শুধু তোমাদের নিকটে নয়—
আমি খুব ভালো করেই জানি, ঈশ্বরের নিকটেও
আমি এক অতি অপ্রিয় দূরতম অনাসৃষ্টি!
যে শুধু অন্যের অন্নধ্বংসের নিমিত্তে
পৃথিবীর পৃষ্ঠে আজও একটা ছোট্ট আশা
কিংবা দুরাশা— একটা স্বপ্ন কিংবা দুঃস্বপ্ন
মাথায় নিয়ে এ-দুয়ারে ও-দুয়ারে
ক্রমাগত কড়া নেড়ে যাচ্ছে!
তোমরা যারা মোমের মস্তকে নিভু নিভু
একটা ক্ষুদ্র আলোকখণ্ড ভেবে
আমাকে নিভিয়ে দিতে চাও
যারা মনে করো, আমার একমাত্র বাসস্থান
মেন্টাল হসপিটালের চরম অন্ধকার গারদ;
যারা এখনো ভাবো ফানুশ হিসাবে আমাকে
হেসে খেলে উড়িয়ে দিতে পারো যে কারো আকাশে
কিংবা এক নিমিষেই মিশিয়ে দিতে পারো
দৃশ্যহীন অনুভবহীন নিঃশব্দ বাতাসে...
যারা আমার প্রেমের কবিতাগুলোকে অস্বীকার করে
বলতে চাও, স্রেফ পাগলের প্রলাপ—
যারা আমার ঠোঁটে সিগারেট জ্বলতে দেখে
কোনো আশংকা নয়— মনে মনে সত্যিই চাও
অতিশীঘ্রই আমার শরীরে জন্মাক ক্যান্সারসেল!
চরম অর্থকষ্টে বাঁচার আকুতি নিয়ে
আমি ভাগ বসাই তোমাদের ভবিষ্যত স্বর্গবাসের
সঞ্চিত পুঁজি অর্থাৎ জয়েন্ট অ্যাকাউন্টে
তোমরা যারা চাও না, আমার মৃত্যু হোক প্রিয়তমার
অনুকম্পার কম্পনে কম্পনরত হাতের জলপানে!
যারা অবচেতনে কিংবা মনে মনে আশা করো—
অনেক খোঁজাখুঁজির পর আমাকে আবিষ্কার করবে
তোমাদের অতি শখের স্বর্গীয় ফ্ল্যাটের সিলিংফ্যানে!
প্রিয়তমার উপহার কবিতার ডায়েরিটার
শেষ পাতায় একটা সুইসাইডনোট দেখার
জন্য অতি উৎসাহে উদগ্রীব হয়ে আছো!
তোমরাই বলো, তোমাদের সন্দেহ করা কি ডিল্যুশন?
আমি যদি বলি, ইলন মাস্কের মুখের দিকে তাকালে
আমি স্বর্গের অধিপতি মহাপ্রভুর চেহারা দেখি
আমি যদি বলি, নীতা আম্বানির অন্তর্বাসে
তোমাদের অতিপ্রিয় ঈশ্বরের বসবাস—
তবে কি এটাকে হ্যালুসিনেশন হিসাবে সংজ্ঞায়িত করবে?
আমি যদি ফের প্রত্যেকের ওড়ার মতন
একটা আকাশ চাই স্বাধীন মুক্ত বাঁধাহীন, আমি যদি ফের
কোনো শীতে দাবি করি, ব্যক্তিমালিকানাধীন
সম্পত্তির উচ্ছেদ, আমি ফের যদি পৃথিবীতে সমাজতন্ত্রের
৭০০ বছরব্যাপী স্থায়িত্ব চাই, আমি যদি টাকার সন্ধানে জার্মানিগামী প্লেনে ওড়ে যাবার স্বপ্নে বিভোর কমরেডকে
'বামপন্থী' হিসাবে সন্দেহ করি, আমি যদি নেদারল্যান্ডসে
বসে বসে আমাকে লুটেরা প্রতারক হিসাবে সন্দেহকারী
পরম আত্মীয়া নারীকেই চিহ্নিত করি আমার হত্যাকারী
হিসাবে; তোমরা কি মেনে নিবে?
নাকি সবগুলিকেই সিজোফ্রেনিক সিম্পটম হিসাবে
চিহ্নিত করে আমার চিরবঞ্চিত লাঞ্চিত অপমানিত
আত্মাটাকেও পর্যন্ত পুরে দিবে মৃত হৃৎপিণ্ডের মতন
নিস্পন্দ নিস্তেজ জমাট রক্তের কালিতে অংকিত
চার প্রকোষ্ঠবিশিষ্ট অন্ধকার পাগলাগারদে?
না, আমি সহজে মারা যাচ্ছি না— আমি বদলে
ফেলেছি আমার ঈশ্বর সংক্রান্ত ধারণা
তোমরা আর চাপাতির আঘাতেও ছিন্ন করতে
পারবে না আমার উত্থিত মস্তককে!
অতি গোপনে স্বীকার করি, আমি খুব খুব
ভালোবেসে ফেলেছি তোমাকে; তুমিই বলো—
আমি কেন তোমাকে পাবার পরেও
মৃত্যুর মহাসমুদ্রে দিব ডুব?
আমার আম্মা এখনো পৃথিবীর অম্লজান
হৃদয়ে ধারণ করে প্রতিরাতে ঘুমাতে যান।
আমি কোনোদিনও চাই না, তার প্রিয়তম সন্তানের
মৃত্যুসংবাদে তার ঘুম ভাঙুক!
আমার ভাইয়া আমাকে ফের একটা
ফনিক্স সাইকেল কিনে দিবে বলেছেন—
সেই সাইকেলে চড়ে কখনো স্বপ্নে, কখনো দিবাস্বপ্নে
কিংবা কখনো বা সত্যিই সত্যিই ফিরে যাব
কৈশোরকালীন ভোরের স্কুলে, ফুলে ফুলে
আমি সাজাব স্বপ্নের ক্লাসরুম, টিফিনের
ক্ষুধায় আমি দিব খুব গভীর একটা ঘুম!
প্রিয়তমার ফোনে আমার ঘুম ভাঙবে
আম্মার ফোনে আমি ফের কৈশোরকালীন
সন্ধ্যার মতন ফিরে আসব বাড়ি, তোমার জন্য ফুল আনব
আম্মার জন্য সুতি শাড়ি! আব্বার জন্য ইনসুলিন আর
চা-তে ভিজিয়ে খাওয়ার মতন চিনি-ছাড়া টোস্ট
আব্বা অপারেশনের পর পত্রিকার অক্ষরগুলি
চোখে চশমা নিলেও অস্পষ্ট দেখেন, নইলে
প্রতিদিনই একটা পত্রিকা নিতাম!
খুব সম্ভব হলে, জীবনকে পিছাতে পিছাতে
সাইকেলের প্যাডেল চাপতে চাপতে সাদা শার্ট পরে
আমি আমার কৈশোরকালীন স্কুলেই ফিরে যেতাম!