গ্রাম ছেড়ে এই শহরে এলাম-
গাঁয়ে বড় অভাব-
জন মজুরও কেউ নেয় না,
তাই দুবেলা পেট পুরে খেতেও পাই না ।
শুনেছি,কোলকাতায় নাকি
না খেতে পেয়ে কেউ মরে না ।
ওখানে নাকি টাকা ছড়িয়ে আছে,
শুধু কুড়োতে জানা চাই ।
তাই তো বুক ভরা আশা নিয়ে চলে এলাম এই শহরে ।
কোন যাদুকর বানিয়েছে এই শহর ?
আকাশ ছোঁয়া দালানগুলো যেন
সূর্য্যিটাকে আটকে দেবে !
দারুণ শীতেও নাকি উদোম গায়ে থাকা যায় !
আরও শুনেছি-
কোলকাতা শহরে আনন্দ ফূর্তির অভাব নেই কোনও,
যার যেমন রুচি,তাই নাকি পাওয়া যায় এখানে ।
ঠিক রবি ঠাকুরের কবিতার মতো ।
তাই ভাবলাম এতদিনে অভাব মিটবে আমার,
অভাব আর কি-
পেটে দুটো দানা,আর পরনে একটু ত্যানা ।
বেশ কিছুদিন হলো এই শহরে এসেছি-
প্রথম দিনেই রাস্তায় ধাক্কাধাক্কিতে
ছিটকে পড়ার যোগাড় আমার,
বেওয়ারিশ কুকুরের মত পথে ঘুরতে ঘুরতে
একটা চায়ের দোকানে কাজ জুটে গেলো ।
এখানে চা ভাত যাই খাই
গালাগাল খাই তার চেয়ে ঢের বেশী ।
উৎসব বাড়ীর অনুষ্ঠানে দেখি,
ডাষ্টবিনে ছুঁড়ে ফেলা উচ্ছিষ্টের কারণে
মানুষে কুকুরে জোর লড়াই ।
ফুটপাতে ইট-বালিশে মাথা দিয়ে শোয়া
মানুষের পাশেই একদিন দেখলাম
ঘাড় গুঁজে পড়ে আছে এক ভিখারিনী যুবতী,
ধর্ষণের লজ্জা ঢাকতে না পেরে
নাকি আত্মঘাতী হয়েছে ।
অপর দিকে ব্যস্ত সৌখীন পথচারী
বাহারি পোষাক পরে কলকলিয়ে চলেছে ফুটপাত ধরে,
জীবন যেন কত স্বাভাবিক,
সবাই যেন কেমন নিশ্চিন্ত ।
অফিস টাইমে ট্রামে-বাসে বাদুড় ঝোলা মানুষের
হাল দেখে বুক দুর দুর করে-
কি সুন্দর প্র্যাকটিস-
পায়ের একটা আঙুলেই সারা দেহের ভর রেখে
অফিস চলেছে অবলীলায়,যেন ব্যালেন্সের খেলা !
শুনেছি -এক সাহেব নাকি এই শহর বানিয়েছে,
সাহেব নাকি চেয়েছিলো
কোলকাতাকে তিলোত্তমা করতে ।
তিল তিল করে গড়ে ওঠা
কোলকাতা সত্যিই আজ তিলোত্তমা ।।