আমি আলোতে যাই
আর অন্ধকারেই যাই
কিছুই নাহি ভাবিতে চাই,
তবুও যেন মোর মাথার ভিতরে
তবুও যেন মোর এ অন্তরে,
সুখ নয়-শান্তি নয়
স্বস্তি নয় আবার অস্বস্তিও নয়
একেবারে মোর হৃদ্বয়ের মাঝে
নিত্যদিনের সকল কাজে
কেমন এক ভাব মনে হয়,
কি যেন এক উপলব্ধি জন্ম লয়।

কখনো সেভাব পারিনা দূর করতে
কখনো আমি তারে পারিনা ছাড়াতে
পারিনা-পারিনা কখনোই তারে এড়াতে।
সে সর্বদা আমায় রাখে ব‌্যস্ততাতে
তার এই উপস্থিতিতে
আমার আর সব কিছুই তুচ্ছ মনে হয়
কেমন যেন সব পন্ড মনে হয়,
আমার সকল চিন্তায়
আমার সকল প্রর্থনায়
কেন জানি সব শুন্য মনে হয়,
একাবারে যেন বিরান মনে হয়।

শত-সহ্স্র লোকেরা যত
হাসি-আনন্দে থাকে উন্মত্ত,
আবার কাজের সময় কাজ করে অবিরত।
তেমন সহজ-সরল লোকের মত
বলো কে আর চলিতে পারে?
বল কেই বা অচল থাকিতে পারে?
সেসব সহজ-সরল লোকের মত
ঠিক তাদের মত-ভাষা
একেবারে তেমনি কথা
বল কে পারে বলিতে আর?
আছে কি এমন কোন নিশ্চয়তা!
কেইবা তাহা জানিতে পারে আর?
এমন মনুষের সন্ধান
বল কেউ কি  খুঁজিতে চায় আর?
শত-সহস্র লোকের মতো
কখনো কি তার প্রাণের আহলাদ
পাবে কি কখনো সে আবার?

চাষীদের মত বীজ বুনে আর
লাভ কিগো বলো তার?
ফসলের আশায় থেকে
মাটির গন্ধ গাঁয়ে মেখে
জলে শরীর ভিজিয়ে রেখে
কি লাভ বল হেথায় থেকে?
দূরাশার আলোর পানে চেয়ে রয়ে
কি হবে আর নতুন করে প্রাণ পেয়ে?

লাভ কি আর ব্যাথা বারিধীর বুকে
এমন করে তরণী বেয়ে?
কি জন্যে আর রহিব জেগে
নিশাচর হয়ে এ ধরনীর পরে?

সুখ নয়-শান্তি বা স্বপ্ন নয়
কেমন এক উপলব্ধি জন্ম লয়;
সব সময় তা রাখে মোরে ব্যস্ত করে
থাকে যেন মোর সবটুকু অস্তিত্ব জুড়ে।
চলিতে পথে মনে পড়ে
যাব চলে আমি পরপারে;
যতই এড়ায়ে চলিতে চাই তারে
বুকের খাঁচার মতো আঁকড়ে ধরে,
মাঝে মাঝে মন চাই
খুলে ফেলিয়া দেই দূরে
তখুনি তাহা হয়ে উঠে অতি-আদূরে।
তাই তো সে আমার সকল আশে
বেঁধেছে বাসা এ হৃদ্বয়ে এসে
থাকে যেন সে হৃদ্বি-পাশে।

তবু যেন চলিতে পথে
তবু সে মোর হিয়ার মাঝে
তবু সে আমার নিঃশ্বাসে
সব-সময় সাথে সাথে
যেখানেই চলি আমি
সেখানেই সে চলে আসে।
কোথাও যদি কখনো থামি
সেখানে তখন সেও থামে।

আমার আত্মার ভিতরে
সুখ নয়, স্বপ্ন নয়, প্রেম নয়
কি যেন এক উপলব্ধি জন্ম লয়,
আমি সব কিছুরে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি
তখন আমি বলি মোর আত্মারে
কেন সে বায়ুর মতো ঘুরে ঘুরে
শুধু-শুধু একা একা কথা কয়!
কোন অবসাদ নেই কি তার
নেই কি তার শান্তির সময়
কখনো সে কি ঘুমাবে না?
নিরবে শুয়ে থাকিবার স্বাদ
পাবে না কি সেই আহলাদ
এ পৃথিবীর সৌন্দর্যে কোনদিন!
মানবের প্রেম-মুগ্ধতায় কোনদিন
শিশুর সাবলিল সরলতায় কোনদিন!
এ উপলব্ধি- এ স্বাদ-এ আনন্দ
কখনো সে কি পায় অবাধ-অগাধ!

এই ধরনীর পথ ছেড়ে
শুন্য ঐ মহাশুন্যের পথ
কখনো চায় না সে
করেছে সে এই শফথ,
দেখিবে সে শুধু সেই চেনা মুখ
দেখিবে শুধু সেই মানুষীর মুখ
তাই সে আজি এমন উন্মুখ
হয়েছে তাই তো বড়ই উৎসুখ।
================

রচনাকাল ও স্থান: ৮ই ভাদ্র, ১৪০৫ বঙ্গাব্দ,
২৩শে সেপ্টেম্বর, ১৯৯৮ইং,
সরকারী শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, লক্ষ্মীবাজার, ঢাকা।