সহস্র লোকের ভীড়ের মাঝে বসে
সেখানে আমার আপন মুদ্রাদোষে
সম্পূর্ণ হতেছি আলাদা এক পাশে।
নাকি শুধু তা আমার চোখেরই ধাঁধা?
পথ চলতে শুধু কি আমার পথেই বাঁধা?
যারা জন্ম লভিছে এই ধরাতে
কচি বাচ্চার মতো হয়ে
আবার বাচ্চার জন্ম দিতে দিতে
বয়ে গেছে জীবনে যাদের অনেকটা সময়
অথবা এখনও যাদের বাচ্চার জন্ম দিতে হয়।
যাহারা এ ধরার শষ্যক্ষেত্রে আসিতেছে চলে
শুধু জন্ম দেব জন্ম দেব বলে;
তাদের হৃদ্বয় আর আত্মার মতন
আমার হৃদ্বয়ও না কি? তাদের মন
আমার মনের মতন কি?
কেন তবু এমন একাকী?
এ হাতে কি তুলে দেখিনি চাষীর লাঙল?
কাঁধে কি টানি নাই বাঁকে করিয়া জল?
কখনো কাস্তে হাতে যাইনি কি মাঠে?
ঘুরিয়াছি জেলেদের মত কত নদী-ঘাটে;
দিঘীর পানা-শ্যাওলা মাছের আঁশটে ঘ্রাণ
গিয়াছে এ গায়ে জড়ায়ে,
সেই গন্ধ সেই স্বাদ-
অনেক অনেক পেয়েছি আমি;
বাতাসের মত অবাধ-অগাধ
সব-সব তা রয়েছে, এ জীবন
কখন নক্ষত্রের তলে শুয়ে ঘুমায়েছে মন
হঠাৎ একদিন, এই সব সাধ
জানিয়াছি আমি একদিন! অবাধ-অগাধ
কখন এসেছি চলে ইহাদের ছেড়ে;
ভালেবেসে দেখিয়াছি এক জনেরে
অবহেলা করেও দেখিয়াছি সেজনেরে,
আবার ঘৃণা করেও দেখিয়াছি তারে,
সেও যে ভালোবাসিয়াছে আমারে
যখন আমি ডাকিয়াছি সে মানুষীরে
তখন সে আসিয়াছে কাছে
সেও যেন কখন মোরে ভালোবাসিয়াছে;
আবার সে অবজ্ঞা করে গেছে মোরে
যখন সে ঘৃণা করে চলে গেছে
তখন ডেকেছি তারে বারে বারে
ভালোবেসে শুধু-শুধু তারে।
মোর সাধনা ছিল তবুও একদিন-
আবার ফিরে পাব সেই-ভালোবাসা।
আমিই যেন তার সকল অবহেলার ভাষা
আমিই যেন তার সবটুকু ঘৃণার আক্রোশ;
সেসব আমি অবমাননা করে গেছি
পোড়া ভাগ্য আমার সব ভাগ্যের দোষ
আশার পথে বারংবার ভেঙেছে সকল উচ্চাশা।
যেন সবই তার আমি ভুলে গেছি;
তবু কেন আমার এই-ভালোবাসা
মনে হয় শুধু ধুলো-আর কাঁদা।
================
রচনাকাল ও স্থান: ৩রা ভাদ্র, ১৪০৫ বঙ্গাব্দ,
আজিজ মহল্লা, মোহাম্মদপুর, ঢাকা।