আমি সেদিন তোমাকে বলেছিলাম—
পৃথিবীর কোনোকিছুই চিরকাল
কোনো নির্দিষ্ট জায়গায় স্থির
দাঁড়িয়ে থাকে না!
মানুষ, মানুষের স্বপ্ন, অনুভূতি, এমনকি পবিত্রতম প্রেম—
কোনোকিছুই না!
যতই ভালোবাসার অনুভবে মাতোয়ারা হোক
পৃথিবীর কেউ-ই স্পর্শহীন চিরদিন
কারুর জন্যই অপেক্ষা করে না!
পার্বতীও অপেক্ষা করে নি
দেবদাসের জন্য!
দেবদাসও কি অপেক্ষা করেছিল
পার্বতীর জন্যে? তা হলে— দেবদাসের
জীবন 'চন্দ্রমুখী'র অভিমুখী না হয়ে
পার্বতীর বাসরের অন্ধকার চিতায়
মৃত্যুর মতন জ্বলতো! কিংবা
পার্বতীর বিয়ের রাতেই দেবদাস
মদের পরিবর্তে মুখে নিত হেমলক!
তুমি 'কবুল' বলার পর আমি নিজেকে ভাবি নি
ব্রিটিশরাজ অষ্টম এডওয়ার্ড!
যদিও আমার কোনো সাম্রাজ্য হারানোর
ভয় নেই, আমার শুধুই ছিল
তোমাকে একান্ত করে পাবার সংশয়!
আমার মাথায় কোনো মুকুট না থাকলেও
নির্ঘুম দুচোখজুড়ে জ্বলছিল একটাই স্বপ্ন—
কবে তোমাকে করে নিব জয়!
তোমার নিবিড় স্পর্শ পাবার পর
মিটে গেছে আমার 'গৌতম বুদ্ধ' হওয়ার সাধ—
পূর্ণিমার আগুনে পৃথিবী জ্বলেপুড়ে
ছারখার হয়ে গেলেও আমি ছাড়ব না ঘর;
আমাকে বাহুডোরে বেঁধে নিলে
আমি টেনে নিব তোমাকে ম্যাগনেটিক মায়ায়;
আমাকে প্রেম দিলে, আমি ফুল দিব!
তোমাকে ভালোবাসার পর আমি তীব্র শীতের রাতে
একটা ধূসর বিড়ালছানার যন্ত্রণার কথা ভেবে
রাতভর ঘুমাতে পারি নি!
তোমাকে ভালোবাসার পর আমি বুক পকেটে
গোলাপ নিয়ে বিস্কুট খাইয়ে দিয়েছি
পথের কুকুরকে!
তোমাকে ভালোবাসার পর
আমি ক্ষমা করে দিয়েছি তাদের—
যারা শুধু দেখতে চেয়েছিল
তাদের স্বর্গীয় সুখের সংসারের পাশে
দাউ দাউ আগুনে জ্বলছে তোমার আমার দাম্পত্য!
কিন্তু হায়! আমাদের প্রেমের আগুনের উত্তাপে
ওরা আজ কেন হিংসায় জ্বলেপুড়ে অঙ্গার হচ্ছে!
তোমাকে ভালোবাসার পর স্বার্থপর মনে হয়
আমার সমস্ত প্রাক্তনকে!
তোমাকে ভালোবাসার পর আমি চিনতে শুরু করেছি
মুখের আড়ালে লুকিয়ে থাকা মুখোশুগুলি!
আর কতবার বলব, তোমাকে ভালোবাসার পর
তুমি ‘দোয়েল' থেকে হয়ে গেছো কবির প্রাণের কাছে
এমনকি, দালানের থাইকাঁচে ঠোঁকর মারা
বিষ্টিদিনে মিষ্টি স্বরের বুলবুলি!
