আধুনিক রান্নাঘর
শ্রদ্ধেয় কবি প্রবীর চ্যাটার্জী
বাঁচার জন্যে খাবারের প্রয়োজন। তবে, মানুষ তো সুখী প্রাণী তাই তার নরম পেটের জন্যে রান্না করা খাবার হলেই ভালো হয়। আর, রান্নাঘর হল সেই জায়গা, যেখানে এখান সেখান থেকে জোগাড় করে আনা বস্তু সামগ্রী রসনার উপযোগী করে উপাদেয় করে তোলা হয়।
আমাদের সবার প্রিয় কবি শ্রী প্রবীর চ্যাটার্জী এই বিষয়টিকে তাঁর কবিতায় সুন্দর ভাবে উপস্থাপিত করেছেন।
রান্নার ব্যাপারে একটু পিছন ফিরে তাকাতে চাই। তখনো আগুন আবিষ্কার হয় নি। কাঁচা মাংস খেতেও ভালো নয় আর হজমও হয় না তাড়াতাড়ি। তারপর তৈরি হল ঝলসানো মাংস যা খেতেও সুস্বাদু আর সহজপাচ্যও বটে। রান্নার আদিপর্বটা মোটামুটি এই রকম। তারপর, ক্রম বিবর্তনের হাত ধরে একটু একটু করে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে রান্না এগিয়ে চলে। আজকের সভ্যতায় রান্নাঘরের আদলটাই পাল্টাতে পাল্টাতে একেবারে ঝকঝকে, সেজেগুজে “আধুনিক”।
তাই, কবির কথায় একটা বাড়ির মান যাচাই হয়ে যায় তার রান্নাঘরের আধুনিকতার নিরিখে।
“নাড়ীর খবর আর হাঁড়ির খবর,
গৃহের মান যাচাই করে নাও।"
সত্যিই সবসময় আড়ম্বর দিয়েই সুন্দর হয় না। আধুনিক মানেই “মাইক্রোওভেন” বা “ফুডপ্রসেসর”-এর উপস্থিতিই অনিবার্য নয়।
প্রকৃতপক্ষে, আধুনিকতার নাম করে অনাবশ্যক অনেক কিছু আমদানি করে ফেলি আমরা। আবশ্যকতাকে দেখি না তেমন করে। রান্নার যে মূল প্রয়োজন খিদে মেটানোর একটা ব্যবস্থা তা থেকে বিচ্যুত হয়ে যাই।
এমন করে জীবনের অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় মুখ্য উদ্দেশ্যটাই গৌণ হয়ে যায় বাহ্যিক আড়ম্বরের চাপে।
বিত্তবান সাজায় তার ঘর-রান্নাঘর। আর, যার নেই কিছু-যে বাস করে আকাশকে ছাদ করে- তার যে... “তোলা উনুন কালিঝুলি হাড়ি।"
আর, এইখানটাতে কবি অনবদ্য এক ম্যাজিক দেখিয়েছেন। খোলা আকাশের নীচে “মাংসের ছাঁটে” “অমৃত ভোগের” স্বাদ পেয়ে যায় পাঠক।
কবিতার নামকরণ, বিষয়, এবং বিষয়টিকে বলা অত্যন্ত সুচারুরূপে সেরেছেন প্রিয় কবি- সেটা বলাই বাহুল্য।
মানবিক আবেদনে সমৃদ্ধ এক আধুনিক কবিতাকে আসরে উপহার দেওয়ার জন্য প্রিয় কবিকে জানাই আন্তরিক অভিনন্দন।
ভালো থাকুন কবি।
আন্তরিক শুভকামনা রইল।