ে তুলেছেন তিনি। পড়ে কোথাও বুঝতে অসুবিধা হয় না কোনো পাঠকের। অথচ, ভাবনার গভীরতা ভাবায়, আবেশে মোহিত করে রাখে অনেকক্ষণ পরেও।
প্রিয় কবি শ্রদ্ধেয় সুমনকে জানাই আন্তরিক অভিনন্দন এমন সুন্দর একটা কবিতা কবিতার আসরে উপহার দেওয়ার জন্য।
ভালো থাকবেন।
আন্তরিক শুভকামনা।