মাছ ধরা---৬
সেলিনা জান্নাত
দীঘির পানি ফোয়ারা যেন
উপর দিকে উঠে,
ঝরা পাতা ধুলো নিয়ে
পাগল বাতাস ছুটে।
টানছে রাজন শক্ত করে
ভোলার দুটি হাত,
হয় বাঁচাবো ভোলাকে, নয়
মরব একই সাথ।
''ভোলারে তুই আমার দু হাত
শক্ত করে ধর,
টানছি আমি ভয় পাস নে
উঠার চেষ্টা কর।''
অবশেষে দীঘির পাড়ে
উঠে এলো ভোলা,
আতঙ্কেতে কেঁদে কেঁদে
চোখ দুটি লাল ফোলা।
ভাঙছে ডাল পরছে ঢিল
উড়ছে ঝরা পাতা,
ফিস ফিস ফিস করছে কেউ
বলছে যেন কথা।
হটাত কোরে পানির ভেতর
ঘোঁ ঘোঁ আওয়াজ হোল,
তারই সাথে পানির ঝাপটা
দুজন ভিজে গেল।
''ওরে বাবা একি জিনিস
লাল দুটি চোখ তার,
মাথায় আছে বিশাল দু শিং
বিশাল বড় ষাঁড় ।''
ঘোঁ ঘোঁ ঘোঁ ভ্যাঁ ভ্যাঁ ভ্যাঁ
ছাড়ছে আওয়াজ ভীষণ,
রক্ত চোখে তাকিয়ে আছে
মারবে যখন তখন।
পানির ভেতর ঝড় উঠিয়ে শিং উঁচিয়ে
তেড়ে এলো ষাঁড়,
আর একটা তার পেছনে
উঠল বুঝি পাড়।
''ওরে ভোলা, ওরে রাজন
পালা পালা পালা
ভয়ঙ্কর ওই ষাঁড়ের ডাকে
লাগবে কানে তালা।
ধরতে পেলে পানির নিচে
নিয়ে যাবে টেনে,
পানির নিচে মারবে খাবে
যা খুশি তার মনে।''
ছুটছে দুজন হটাত করে
ভোলা আছাড় খেলো,
ভীষণ ভয়ে দুই বন্ধুর
প্রাণই বুঝি গেল।
''ছুটরে ভোলা জোরছে চালা''
ধরে ভোলার হাত,
টানলো রাজন ছুটছে এবার
দুজন একই সাথ।
''মস্ত বড় লাল চোখা ষাঁড়
কেমন করে এলো,
ভৌতিক ষাঁড় মাটি ছেড়ে
জলে কেন গেল।
চৌধুরীরা জানে বুঝি
আর জানে তা মালি,
কালা জাদুর ভেল্কি বাজি
ভুতের চালা চালি।
অনেক বাঁচা বেঁচে গেছি
আঁধার নেমে এলে,
টেনে নিত লাল চোখা ষাঁড়
আমায় তোরে জলে।''
বাগান বাড়ির ছাড়িয়ে সীমা
এসে বিলের ধারে,
''আর যাবনা দীঘির পাড়ে
একলা অমন করে।
আজকে থেকে ইচ্ছে হলে
দুই বন্ধু মিলে,
মাছ ধরতে নামবো শুধু
নানার বিলের জলে।''
''দুই বন্ধু ভোলা রাজন
ভালোই আমায় হাঁসালি,''
রিন ঝিন ঝিন মিষ্টি হেসে
বলল কথা শ্যামলি।
বিলের জলে পা ডুবিয়ে
পাড়ে বসা শ্যামলি,
গাজী বাড়ির দুষ্ট মেয়ে
কথায় কল কাকলি।
''মাছ ধরলি কয়টা বড়,
দাওয়াত দিস তো আমাকে,
একলা কেন আমায় রেখে
ডাকবি শুধু ভোলাকে।''
--চলবে..........