আমার স্মৃতিতে প্রবল মমতায় মিশে আছে
আমাদের মনোরোম চৌচালা টিনের বাড়িটা—
ওটা আমাদের ছিল, কারুর একান্ত ব্যক্তিগত না
শুধুই আমাদের— সামষ্টিক স্বপ্নেঘেরা
এক অনাবিল আশ্রয়, মায়ের কোলে মাথা রেখে
শেষ বিকেলের জানলায় হলদে আলোয়
আমি বেহেশতি বাগিছার পাখি হতে
চাইতাম সেই দিনগুলোতে; সত্যিই আমি
মালিকানা দূরে থাক, কখনো আশ্রয়ও চাই নি
তোমাদের একান্ত ব্যক্তিগত অথচ
যন্ত্রচালিত সভ্যতার অনুদানে পাওয়া
সৌখিন এবং স্বর্গীয় 'রাজমহলে'—
কারণ, আমি জানতাম যারা বড়লোক
অর্থাৎ প্রকৃত অর্থে ছোটলোক— তাদের
মস্তিষ্কের নিউরনগুলো অর্থ-সম্পত্তি-প্রতিপত্তির
প্রভাবে অথবা প্রলোভনে একদিন
রক্তচোষা জোঁক হয়ে যায়; প্রচণ্ড আক্রোশে
একদিন তারা মাথা ফুঁড়ে সাপ হয়ে বেরিয়ে আসে
ছদ্মবেশে লুকিয়ে থাকে আমাদের সরলতার ঘাসে;
সুযোগ বুঝে দংশাতে থাকে
আমাকে তোমাকে— যাকে তাকে!

আমাদের স্মৃতির সেই টিনের বাড়িটা কে কিংবা কারা
উপড়ে ফেলল, আমি জানতে চাই
আমার আত্মার গভীরে যে প্রশান্তির সন্ধ্যাপ্রদীপ জ্বলত
যারা তা নিভিয়ে দিল, আমি তাদের অন্তরে
মঙ্গলদীপ জ্বেলে দেয়ার প্রার্থনা করি না আজও
তাদের আত্মায় আমি চিরকালব্যাপী জ্বালব
আমার নিজস্ব চিতার আগুন; আমি তাদের
অট্টালিকার অহংকার অক্ষরের অক্ষম আঘাতে
ভাঙতে চাই; আমি আমার হারিয়ে যাওয়া
স্মৃতির অস্পষ্টতায়— কুয়াশায় ভাসতে থাকা
কখনো বা প্রবল বৃষ্টিতে ভিজতে থাকা
ছেলেবেলাকার পেয়ারা গাছটা ফেরত চাই!

ইদানিং আমার মস্তিষ্কে জ্বালা ধরিয়ে দেয়
বিষাক্ত বাতাসে কিংবা তরঙ্গে ভেসে আসা
কিছু আওয়াজ কিংবা ছবি কিংবা কথা;
আমার মস্তিষ্কে ভয়ানক আক্রোশে দংশাচ্ছে
কিছু উষ্ণ রক্তবিশিষ্ট বিষধর সাপ— তাদের
প্যাঁচানো চলার ভঙ্গিতে আমি বোকা ব্যাঙের মত
লাফাতে লাফাতে ধরা পড়ে যাচ্ছি
তাদের উদ্ধত ফণার ফোঁস ফোঁস সঙ্গীতে
আমি নিরুপায় ভীতু ইঁদুরের মত
নিজস্ব বাসস্থান থেকে ক্রমশ উচ্ছেদ হয়ে যাচ্ছি!

আমি বলছি না কাউকে আমাকে বাঁচাতে
কিংবা করুণাঘন দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকাতে!
আমি বলছি, আমি আসছি
সব বঞ্চনা প্রতরণা আর টর্চারের মাশুল
চক্রবৃদ্ধি হারে ফেরত নিতে—
হয়তো ৬ বছর আগেকার মতন
৬ বছর পরের কোনো এক শীতে!