(মজিদ স্যার-আমার শৈশবের প্রাইভেট শিক্ষক এর উদ্দেশে)
এখানেই আপনি ছিলেন
এই সেই দেড় তলা আধা-পাকা বাড়ি
স্মৃতির পাহাড় নিয়ে আজও দণ্ডায়মান
সাড়া-শব্দহীন, জীর্ণ, নিঃসঙ্গ, মলিন;
চোখ ধাঁধানো টিনের চাল ছিল তখন ঘরের,
ছাই-রঙ তেল-চকচকে সিমেন্টের মেঝে
দেয়ালে ঝুলানো পরিপাটি ব্লাক-বোর্ড,
আপনার সে বনেদী ব্যক্তিত্বের সাথে
এর সবই কী ভীষণ মানিয়ে যেত!
ভারি কাঠের টেবিল ছিল ঠিক এইখানে
পেছনেই হাতা অলা গম্ভীর চেয়ার
তাতে দোর্দণ্ড-প্রতাপ এক সম্রাটের
আভিজাত্যে আপনি হতেন সমাসীন;
অধোমুখে শৈশব পেরনো ক’জন শিক্ষার্থী
বয়সের সবটুকু চপলতা ভীষণ লুকিয়ে
প্রগাঢ় নিস্তব্ধতায় পাঠে বেমানান মনোযোগী;
কখনো অস্ফুট মেধাবী গুঞ্জন-ধ্বনি
রাতের নৈঃশব্দ্য বহুগুণ বাড়িয়ে ফুলের গন্ধের মতন
তুমুল বেড়াত উড়ে।
বুকের ভিতর জোনাক জ্বলা সেসব
ছেলেদের নিয়ে
ভাবলেশহীন এক স্তব্ধ ঔদাসিন্যে
অদৃশ্য বাতিঘরের দিকে
আপনার সেই অক্লান্ত যাত্রার কথা
সাধারণ বিচারে বিস্মৃত হওয়াই সমীচীন।
তবে আজ আপনাকে এটুকু জানাতে ইচ্ছে করে-
অকিঞ্চিৎকর এই আমি বহুদূর থেকে
প্রায় সাড়ে তিন যুগ পরে
চেয়ে দেখুন এসেছি ফিরে –
না, গুরুদক্ষিণা দিতে নয়;
তুখোড় স্বার্থপরের মত
প্রাচীন সে চরণের সামান্য একটু ধুলো নিয়ে
জীবনের আরো কিছু অনিশ্চিত পথ
প্রবল সাফল্যে পাড়ি দেবো-
শুধু এই লোভে।
হৃদয়ে অস্থির বেহালার আর্তনাদ-
এই কড়ি বরগা ঘুলঘুলিতে
শুধু একবার খুব একাকী রইবো কান পেতে
যদি ফিরে পাই
ইংরেজি বিজ্ঞান গনিত অথবা ভূগোল শিক্ষণে উচ্চারিত
অতীতে বিলীন সে সব শব্দের অমিত সম্পদ!
আর ভগ্ন-প্রায় বাড়ির কোথাও নির্জনে দাঁড়িয়ে
এই আমি ফিরে যেতে চাই
ধ্রুপদী আলোর সে অতীতে-
নিমীলিত চোখে আপনাকে
আর একটিবার খুঁজবো
ঈশ্বর খোঁজার মত গাঢ় মগ্নতায়,
ক’ফোঁটা চোখের জল হয়ত ফেলবো-
হিসেবি চোখের যদি সায় থাকে
ভীষণ বিষয়বুদ্ধিহীন আপনার জন্য
যে আপনি নিজের সমস্ত স্বপ্ন
বিনিয়োগ করেছেন অন্যদের স্বপ্ন দেখার অশেষ
সাহস যোগাতে-