আম্মা, আমি চাকরির প্রথম বেতন পেলে
আপনাকে একটা আয়না কিনে দিব–
ওই আয়নায় আপনার মুখের বদলে দেখা যাবে
আপনার পার করে আসা জীবনের প্রতিবিম্ব!
আপনার পাহাড় ডিঙানোর ইতিহাস
আজ আপনিও ভুলে গেছেন আম্মা!
আপনি হয়ত ভুলে গেছেন একটা আম
কুড়িয়ে আনার অপরাধে কে
অশ্রাব্য ভাষায় গালি দিয়েছিল আপনাকে–
আপনি চোখের পানি মুছতে মুছতে
আমাকে সে আম খেতে দিয়েছিলেন;
আমি খাই নি, আম্মা!
ছুঁড়ে মেরেছি উত্তরের আকাশে–
নিউটনের সূত্রকে বিভ্রান্তিতে রেখে
সেই আম আজও পৃথিবীর মাটিতে
ফেরত আসে নি!
হয়ত আপনার কল্পিত বেহেশতে চলে গেছে ;
আপনিই তো বলেছিলেন–
বেহেশতে কোনো ব্যক্তিমালিকানা নেই!
আমিও তো একই কথা বলেছি আম্মা!
বলেছি, পৃথিবীটাকে বেহেশত বানাতে হবে
তার জন্য সবার আগে উচ্ছেদ করতে হবে
বিদ্যমান ব্যক্তিমালিকানা।
আপনার কল্পিত বেহেশতকে
আমি পৃথিবীতে বাস্তব হিসাবে পেতে চেয়েছি–
শুধু এইটুকু, হ্যাঁ, শুধু এইটুকুর জন্য
ওরা আপনাকে কানে কানে বলে গেল–
'আপনার ছেলে নাস্তিক হয়ে গেছে!'
এটা শুনে আপনার চোখ দিয়ে কত জল
গড়িয়েছে আমি জানি না, কিন্তু আজও
আমি পৃথিবীর সব জমিতে
সব মানুষের সমান অধিকার চাই
পৃথিবীর সব বৃক্ষে সব পাখিদের
সমান অধিকার চাই
সমস্ত ফুলে সব প্রজাপতিদের সমান অধিকার...
আম্মা, আমি জানি–
আপনি চিরকালই কুমিরকে
'জলপরী' ভেবে ভুল করেন–
তাই আমি আপনার সাথে
যাই নি বহুদূরের নদীতে;
তাই আমি ভালোবেসেছি পাশের ঘরের
জানলায় চুপচাপ বসে থাকা দোয়েলকে;
ও আকাশ-উঁচু ফ্ল্যাটবাড়ি চায় না
চায় উড়বার মত একটা মুক্ত আকাশ
ও চায় না ২০ ভরি সোনার গয়না
ও চায় ময়ূরের পালক খচিত
শুধু একটা 'সোনালী কাবিন'!
ও চুপচাপ দোয়েল থেকে হতে চায়
একজন কবির প্রাণের ময়না–
'বউ কথা কও' এটা শোনার প্রতিক্ষায়
গত ৬ বছরে তার বুক থেকে খসে গেছ
অসংখ্য পালক;
ও চায় ফুলের সাথে প্রজাপতির মত হলেও
একটা সংসার !
ওরও তো আপনার মতো জননী হতে ইচ্ছে করে।
আম্মা, আপনি একটা লাল গোলাপ–
আপনি ক্ষমা করুন ইডিপাসের পাপ!