সেই রাইতগুলা কবে ফিরা পামু,
মাঝরাইতে মা ওই ঘর থেইক্যা ডাকতো-"বাজান ওঠ্ ,দ্যাখ ঝড় বৃষ্টি হাইজ্জা আইতাছে"।
আমি হজাগ পাইয়া দেখতাম,টেবিলে বই খুইলাই আছে, আর দোয়াতের কেরাসিন ফুরাইয়্যা নিভু নিভু জ্বলতাছে।
তুফানের শো শো শব্দ শুইনা কাঁপতে থাকতাম।
পুবের বাড়ি থেইক্যা থালা আর মুড়ির টিন বাইরানোর শব্দ হুইন্যা বুকের ধপ ধপানি বাইড়্যা যাইতো,
মাইনষে কইতো, এইসব শব্দ হুইন্যা ঝড় পলাইয়্যা যায়।

মা আবারও ডাকতো - "বাজান ওঠ্ , গরু গুলা ভিজা যাইবো, গোয়ালঘরে ওঠা"।
অমনি হুঁশ ফিরা আইতো,
গায়ের উপরের খেতাডা ছুঁড়ে ফেইলা বাইরে আইয়্যা দেখতাম -
মায়ে শুকনা খড়িগুলা ওঠাচ্ছে,
উডানের শুকনা ধান ওঠাচ্ছে ছোডো বোন,
আর খুট্টিমারা বুইড়ানি ছাগলডা শইলের জোরে টাইন্যা নিচ্ছে ছোড ভাইডায়।
আমি গরুর দড়ি খুলতে যাইয়্যা গিট্টু ফালাই দিতাম,
আর ভাবতাম-
হাইরে আজ বুঝি ঝড়ে মইলাম।
তত্ক্ষণে টিনের চালে ধপাস ধপাস দুএক ফোঁডাবৃষ্টি পড়ছে।
মা আবার ডাকতো-
বা-জা-ন তাড়াতাড়ি আয়, গাছের ডাইল ভাইঙ্গা মাথায় পড়বো।
অমনি গরুগুলা ছাইড়া দিয়া আধভেজা হয়ে, মায়ের কাছে ছুইট্টা যাইতাম।
মায়ে আঁচল দিয়া আমার মুখখানি মুইছা দিতো।
তত্ক্ষণে আসপান ফাইট্টা বৃষ্টি শুরু য়ইতো, যেন কালো আন্ধার রাইতে  মইষের পাল ছুটছে।

আসপানের ঝিলকানি দেইখ্যা ডরে মায়েরে জড়াইয়া ধরতাম,
আর কইতাম এতো রাইত য়ইয়া গেল বাজান কই গ্যাছে?
মায়ের চোখ দিয়া তখন বর্ষার নাফাকুং স্রোত গইরা পরত।
আর কইতো তোর বাপে নদীর ওইপাড়ে গ্যাছে,
বাতাবিলেবু দিয়া তোর আর বল খেলতে হইবে না
তোর লিগ্গা বড় দেইখ্যা একটা  লালবল আনবো।
টিনের চালের ঝমঝম বৃষ্টির শব্দ শুইনা শুইনা রাইত কাইট্টা যাইতো।
দিনের পর দিন চাইয়্যা থাকতাম,
বাপে কবে একটা লাল বল লইয়া আইবো।
বাপে যে  আর ফিরা আইবো না,
তা হয়তো মায়ের চোখ্খের পানি কইতো।
তারপর কালবোশাখী ঝড়ের শেষে ফুরফুইরা দিন আইতো,
দিনের শেষে জোনাক জ্বলা আন্ধার রাইত আইতো যাইতো,কিন্তু একটা লালবল আইজো আইলো না।

-
[টাংগাইলের আঞ্চলিক ভাষায় লেখা।]