মেঘ মেদুর এমনি
ছিল কি সেদিন?
শ্রাবণ-শর্বরী তার
আঁধারে ঘনায়েছিল রজনী
সঘোন-বরষার নিশিদিন
বাজিয়েছিল বিরহ বীণ।
আঘাত হানিয়া তার
ছিড়িয়া ফেলিতে সে মনোবীণার।
ঝড়-ঝঞ্ঝা তেমনি কি
বহে আপনায় আপনি?
মনে হয় তন্ত্রী-মন্ত্রী
বাধা-নিষেধ নাহি মানি
যেমন হচ্ছে আন্দোলিত
ঘনশ্যাম তরুশ্রেণী।
আজিকার এমন দিনে
কেন শুধু পড়ে মনে?
সেদিনের সেই মায়া-অভিসার
মায়াবিনী রাধিকার
কেহ না জানে কবেকার
কাহিনী সে মথুরার
ঘটেছিলো যা দূর-বৃন্দাবনে।
এমনি কি সেদিনও বায়ু
রহিয়া রহিয়া কি চলেছিল বহিয়া?
অশান্ত এমনি বৃষ্টি
করিয়াছিল কি মুগ্ধ
চকিত-তড়িত দৃষ্টি?
অকাতরে ক্ষয়ে পরমায়ু
গিয়েছিল এ হিয়া মুর্ছিয়া।
বিরহী মর্মে-মরা
মেঘমন্দ্র স্বরে
আঁখিতে পলক নাহি
শুন্যে রহিত চাহি!
প্রণীত প্রাণের আশা
প্রণদের তরে।
চলিতে পথে বিরহী পথিক
অজানা শুন্য পথপানে-
চাহিত যদি কেহ
মায়াভরা নয়নে
যদি কভু তার পানে!
বাজিয়া ডমরু স্বরে কারা
হিয়ায় ঝরিত রুধীর
শ্রাবণ বরষা-ধারা;
আপনায় বাজিত নিরজনে
ব্যাথাভরা সে সুর
করুণা-কাতর পরাণে।
হারায়ে যক্ষের ধন
রুক্ষ-স্বরে বক্ষ চীড়ে
অনিচ্ছায় কেঁদে ওঠে প্রাণমন!
কেমনে যে গেল মিশি
রক্তে মোর-সে মায়া-ঋণ।
এমনিতরো সেদিনও কি
ছিল তিমীর-আঁধার দিন?
সেদিনের কদম্বের মূল
সেই সে যমুনার তীর,
নীড় হারানো পাখির-কুজন
শুধুই কি শুনে দু-জন?
ভেদিয়া বক্ষ-হিয়া
ওঠে কি নিঃস্বসিয়া
অামানিশা ঘোর-তীমির!
এখনও আছে সেই বৃন্দাবন
এ প্রজন্মেও মানবের মনে
যেন তা রহিয়াছে
শরতের পূর্ণিমায়
সঘোন শারদ-বরিষায়,
বিরহ-গাথা হয়ে
বেজে ওঠে বনে-উপবনে।
সে বাঁশী আজও বাজে
বুঝি হৃদ্বয়-যমুনা তীরে।
আজও সে মায়ার খেলা
খেলে সে অদৃশ্য বিধি
নিশিদিন সারাবেলা!
কাঁদে সে আজও বাঁশী
উদাস হৃদ্বয় ক'রে
কত বাউল উপবাসী
রাধার সে প্রাণের কুটীরে!