এক সময় দেহে কাঁচা হলুদের আভা ছিলো,
ছিলো ডাগর ডাগর চোখ যুগল - মাঝে সাদা বক রঙ!
পাপড়ি কমল ঠোট- ছিলো কচি কচি হাতের ঢঙ !
রাজহংসী পা দুটোয় নুপুরের ছন্দ খেলাও ছিলো-
ছিলো চার সুন্দর তরুনীর সব !
আজ কালচে মাটির রঙ জমেছে দেহে-
ধুলো-ঘাম মাখামাখি - যেন ভুতুরে ছবি!
চৈতালি রোদে পোড়া লক্ষ্মী কবি ।
সোনার দেহে সাধের যৌবনও ছিলো-
কতো পুরুষের বুকে দেখেই উঠতো কাঁপুনি !
সকাল, দুপুর, বিকেলে আড্ডা ছিলো-
সঙ্গ বেধে ছিলো উচ্ছল পাড়ার বন্ধুর বাড়ি বেড়ানি ।
উল্লাস মাখা কিশোর বেলার অস্তগামী সে তেজদ্বীপ্ত রবি !
চৈতালি রোদে পোড়া লক্ষ্মী কবি ।
কিছুদিন আগে-
শহর থেকে বেড়াতে গিয়েছিলাম গ্রামে ।
সকালে হেটেছি মেঠো পথে- শহুরে দাম্ভিকতায় !
দুপুরে অলস ঘুমে ব্যস্ত ছিলাম !
বিকেল থেকে সন্ধ্যা অবধি আড্ডায় মেতেছি -
গল্প,কবিতা কতো কি !
এরই মাঝে হঠাৎ পরিচয়-
সংগ্রামী এক কবির সাথে ।
কবির নাম দীপালি ।
ভাবলাম- ওর গল্প শুনি - সব-ই!
চৈতালি রোদে পোড়া লক্ষ্মী কবি ।
আমি চৈত্রের রোদ সইতে পারি না ।
ছায়ায় বসে কবিতার খাতায় শব্দের ঝংকার তোলা সহজ !
কিন্তু শস্য ক্ষেতে স্বপ্নময়ী কবিতার চাষ ভীষণ কঠিন !
কেবল দ্রোহের কবিই পারে-
দীপালি দ্রোহের কবি ।
চৈতালি রোদে পোড়া লক্ষ্মী কবি ।
জমি বর্গা করে-
সকালে ক্ষেতে সেওতি টানে কোমড়ে কাপড় গুজে,
তারপর, আগাছা নিড়ানি- কষ্টের নিরন্তর পালা গানে,
বিকেল অবধি পরিচর্যা সোনালী স্বপ্নের ।
বৈশাখ এলে কেবল সে হাসে !
বাকি মাস - কষ্ট আর কষ্ট ! কষ্টের মাঝেও সে স্বপ্নে ভাসে !
তিন ভাগের এক ভাগ ফসল পেলে-
ক্ষুধার যন্ত্রণা নিবারণ হয়তো হবে !
হঠাৎ, হেসে বলে, দাদা-
ক্ষুধা থেকে মুক্তি দিতে পারে কোন কবি ?
চৈতালি রোদে পোড়া লক্ষ্মী কবি ।
আমি নিরুত্তর ।
জিজ্ঞেস করি-
তোমার স্বপ্ন কি, দিদি ?
হেসে বলে- "যতো বেশি মানুষে খাদ্য দিতে পারি যোগান !
ও-ই সাধনা, দাম হোক কম বা বেশি ভাবিনা !
ফসল ফলানো আমার কাজ-
চাই ক্ষুধা মুক্ত সমাজ !
ভালো লাগে নতুন ধানের মৌ মৌ ঘ্রাণ ।
ও-টি ভালোবাসা, নাই অভিমান । "
শুনে মনে মনে ভাবি- দীপালি ভুতুরে নয়, স্বপ্নের পরি, মানবতার সেরা কবি!
চৈতালি রোদে পোড়া লক্ষ্মী কবি ।