‘‘প্লিজ গেইটটা খুলুন, রোগীটাকে ভর্তি করে নিন,
ওনার শ্বাসকষ্টটা হঠাৎ বেড়ে গেছে,
বড়ই কষ্ট পাচ্ছেন তিনি।
করোনার রোগী নাও হতে পারেন তিনি’’
হাসপাতালগুলোর তালাবন্ধ গেইটের বাহিরে,
এমন আর্তনাদ কে না শুনেছে প্রতিদিন।
এক এক করে সব কটি হাসপাতালের গেইট থেকে,
ফিরিয়ে দেওয়া হলো বড়ই নিষ্ঠুরভাবে।
কারো কানেই পৌঁছল না স্বজনের করুন আর্তনাদ!
অবশেষে তিনি চলে গেলেন এ পৃথিবী ছেড়ে!
ভালোবাসার মানুষটির জন্য
কিছুই করতে পারেনি তার স্বজনেরা,
পারেনি মৃত্যুর আগে একটু স্বস্তির ব্যবস্থা করতে!
মানবতা আজ কোথায় হারিয়ে গেল,
আর্তের সেবায় নিয়োজিত হাসপাতালগুলো,
সত্যিই কি আর কোন দিন কোন অসুস্থ মানুষকে
চিকিৎসা করবে না ?
নাকি বন্ধ হয়ে যাবে সব হাসপাতাল?
করোনাকালে কি অসুখ হতে নেই,
শ্বাসকষ্ট, গলাব্যাথা, জ্বর হলেই কি করোনা রোগী ভাবতে হবে
আর করোনা রোগী হলেই কি তার বাঁচার অধিকার নেই?
একজন মানুষ বিনা চিকিৎসায় মারা যাবে,
আর তালাবন্ধ থাকবে হাসপাতালগুলো,
তাতে কি মানবতার অপমান হবে না?
কোথায় হারিয়ে গেল সে সব নীতিকথা,
‘আপনাদের সেবায় নিয়োজিত আমরা সবসময়’’
করোনা যখন থাকবে না তখন ঐ হাসপাতালগুলো,
শকুনের মতো কি চেয়ে থাকবে না একটা রোগীর জন্য?
দালালগুলো কি বসে থাকবে ঘরে?
যারা এতদিন একজন রোগীকে রাস্তায় টানাহেঁচড়া করতো,
তার পছন্দের হাসপাতালে নিতে কমিশনের আশায়।
এত সব প্রশ্নের জবাব কে নেবে-রাষ্ট্র নাকি জনগণ।
করোনাকালে কি দেখলাম আমরা, আমরা দেখলাম-
আপন হলো পর, অর্থ হলো মূল্যহীন,
ভালোবাসা গেল নির্বাসনে, বন্ধু হলো শত্রু।
রোগে শোকে মানুষ মরবে এটাই স্বাভাবিক,
তাই বলে একটু চিকিৎসা পাবে না মরার আগে?
মানি সব কিছু আইন দিয়ে হয় না,
বিবেকও সব সময় সঠিকভাবে কাজ করে না।
তাই বলে-এতটা বিবেক শুণ্য হতে হবে কেন এ মহাদূর্যোগে।
কি জবাব দেবে স্বজনহারা মানুষগুলোকে,
যারা প্রশ্ন করছে-কেন চিকিৎসার অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হলো
মৃত্যু পথযাত্রী ভালোবাসার মানুষটিকে?
চিকিৎসা পেলে হয়তো এ যাত্রায় বেঁচেও যেতেন
আমাদের প্রাণপ্রিয় ভালোবাসার মানুষটি!
তিনি আপনারও আপনজন কেও হতে পারতেন।
অদ্ভুত এ পৃথিবী, আরো অদ্ভুত এখানকার মানুষগুলো
হাসপাতালে বাধা, কবর দিতে বাধা, বাসায় রাখতে বাধা
বাধা সবখানে, বড়ই অচ্যুত!
‘করোনাভাইরাস’ তুমি শতাব্দীর সেরা দূর্ভোগ
তুমি আমাদের বদ্ধ চোখগুলো খুলে দিলে অনায়াসে,
আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিলে ‘মানুষ মানুষের জন্য’
কথাটি সর্বাংশে সত্য নয়, অন্তত তুমি যতদিন পৃথিবীতে আছো।