একাকী রাত

জানো? তুমি চলে যাওয়ার পর রাতগুলো কত নিষ্ঠুর ছিলো?
রাতের অন্ধকার তখন সুযোগ পেয়ে আমায় ভীষন একা করে ফেলেছিলো।
একাকিত্ম আমাকে গ্রাস করে নিতে চেয়েছিলো।
তুমি চলে যাওয়ার পর সবাই সুযোগ পেয়ে গিয়েছিলো।

আকাশের চাঁদও তখন আমায় দেখে মুখ ফিরিয়ে নিতো।
তারার দলেরা আমায় দেখলে মেঘের আড়ালে লুকিয়ে পরতো।
আমি তখন প্রায়ই উন্মাদ হয়ে ছাদে বসে থাকতাম, নিশীথিনী চাঁদের অপেক্ষায়,
কিন্তু দেখ, দূর্ভাগ্য আমায় কোথায় নিয়ে গিয়েছিলো। আমার দুঃসময় চাঁদও আসত না।
যাদের আমি আপন ভাবতাম তারাও না।
চুলার ভাত যেমন সময় মত না উঠালে, পুরে যায়। আমিও তেমন পুরছিলাম। পোরা গন্ধ পাওয়ার পরেও কেউ ওঠায় নি আমায়।

একে একে দু:খেরা সব আমার বাড়িতে পড়ি জমিয়েছিলো তখন।
দু:খ হলো কেটলি ভড়া চায়ের মত। গরম হওয়ার সাথে সাথেই কাপে করে পরিবেশন করতে হয়। বেশিক্ষণ গরম করলে বিষের মত হয়ে যায়।

আমি আমার কেটলির সমস্ত দু:খ চায়ের কাপে ঢেলে কেটলি পরিষ্কার করতে চেয়েছি বহুবার। কিন্তু পারিনি। কোনো চায়ের কাপ আমায় সেই সুযোগ দেয়নি।
যেই কাপগুলো আমার হাতে বানানো তারাও না।
অথচ এই কাপগুলোকে একসময়ে আমি-ই আগলে রাখতাম।  


জানো? সেই দূর্ভোগের রাতগুলোয় আমি আমার দু:খ গুলো পরিবেশন করার মত কোনো চায়ের কাপ পাইনি।
এমনকি কোনো সাদা কাগজও পাইনি যেখানে লিখে মনের দু:খ কমাব।
সব কাগজেরাই নিজ নিজ জীবন নিয়ে ব্যস্ত ছিলো।
তুমি যাওয়ার পর কত কষ্টই না হয়েছে আমার তাইনা?
পথ হারানো পিপড়ের মত কাগজের পিছে পিছে ঘুড়েছি কত।
কিন্তু লাভ হয়নি।
সব কাগজেরা তখন অন্যের লেখায় ভর্তি ছিল।
অথচ একসময়ে আমি নিজে এই কাগজদের লেখা বহন করতাম।

জানো? তুমি চলে যাওয়ার পর দিনের পর দিন, রাতের পর রাত, আমি স্তব্ধ হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত মাঝির মত বসে ছিলাম। কিন্তু কেউ এগিয়ে আসেনি জিজ্ঞেস করতে।

তুমি চলে যাওয়ার পর প্রতিটা রাত ছিলো আমার জন্য অন্ধকারের রাত। রাতের নাম শুনলে তখন ভীষন ভয় হত।
তখন শুধু মনে মনে বলতাম।
এমন রাত কারো না হোক।

কাব্যগ্রন্থ- নক্ষত্রের ক্ষত