বলছি তোমায়,শুনছো মাঝি, তোমার সম্মুখ নায়ে
কে ওখানে বসলো দ্বিধায় বাজছে কী তার পায়ে?
ঘুঙুর না-কি, নূপুর না-কি ; না-কি রূপের ছল
আফ্রোদিতি! লুকালে কি ঢাকতে পারে,বল?
আমি আকাশ, আমিই মাটি, আমিই জলের কণা
আমার ওপর নিগূঢ় সুরের ওটা কীসের ফণা!
দলবেঁধে সব মাঝির নৌকা যখন চরের ধারে
আমার তখন মন পড়ে রয় নদীর অপর পাড়ে
কে সে এমন, পা দুলিয়ে বিপদ ডেকে আনে?
এমন সুর তো শুনিনি আর এই পৃথিবীর গানে!
সুরটি আমায় ঘায়েল করে অবশ করে দেয়;
অমন মেয়ে - কে বা নায়ে ভরদুপুরে নেয়?
সাবধানে থাক ভ্যাবলা মাঝি, বিপদ বুঝে নিস
তিন গাঙের ওই মোহনাতে মেয়েটি আমায় দিস
না দিলে তোর নৌকা যাবে, যাবে জীবন প্রাণ
জোর করে কি নিচ্ছি কিছু, তুই করলে দান?
ভয়ের কিছু নেই যে মাঝি, হাত মেলালে হাতে
দেখবি কেমন রূপার থালে ভাত জুটবে রাতে
ঘর পাবি তুই, সঙ্গী পাবি - হুরপরিদের পাবি
যখন যেমন সুর ওঠে তোর, তেমনি সে গান গা'বি
আমায় শুধু মেয়েটিকে খুব নিজের করে নিতে
দিবি? নতুন করে জন্ম নিতাম। আপত্তি তোর দিতে?
আমি তখন জেলে হয়ে জন্ম নিতাম পাড়ে
জেলের যে জাল উপড়ে ফেলে দৃষ্টি দিতাম তারে
কপাল ছুঁয়ে চোখ রেখে তার চোখের ওপর কোণে
বৃষ্টি হতাম তার তরে রোজ- প্রচণ্ডতার মৌনে
গা ছুঁয়ে ওর নদীর স্রোতে তোকে দিতাম জল
মেয়েটি আমায় দিবি কি না, ও জেলে ভাই, বল?
মেয়েটি যখন চুল খুলে দেয় নদীর জলজ প্রাণে
আমায় তখন সমস্ত স্রোত তোর নৌকাতে টানে
তুই ছাড়া কেউ বুঝবে না যে আমার মনের ভাষা
ছন্নছাড়া, বাউণ্ডুলে আমার ভালোবাসা
তুই যদি না বলতে পারিস - আকাশ মেঘে ঢেকে
জলের ধারার বিপুল স্রোতে বলবো তাকে ডেকে?
মানুষ হলে বুঝতাম আমি মেয়েটিকে খুব কোরে
মুখের কাছে মুখ নিয়ে তার দু'হাতে হাত ধরে
বলতাম আমি মানুষ যেমন শব্দে কথা বলে
তুচ্ছ করে শক্তি আমার ক্ষীণতায় ক্ষীণ জ্বলে
এখন আমি পারছি না যে বলতে তাকে প্রাণ
ভ্যাবলা মাঝি, বল না আমায়,করবি তাকে দান?
বলবি তাকে - সমস্ত রোদ, মেঘ বালি আর জল
বাতাস কিংবা চাঁদের আলো সমস্ত অচল
সবকিছু যে মিইয়ে যাবে চুপসে যাবে সব
সে যদি ভাই, সায় না ফেলে থেকে যায় নীরব।
তাকে পেলে ফিরবো আমি নদীর কোনো পাড়ে
কুঁড়ে ঘরে থাকবো আমি বেতের বনের ঝাড়ে
রোজ রাতে চাঁদ যখন ভীষণ তরল আলোর কোলে
বনস্পতির শাখার ওপর কোমল গল্প বলে
তেমনি আমি তরল আলোয় স্পর্শে নেবো তাকে
রহস্য কী জানবো সেথায় মানবজীবনটাকে
বল না মাঝি, মেঘ করেছে - খানিক বাদে নদী
ফেঁপে ওঠে তিন মোহনায় ডোবাই নৌকা যদি?
আমার এখন বুকের ভেতর মানুষ মানুষ শ্বাস
এই জগতের দুপুর রোদে জন্মেছে নিঃশ্বাস
এই জগতের মায়ায় পড়ে এক রমণীর প্রেমে
আমি-ই যদি আকাশ হতে স্বয়ং আসি নেমে?
মানুষ হয়ে জন্ম নেবো, জেলের জালে ফেঁসে
তখন কি ওই মেয়েটি আমায় নেবে ভালোবেসে?
এইটুকু কর,আমার জন্য - বল শুধু ও দ্বিমত কি না
বল, শুধু ওর প্রেম আছে কি, না কি সে খুব হৃদয়হীনা?
আমার আশা এমন সুর যে মিথ্যে ভরা নয়
মাঝি, সে কি সুরে সে তার আমার কথা কয়?
মেয়েটি যখন নৌকার ওপর এধার ওধার করে
আমার তখন ইচ্ছে করে তার তরে যাই মরে
মেয়েটি যখন হাত মেলে ওই বৃষ্টি মাখে গায়
আমার তখন অশরীরে শরীরও জন্মায়
চোখ দু'টো তার কোটরবন্দী যখন খানিক নড়ে
আমার তখন মন ভেঙে মন মানুষ রূপে গড়ে
বলছি মাঝি, সাবধানে থাক, বিপদ বুঝে নিস
তিন গাঙের ওই মোহনাতে মেয়েটি আমায় দিস