৪.
রাত্রিকালীন পৃথিবীতে নদীর জলে কেমন এক উজ্জ্বল চাঁদের প্রতিমা জ্বল জ্বল করে! আমার হৃদয়ের পাঁচতলা ভবন সেই নদীর ঢেউয়ে কেমন যেন ভেঙে পড়ে! হতাশার ঘন কৃষ্ণ আঁধারে দুচোখে আলোর পিপাসা কেন জেগেছিল সেদিন, আমি জানতে পারি নি আজ অবধি। তুমি যদি সত্যিই হও আলোয় ভরা নদী, তুমি যদি সত্যিই হও জ্যোৎস্নার জননী, তুমি যদি সত্যিই হও মেঘের আড়ালে চিরপ্রেমিকার মতো প্রতীক্ষারত চাঁদ— তবে কেন আমি তোমার জন্য বিসর্জন দিয়েছি আকাশ কিংবা পাহাড় ছোঁয়ার সাধ?  কেন আমি উড়ে উড়ে হাওয়ার তরঙ্গে ভেসে বেড়ানোর বদলে কেবল পাতালের অন্ধকারেই তলিয়ে গেলাম? তুমি কি কখনো জানতে চেয়েছিলে, কেন আমি হঠাৎ হয়ে গেলাম বদ্ধ উন্মাদ!

এসব না জানলেও খুব বেশি ক্ষতি নেই আর! ভালোবাসা ভিক্ষা চাইতে গিয়েই আমি আটাশ দিন একই জামা গায়ে ঘুরে বেড়িয়েছি পথে প্রান্তরে!  তবুও তো একটু প্রেম জাগল না তোমার অন্তরে। চাঁদনিরাতে একফোঁটা জ্যোৎস্নাও ঝরে পড়ল না তোমার আলোকিত মুখ থেকে। মাতৃগর্ভে ঘুমন্ত শিশুর মতো নিস্তব্ধ আঁধারে তুমি শুয়ে ছিলে বেঁকে! জানলার ওপাশে দুহাত মেলে একটা নির্বাক মূর্তি অবাক চোখে তোমাকে তো চেয়েছিল!  

কামনার জলজ ঢেউয়ে ভাসাতে না পারো বেদনরা অশ্রুতে ডোবাতে তো পারতে তুমি তারে— চিরতরে! এক আকাশ না হোক, তোমার মেঘাচ্ছান্ন শীতল হৃদয়াকাশ থেকে নামা এক পশলা বৃষ্টিরও কি যোগ্য সে ছিল না? কিনে মিছে মিছে তার জন্য আজ আর করো তুমি শোক? আলোক হসপিটালে তার রক্তে যেদিন ধরা  পড়ল উচ্চমাত্রার ট্রাইগ্লিসারাইড, সেদিন তো তুমি  দৃষ্টিসীমার ভিতরেই ছিলে? সেদিনই তো তুমি তারে পারতে থামাতে। হাতে হাত রেখে না হোক, চোখে চোখ রেখে না হোক, এমনকি, মুখোমুখি না হোক— ফোনকলে তো বলতে পারতে– "অনেক হয়েছে আর না, আজ থেকে তুমি আর কোনোদিনও সিগারেট ছোঁবে না!  আসছে শীতে তোমার ওষ্ঠ ছোঁবে আমার অধর! আসছে শীতে পঙক্তিতে পঙক্তিতে তুমি পাঠিও প্রেমের পদ্য! শীতের শেষে ভালোবেসে তুমি পাঠিও একটা বাসন্তী শাড়ি!  শীতের শেষে আসছে ফাল্গুনে তুমি বিয়ের প্রস্তাব পাঠিও আমার বাড়ি! আসছে ফাল্গুনে তোমার ঠোঁটের আগুনে জ্বলবে দুটি অতি আশ্চর্য মেঘফুল। আসছে ফাল্গুনে শরীরী আগুনে তোমাকে পোড়াব খুব! " তুমি এসবের কিছুই বলো নি। আমার ফোনকল তোমার ব্ল্যাকলিস্টে নিঃশব্দে চিৎকার করতে করতে চিরতরের জন্যই গেল থেমে! আমি তোমাকে নিয়ে কিছুটা কনফিউজড হলেও তোমার ইচ্ছেমেঘের সব পাহাড়ই আমার চেনা। আজও আমি জানি না, কী তোমার স্থায়ী ঠিকানা? শুধু জানি, আজ তোমার কন্টাক্টলিস্টে আমি শুধুই একটা নাম্বার অথবা নাম!

অতঃপর তুমি যতবারই ফিরেছো, ততবারই আমি জানিয়েছি তোমাকে প্রণাম! কিন্তু দুজনেই পেয়েছিলাম, তৃতীয় আরেকজনের দগ্ধ হৃদয়ের গন্ধ!  তবুও তো ভালোবাসতে চেয়েছিলাম পুনর্বার। তবুও তো প্রত্যাখানের অপমান বুকে চেপে তোমার দিকে বাড়িয়েছি হাত। আজও আমি পাঁজর খুলে কাউকে দেখাই নি তোমার দেওয়া অজস্র গভীর গোপন আঘাত! তুমি তো জানো, আমি ভালোবাসার জন্য হয়ে যাই কতটা অন্ধ!