১.
মৃত্যুনদীর পাড়ে বসে জীবনবৃত্তান্তের
বদলে আমি কবিতা লিখছি বলে
কারা যেন কানাকানি করছে–
আমি নাকি জীবনকে ভালোবাসি না!
একটা ফুলকে ছোঁবার অধিকার ছিনিয়ে নিতে
আমি ঘুষি বসিয়েছি মহুয়াতলার ছায়াতলে
সমতল লাল ইটের পিঁড়িতে–
আমি তো চাই নি তোমাকে প্রকাশ্যে চুমু দিতে;
তবু তুমি বললে–
'সবার আগে নিজেকে ভালোবাসো
তারপর হাত ধরতে এসো।'
আমি তো জানি, স্বার্থপররাই সবার আগে
নিজেকে ভালোবাসে!
নিজের জীবনকে পুড়িয়ে যারা কবিতা লেখে
তারা কীভাবে জীবনবৃত্তান্তের মত এত
ফালতু রসহীন লেখা লেখে?
তুমি বরং নীল কাজল পরে ফের আসো
মহুয়াতলার ছায়াতলে, তোমাকে পরিয়ে দিব
পাতার আংটি! তোমার পরিবারের হাতে
কখনো পৌঁছাবে না কোনো কবির
জীবনবৃত্তান্ত!
২.
আমি পারমাণবিক যুদ্ধের প্রয়োজনীয়তা বিষয়ক
কোনো প্রবন্ধ না লিখে প্রেমের কবিতা লিখি
বলেই আমি পেয়েছি পাখির প্রেম
আমি পেয়েছি ফুলের ছোঁয়া, শুকনো পাতার শরীরে
আগুন না জ্বাললেও ভীষণ শীতে পাই
নীল ধোঁয়ার উষ্ণতা! রোদের উত্তাপে
যখন ভিজতে থাকি শহরের পথে পথে
তখন গ্রামীণ কিছু দখিনা হাওয়া খামে করে
পাঠিয়ে দেয় ডাগর আঁখি-বিশিষ্ট মেয়েটি!
তুমি হয়তো ভাবতেই পারছো না আজকাল
আমার জন্যেও কেউ পথ চেয়ে বসে থাকে—
বিষাক্ত নিকোটিনে রক্তিম ফুসফুসটাকে
পোড়াতে পোড়াতে আমি তো এতকাল
তোমার প্রতীক্ষাতেই ছিলাম!
যে বালিকাটি বাইশ বছর ধরে বুকের অন্ধকারে
আমার জন্যে জমিয়ে রেখেছে একরাশ রজনীগন্ধা
আর এক আকাশ সুনীল বর্ণিল মখমল কোমল আলো–
তাকে উপেক্ষা করার সাধ্য স্বয়ং ঈশ্বরেরও নেই!
৩.
তুমি হয়ত জানো না—
আজকাল আমি আমার জীবনকে খুব ভালোবাসি
সত্যি বলতে, আমি চিরকালই ভালোবেসেছি জীবনকে
জীবনকে ভালোবেসেছি বলেই
মৃত্যুর সঙ্গে উদ্দাম নৃত্যকালীন সময়ে শুয়ে শুয়ে
আমি উষ্ণ আবেগের প্রেমের কবিতা লিখেছি...
জীবনকে ভালোবেসেছি বলেই
আমি তোমার সঙ্গে বইমেলা যাওয়ার পরিবর্তে
সর্বদা যেতে চেয়েছি বৃন্দাবনে!
জীবনকে ভালোবেসেছি বলেই
সিজোফ্রেনিয়া–কে বাম হাতের মুঠোয় আটকে
ডান হাতে পুড়িয়েছি অজস্র সোনালি ফুল...
জীবনকে ভালোবাসি বলেই
নিজেকে ভালোবাসি বলেই
আমি তোমাকে ভালোবাসি না আর
জীবনকে ভালোবাসি বলেই
সমস্ত না-পাওয়া আর বিষাদগুলো
হৃদয়ের খাঁচায় করেছি বন্দি
জীবনকে ভালোবাসি বলেই
ভোরের দোয়েলের সঙ্গে গড়ে উঠেছে
আমার আত্মার সন্ধি... শুধু দরকার
ফুলে ভুলে মিশে একাকার একটা ছোট্ট সংসার;
জীবনকে ভালোবাসি বলেই
আমি জীবনের উপর কোনো নিয়ন্ত্রণ
প্রতিষ্ঠা করি নি আজ অবধি!
জীবনকে ভালোবাসি বলেই
মৃত্যুর প্রতি আমার আর কোনো ক্ষোভ নেই
নেই কোনো প্রতীক্ষাও!
জীবনকে ভালোবাসি বলেই
আমি ঘৃণা করি কপর্দকহীন বেঁচে থাকা!
জীবনকে ভালোবাসি বলেই
জীবনকে ভালোবেসেছি বলেই
আমি ফিরে যাব না আর কখনো তোমাদের কাছে...
নিজের সঙ্গে নিজে বাঁচব একাই
কবরের অন্ধকারে কঙ্কালগুলো যেভাবে বাঁচে!