বুলবুলির মতন তোমার অতিসুন্দর চুলের ঝুঁটিতে
কখনো যদি রাণীর মুকুট না-ও ওঠে;
যদি পৃথিবীর ক্ষুদ্রতম সিংহাসনও
আমার কপালে কখনো না জোটে;
যদি নাও ফোটে আর চুম্বনের পুষ্প
আমাদের প্রেমসিক্ত ঠোঁটে—
তবুও অমর না হলেও অন্তত সহজে
মারবে না তোমার আমার এই প্রেম;
তবু জীবনভর চতুর্পাশে আপন কোলাহলে চলবে
তোমাকে আমার কাছ থেকে কেড়ে নেবার
অতিপ্রাচীন ডিভাইডেড গেম!
তোমাকে ছোঁবার পর আমার ছুঁতে ইচ্ছে করে না
বিগত জীবনের নোংরা কালিগুলি
তোমাকে পাঠ শুরু করার পর
বড় বিচ্ছিরি লাগে বাজারের চাকরির গাইডগুলি
তোমার নামে 'কবুল' বলার পর
আমি শরীর থেকে মুছে ফেলেছি সব ছলনাময়ী ছোঁয়া!
তোমার ঠোঁটে চুম্বনের পর অন্যরকম লাগে
কমলালেবুর কোঁয়া; তোমাকে প্রতিশ্রুতি দেবার পর
আর রঙহীন বাতাসে ছড়াতে ইচ্ছে করে না
সিগারেটদগ্ধ বিষাক্ত ধোঁয়া; আমার হৃদয়ের
গভীরে তোমার তীব্রতম প্রেমের বাজনা বেজে
ওঠার পরপরই আমি নিভিয়ে দিয়েছি
শেষতম সিগারেট; ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছি
সতর্কীকরণের বার্তাখচিত সোনালি প্যাকেট;
প্রিয়তমা, তোমার চিবুকের কসম আমি আর
সিগারেট ছোঁব না; তোমার বাবার যক্ষ্মা হওয়ার ট্রমা
আমি তোমার জীবনে দ্বিতীয়বার আনব না!
তোমাকে চুমু খাওয়ার পর আমার নিজস্ব আকাশ থেকে
ঝরছে ঝলমলে বৃষ্টি— নূপুরের বাজনার মতো;
তোমাকে পাবার পর পাখির পালকের মতো
খসে গেছে শত শত না-পাওয়া বেদনার ক্ষত!
কার না মন চায়, স্ত্রীর মতো ভালোবাসা পেতে
নিবিড় বন্ধনে বাঁধাহীন ভালোবাসতে
বৃষ্টির রাতে ভালোবাসার গভীর ধ্যানে মগ্ন হতে
আকাশের ক্রন্দনে পরস্পরকে একই বিছানায় টানতে
একটু আধটু খুনসুঁটি কিংবা হাসতে কবিরও মন চায়—
কবিরও ইচ্ছে করে তোমাকে 'বউ' বলে ডাকতে;
কবিরও ইচ্ছে করে সংসারে প্রেমের পদ্ম ফুটাতে
তীব্রতম দীনতায় ব্যর্থতায় তারও ইচ্ছে করে
তোমাকে সন্তানের 'জননী' বানাতে; শুধু
প্রেমিকাদের আঘাতে আঘাতে
ব্যর্থ প্রেমের পঙক্তিমালা সাজাতে সাজাতে
তাদের জীবন কেটে যাবে; হুট করে অকালে
মরে যাবে— এই আইডিয়ার পশ্চাৎদেশে লাথি মেরে
আমি শূন্য পকেটে দাঁড়িয়েছি তোমার সম্মুখে
তোমাকে পেতে হাত পেতেছি যার তার দ্বারে
অর্থ আর দীনতার দোদুল্যমানতায়
আমাকে কেউ পারে নি আটকাতে;
কথা দাও, তুমি পথ চলবে আমৃত্যু আমার সাথে;
এভাবেই আস্থা রাখবে
এই অক্ষরের মালা গাঁথায় দক্ষ হাতে!