ওটিতে ঢোকার বিশ ‌মিনিটের মাথায়  
আমার জান এলো পৃথিবীতে;
হঠাৎ হুরোহুরি করে
সব চুপচাপ,
ডাক্তার নার্স সহকারী
সব শুরুর মতন নিরব;
কয়েকজনের দ্রুত প্রস্থান।

বাচ্চা কাঁদছে না কেনো আমার?
দুনিয়ায় এসে?
ওরে দেখান‌ নয়তো
বসিয়ে দিন আমায়
এই অতিরিক্ত উঁচু বেডটায়
কাটাকাটি পড়ে সেলাই করুন;
আগে দেখতে দিন কি ঘটনা!

বাচ্চাকে এন আই সিউতে
পাঠিয়ে দিয়েছি; জানায় ডাক্তার,
অক্সিজেনের অভাবে  
কালচে নীল ওর সমস্ত শরীর।

আমি নিজ চোখে দেখতে চাই সব;
না দেখালে ওটিতে
যারা আছেন; ‌
এক্ষুনি বের হয়ে যান
সহ্য হচ্ছে না কাউকে।

আমার বাচ্চা না কাঁদার জন্য আপনারা ডাক্তার দুইটা দায়ী
বাচ্চা না কাঁদার জন্য ওটির কম অক্সিজেন দায়ী
বাচ্চা না কাঁদার জন্য মুচকি হাসির নার্সটা দায়ী
বাচ্চা না কাঁদার জন্য রূমের ঠান্ডা এসি দায়ী
বাচ্চা না কাঁদার জন্য আমার লো প্রেসার দায়ী
বাচ্চা না কাঁদার জন্য অপারেশন শেষ‌ না হওয়া দায়ী।

ডাক্তার দুজন ফিসফিস করে
হাতে লাগানো সদ্য ক্যানোলায়
কোন একটা ইনজেকশন দিয়ে জানায়;
বাবু কত ভালো আছে এন আই সিউতে!!
সেটার প্রভাবে;
ফুরফুরে মেজাজ আমার!

মৃদু হেসে বলি
বাচ্চা কই আমার?
দেখাতে বলছিনা?
এক্ষুনি নিয়ে আসুন।

অথবা
এন আই সিউ কোন দিকে বলেন
আমিই দেখে আসি গিয়ে‌।
পেট কাটা? অসুবিধা নেই
চেপে ধরে নেব জায়গাটা।
আমি আমার বাচ্চার কাছে যাবো
বাচ্চা কই আমার?
হ্যাঁ?

পুরুষ ডাক্তারটা ভয় পেয়ে
ইনজেকশন দেয় আবার;
এবার;
কথা বলাই কঠিন লাগছে
মন হালকা শুধু শুধু।

বাবুর কাছে যাবার পরিকল্পনা
আরো বেড়েছে তবু;
খালি উঠে একটা দৌড় দিলেই
সুবিধাজনক কিছু করা যায় ভাবছি।
ভাবছি;
যেহেতু আমি এখন ‌থেকে মা
এখন থেকেই এসব আমার দায়িত্ব।

তারপর মনে নেই
তারপর আবছায়া সব
তারপর
তারপর
তারপর
সমস্ত রাত্রি পর
আমার প্রথম সন্তান
আমার কোলে;
লম্বা সময় তার কাছে না থাকার অভিযোগ;
ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে বলতে থাকে সে;
আমিও বলি আমার সমস্ত জীবনের
অভিযোগ অভিমান আক্ষেপের কথা।