দিন যায় আসে দিন
সময় যেন নদীর মত স্রোতস্বীন;
বাঁজাও এ হিয়ায় মায়াবীণ
কি দিয়ে শুধিব বল সেই ঋণ?

বলো ওগো মায়া পূজারী
নেই কি তোমার দিবা-রজনী?
কোন মায়া তপবনে বসি
আনন্দোলয় দোলিয়াছ তাপস্বী?
সে পরমানন্দে ওঠে প্রকাশি
গান হয়ে প্রাণে তব সুরলহরী।

তব অধরে যে মায়ার হাসি
যেন হার মানে তার কাছে
সৃষ্টি মাঝে যত মায়া আছে
নভেতে ঊদিলে পূর্ণীমা শশী
ওঠে তাহা তব অধরে বিকশি।
জোতির্ময় সে আলোকে
স্বর্গ যেন নেমে আসে ভূলোকে;
সে আলোক-স্রোতে ভাসি
চলি কোথা হয়ে উদাসী!
তব আলোক-মগন ভূবন হতে
হলাম আজ আমি পরবাসী
তব যে মায়ার দ্যূতি হিয়া-মাঝে
ঊদিছে অনির্বাণে বলি তাহা পরকাশী।

অবগুন্ঠনে তব অপ্সরী
যে সুগন্ধ-সৌরভ বিলায়
তা মোরে মোহিত করে ভোলায়।
তব নয়নে যে অব্যক্ত ভাষা
নীরবে আমি পড়িয়াছি,
তা যেন মশিতে আমার
ওঠে আজি গুমরী,
যত সুখ, যত সুধা
যত রূপ, যত গাথা
পবিত্রময়ী তা শুধু তোমারী।

শ্বেতাবরণ তব পর্দারালে
মায়াবী যে আশীষ ঝরালে,
বেঁজে ওঠে তাই বুঝি
এ হিয়ার অন্তরালে,
কেন আজি এমন মায়ায়
আমায় তুমি জড়ালে?
মনোবীণায় সে সুর
বেঁজে ওঠে ঝঙ্কারী,
তুমি যে আমার ওগো
একান্তু শুধু আমারই।

উপমা তব নাহি মেলে
ডাকি তাই নিরুপমা বলে,
কল্পোলোকে ঘুরি আমি
হইয়া যেন ফেরারী,
তোমারী চরণ তলে
কবি চিত্তের অলকাপুরী
দিব যে আজি উৎসারী।

তোমাতে যে অমৃত বীষ
পেয়েছি আমি অহর্নীশ,
তা নহে গো বীষ
তা যে তব প্রাণের অশীষ!
যা সেদিন পড়েছিলো ঝরি
অপলোকে ও অলক্ষ্যে তোমার
তা যে শুধু আমারই।
সে অশীষের কি যে মূল্য
হেথায় কিছুই নাহি তার তূল্য!
চরম তারই মূল্য দিলো
বিশ্ব প্রেমিক আশেক মজনু,
সে মূল্যই দিতে গিয়েই
শাজাহান ঐ তাজ গড়লো;
হেলেনকে জয়ের আশায়
যেমন ট্রয় নগরী পুড়লো।

সে সব গীতি ঝঙ্কারে আজি
কন্ঠে আমার উঠিছে বাঁজি,
কি মায়া আর মাধুর্য তারি
সে সব আমি না বলিতে পারি!
পবিত্র তব নয়ন মাঝে
কি যে যাদু মাখানো আছে?
তা যেন মোর শুষ্ক প্রাণে
সজীব করে অমৃত বাণে;
কেমনে তাহা বোঝাব আমি
না পেলে তব নয়নের দেখা
মনে হয় আমি যে বড়ই একা,
এ বিরহ ব্যাথা বোঝ কি তুমি?
যে অনলে পুড়েছি আমি
সে জ্বালা বুঝিতে যদি তুমি
তাহলে যে হতে মোর অন্তর্যামী।

×××××××××××××××××××××

রচনাকাল ও স্থান: ২৮শে জানুয়ারী, ১৯৯৯ ইং
১৫ই মাঘ, ১৪০৫ বঙ্গাব্দ;
সাহাপুর-ঈশ্বরদী, পাবনা।