আমিহীন সর্বনামের জন্য
আগুন নদী
কত সজীব প্রাণ নিশ্চুপ হয়ে সারে সারে; কালো পাথর হয়ে দাঁড়িয়ে যুগ যুগান্তর ধরে-
“কথাগুলো জমে জমে; পাথর হয়েছে ক্রমে
আকর, যুগযুগান্তের জমে থাকা মূল্যবান সম্পদের ভাণ্ডার। অজর-অব্যয়-অক্ষয়। তবে, সেই রত্ন ভাণ্ডারে পৌঁছনোর পথনির্দেশ দেওয়া নেই কোথাও। খুঁজে নিতে হয়...
হৃদয়ানুভূতি তেমনই মূল্যবান অমূল্য। তবে, সেই অতলের তল পাওয়া মোটেই সহজ কথা নয়। শিলালিপির মতো কোথাও সহজ সরল ভাষায় খোদাই করা নেই হৃদয়ের ভাবাবেগের কথা।
নিখাদ শব্দ তার অকৃত্রিম সাজে উপস্থাপিত হলে তবেই, উন্মোচিত হয় মনের সম্পূর্ণ ভাবাবেগ। অহেতুক বিশেষণে সুন্দর করতে গিয়ে...সমাসবদ্ধ পদ তৈরি করে গুরুগম্ভীর করতে গিয়ে... শব্দের আসল কথাগুলো হারিয়ে যায় জমাট অন্ধকারে।
কোমল আঁচড় কেটে দেখতে গিয়েছিলাম, কঠিন শিলার গায়; ক্ষত বিক্ষত হয়েছি তার নির্দয় প্রত্যাঘাতে। তবু, পথ হাঁটা ছাড়িনি। যা বলবো বলে ভেবেছিলাম, বলি বলি করেও বলতে পারিনি কিছুই; তবে, আভাস পেয়েছি অমৃতলোকের অমৃতকুম্ভের সন্ধান। “জমা রাখা এই কথা; লিখে যাওয়া কবিতা” রেখে গেলাম তোমাদের জন্য।
জীবন্ত জীবন থেমে যায় প্রাকৃতিক কারণেই। থাকবো না আমিও সেদিন। দেখতে পাবো না কিছুই, তবুও...
“জেনেশুনে বুঝে নিয়ো, আমিহীন সর্বনামে
বর্ণমালার শরীরে মিশেছে কোন অব্যয়!”
বর্ণমালার সাধারণ শব্দেরা পাল্টে যায় অবস্থাভেদে। চলতে গিয়ে, কেউ কেউ পাল্টে ফেলে পথও। তবে, কিছু পথ, কিছু কথা চিরন্তন। স্বমহিমায় প্রদীপ্ত থাকে তা চিরকাল অপরিবর্তনশীল অবিনাশী অব্যয়।
অসাধারণ শব্দবন্ধনীর সৃজন “আমিহীন সর্বনাম” । সবাই আছে শুধু আমি নেই। বিচ্ছিন্ন আমি বড়ো কাব্যিক।
এক অনন্য নির্মাণ। এক গভীর আত্মপ্রত্যয়ের কথা। নিজ পথের প্রতি, নিজ মতের প্রতি গভীর প্রতীতি এক অসামান্য উচ্চতায় নিয়ে গেল কবিতাটিকে।
বিষয় নির্বাচন, বিষয়টিকে বলা বরাবরের মতো কঠিন করে আর অবশ্যই নিজস্ব মৌলিক ধারায়।
আন্তরিক অভিনন্দন জানাই প্রিয় কবিকে এমন এক মনোরম কবিতা আমাদের উপহার দেওয়ার জন্য।
ভালো থাকুন কবি।
আন্তরিক শুভকামনা রইল।