আমাকে চলে যেতে হবে ভাবতেই রক্তের তাপমাত্রা হিমাঙ্কের নিচে নেমে আসে
রাত জেগে জেগে চোখের নিচে কালো হয়ে যাওয়া স্কিনে
ভেসে উঠে কলুষিত জীবন ছবি
ভেসে উঠে কতক নিষ্পাপ হাসিমুখ, নব্যফোটা ঢলকমলির নেতানো পাপড়ি।
ভেসে উঠে,
ছ্যাঁচা বাঁশের ভাঙা বেড়ায় ছনে ছাওয়া একটি পাকের ঘর
যেখানে মায়ের সাদাকালো মুখ
উনুনের ধূম্রাঘাতে লাল হয়ে যাওয়া চোখ,চোখের মাঝে সবুজ একটি রঙিন স্বপ্ন।
ভেসে উঠে,
ঝংধরা টিনের ছাউনিতে কতক মাটির ঘর
একটা বাঁশঝার
বাবার স্মৃতি নিয়ে দাড়িয়ে থাকা একটি ছায়াময়ী রসালবৃক্ষ
গ্রামের শেষপ্রান্তে একটি অশ্বত্থ কতক শিমুল হিজল সেগুন গজারি
বর্ষায় স্যাঁতসেঁতে একটা নির্মল গ্রাম
বংশাই নামের আধমরা একটি নদী,
ওরা আমায় ঘুমাতে দেয় না চলে যাবার চির শীতল ঘুমে।
আমাকে চলে যেতে হবে ভাবতেই,
এক ঝাঁপটা বিশুদ্ধ বাতাস নাকের ঠিক পাশ দিয়ে বয়ে নিয়ে যায়
কতক কাঁঠালিচাঁপা বকুল বাতাবিফুলের ঘ্রাণ
আমি মৃত্যুর স্বাদ ভুলে যাই।
আমার চোখের পাতায় ভেসে উঠে কাঁচা হলুদমাখা একটি বিকেল
একটি কিশোরীর কুঁকড়ানো চুল।
ভেসে উঠে,
বরষারজলে বিলের মাঝে শাদা শাপলা শালুক ঢ্যাঁপ
পুঁটিমাছের ঝাঁক
বেগুনি রঙের কচুরিফুল
দানা বাঁধা লাল পিঁপড়েগুটির ভেসে চলা যাযাবর জীবন
ডুবুডুবু আমন ধানের ফাঁকে কলারভেলা
দ্বাদশী বালিকার ফ্রকের ভাঁজে কমলীশাকের কুন্ডুলি
আর শীতের কুহেলীকাময় মাকড়সার জালে ঢাকা একটি মেঠোপথ।
আমাকে চলে যেতে হবে ভাবতেই,
ঘাসের ঢগায় শেষ নীহার বিন্দু মুছে যেতে দেখি, বালিঝড়ে মুছে যাওয়া পদচিহ্নের মতো।
মুছে যেতে দেখি
একটি ঝরাপাতার তাবৎ ইতিহাস,
নোনতা পয়োধির মাঝে আমিত্ব বিলীন হওয়া একফোঁটা মেঘের মতো।
আমাকে চলে যেতে হবে ভাবতেই
সমগ্র বাংলার মানচিত্রে আমার মায়ের রূপে দেখি,
সাদাকালো চুলের ভাঁজ বেয়ে যেন বয়ে চলে, পদ্মা মেঘনা যমুনা সৃষ্টির অমিয়লয়ে,
ওরা আমায় বারবার ভাসিয়ে নিয়ে আসে, মৃত্যু উপত্যকা ধুয়ে।
--