স্যার, স্যার গো,
ম্যাডাম, ম্যাডাম গো,
কিছু সাহায্য দিবেন ?
কিছু ভিক্ষা দিবেন ?
দিন না স্যার, দিন না ম্যাডাম।
জানেন, আমার পেটে অনেক ক্ষুধা।
ঠিকমতো খেতে পারি না।
আমার জনম দুখিনী মা, বাসায় পরে আছে। বিনাচিকিৎসায় মারা যাচ্ছে। তার জন্য কিছু ঔষধ কিনবো। দিবেন কিছু ভিক্ষা ?
দিবেন কিছু সাহায্য ?
দিন না স্যার, দিন না ম্যাডাম।
স্যার, আমি কিন্তু ভিক্ষুক ছিলাম না। আমি টোকাইও ছিলাম না।
আমি আমার বাবা মায়ের খুব আদরের ছিলাম। রাজপুত্রের / রাজকন্যার মতোই আমাকে ভালোবাসতো তারা। বাবা কোনদিন আমার কোন অভাব রাখেনি।
একদিন শুক্রবার আমি আমার বাবাকে বললাম, বাবা আমি জন্মদিনের কেক খাবো। বাবা বললেন, আজ নয় অন্যদিন এনে দিব। আমি বাবার গলা ধরে কপালে চুমু দিলাম আর বললাম, আমি আজকেই কেক খাবো। তারপর বাবা হাসতে হাসতে বাজারে গেলেন আমার জন্য কেক আনতে। ফেরার পথে দুইটি রাজনৈতিক মিছিলের মাঝখানে পরে গেলেন। সাথে সাথে দুই দলের মধ্যে শুরু হলো তুমুল মারামারি । আর সেখানেই একটি পক্ষ ওরা আমার নিরীহ,ভদ্র, ফেরেস্তার মতো বাবাকে, কুকুরের মতো পিটিয়ে মেরে ফেললো। আমি শুনেছি, ঐ জানোয়ার রুপি মানুষ গুলো যখন আমার বাবাকে মারছিল, তখন আমার বাবা বারবার বলছিল, আমাকে মেরো না। বাসায় আমার মেয়ে কেকের জন্য অপেক্ষা করছে। তোমরা আমাকে মেরো না, মেরো না।
কিন্তু, কিন্তু ওরা কিছুই শোনেনি৷ তবে আমার বাবার শেষ নিশ্বাস থাকা পর্যন্ত আমার কেকের প্যাকেটে একটাও আঘাত লাগতে দেয়নি। আমার মতো করেই আগলে রেখেছিল কেকের প্যাকেটটি । কিন্তু আমার বাবা রাজনীতির করালগ্রাস থেকে নিজের জীবনটা আর বাঁচাতে পারলেন না। সেই শোকে, দুঃখে আমার মা স্ট্রোক করে আজ মৃত্যু পথযাত্রী। আমাদের যা কিছু ছিল তার চিকিৎসায় আজ সব শেষ।
বলেন স্যার, এখন কে আমাদের মুখে খাবার তুলে দেবে ?
বলেন ম্যাডাম, এখন কে আমার মায়ের চিকিৎসার খরচ দিবে ?
আমার মায়ের মুখে খাবার তুলে দিতে আর তার চিকিৎসা করার জন্যই আজ আমি ভিক্ষা করি, আজ আমি টোকাই।
আমাদের গালি দিবেন না, স্যার।
আমাদের মারবেন না, ম্যাডাম।
ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে
আজ আমি ভিক্ষুক....
আজ আমি টোকাই.....
(অঝর নয়নে কাঁন্না......)
বিঃদ্রঃ মলিন চেহারা, ছেঁড়া পোশাক আর কান্না জরিত কন্ঠে পুরো অভিনয়টা করতে হবে।